পতাকার বিবর্তনের খোঁজ দিচ্ছেন কালীশঙ্কর

পতাকার সন্ধানে কখনও দেখা করেছেন বিপ্লবী বারীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে। কখনও বা ঢুঁ মেরেছেন সরকারি মহাফেজখানায়, পতাকার জন্মবৃত্তান্তের খোঁজে। তিনি আসানসোলের গোপালপুরের বাসিন্দা কালীশঙ্কর ভট্টাচার্য।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

পড়ুয়াদের সঙ্গে ‘পতাকা দাদু।’ ছবি: শৈলেন সরকার।

পতাকার সন্ধানে কখনও দেখা করেছেন বিপ্লবী বারীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে। কখনও বা ঢুঁ মেরেছেন সরকারি মহাফেজখানায়, পতাকার জন্মবৃত্তান্তের খোঁজে। তিনি আসানসোলের গোপালপুরের বাসিন্দা কালীশঙ্কর ভট্টাচার্য। জাতীয় পতাকার বিবর্তনের ইতিহাসই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শন করছেন ৮৪ বছরের এই মানুষটি।

Advertisement

কালীশঙ্করবাবুর দাবি, পরাধীন ভারতে ১৬টি জাতীয় পতাকার অস্তিত্ব মিলেছে। ১৬টির মধ্যে ১৫টি পতাকার বিবরণ ঘেঁটে প্রদর্শনীর জন্য তৈরি করেছেন কালীশঙ্করবাবু। পতাকার এই সম্ভারের প্রদর্শনী হয়েছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী, এশিয়াটিক সোসাইটি, কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া তাঁর বাড়ির দরজায় টোকা দিলেও তিনি নাগাড়ে বুঝিয়ে চলেন পতাকার ইতিহাস।

কালীশঙ্করবাবু জানান, প্রথম বার প্রকাশ্যে পতাকা উত্তোলন হয় বঙ্গভঙ্গের সময়, ১৯০৫-র ৭ অগস্ট। কলকাতার পার্শিবাগান স্কোয়ারে (এখনকার সাধনা সরকার উদ্যান) অনুশীলন সমিতির উদ্যোগে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পতাকা উত্তোলন হয়। লাল-হলুদ ও সবুজ রঙের সেই পতাকায় ছিল আটটি পদ্ম, সূর্য, চাঁদ, তারা। আর মাঝে লেখা ‘বন্দেমাতরম’।

Advertisement

ওই পতাকা-গবেষকের দাবি, ১৯০৬-এ বারীন্দ্রনাথ ঘোষ ও ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের পরিকল্পিত লাল রঙের আয়তকার পতাকায় কোনাকুনি আঁকা ছিল ত্রিশুল ও কৃপান। স্বয়ং বারীন্দ্রনাথের কাছ থেকেই এই পতাকাটি সংগ্রহ
করেন কালীশঙ্করবাবু।

কলকাতায় কংগ্রেস কমিটির সভায় ভগিনী নিবেদিতা জাতীয় পতাকার আরও একটি রূপ তুলে ধরেন। সেখানে লাল বর্গাকার কাপড়ের মাঝে লম্বা ভাবে আঁকা ছিল বজ্র। দু’দিকে বাংলা হরফে লেখা বন্দেমাতরম।

১৯১৭ সালে হোম রুল আন্দোলনে অ্যানি বেসান্ত ও লোকমান্য তিলক আরও একটি পতাকা গ্রহণ করেন। এর পরে গাঁধীজির প্রস্তাব মতো পিঙ্গালি বিনায়ক পতাকার নকশা আঁকেন। এই পতাকার উপরে সাদা, মাঝে সবুজ, নীচে লাল রঙ ব্যবহার করা হয়। মাঝে ছিল কালো রঙের চরকা। ১৯৩১-এ ফের পতাকার রূপ-বদল হয়। — এই ভাবে ১৬ বার চেহারা পাল্টে ১৯৪৭-র ২২ জুলাই বর্তমান জাতীয় পতাকার প্রস্তাব উত্থাপিত ও গৃহীত হয়।

নেতাজি সুভাষ ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১০ সালে কালীশঙ্করবাবুর গবেষণার স্বীকৃতি মেলে। তবে এমন গবেষণার প্রেরণা কোথা থেকে মিলল? সকেলর কাছে ‘পতাকা দাদু’ বলে পরিচিত কালীশঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসে পতাকা উত্তোলন দেখতাম। তখনই মনে হয়, এই পতাকার জন্ম কী ভাবে হল। সেই খোঁজেই এই কাজ শুরু করি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement