ধস্ত আলু। নিজস্ব চিত্র।
সকাল পর্যন্ত কুয়াশা, মেঘলা আবহাওয়া। রোদের তাপও কম। কোনও কোনও দিন আবার শীতের আমেজও হালকা। আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনায় আলুর নাবিধসা রোগের আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর। বিশেষজ্ঞদের দাবি, গোড়াতেই সর্তক না হলে ক্ষতি এড়ানো মুশকিল।
আউশগ্রাম, ভাতার, গলসি, জামালপুর, খণ্ডঘোষ, মেমারি, রায়না, কালনা, পূর্বস্থলী মিলে প্রতি বছর প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। ফলন মেলে প্রায় ২১ লক্ষ মেট্রিক টন। তবে এ বার নোট বাতিলের পরিস্থিতিতে চাষের শুরুটা অনেকটাই সমস্যার ছিল। চাষিদের দাবি, নগদের অভাবে জমি থেকে ধান তুলতে, হিমঘর থেকে আলু বের করতেও দেরি হয়। এমনকী, নগদের টানে ভিন রাজ্যের উন্নত বীজ কিনেও জমিতে বসাতে পারেননি অনেক চাষি। ফলে বাধ্য হয় হিমঘরের সাধারণ আলু বসান তাঁরা। পাশাপাশি হিমঘরে রাখা আলুর দর তলানিতে পৌঁছে যাওয়াই চাষের খরচ জোগাতেও সমস্যায় পড়তে হয় বলে তাঁদের দাবি। কালনার আলু চাষি কমল সরকার বলেন, ‘‘কোনও দিন রাত থেকেই ঘন কুয়াশা, আবার দিনের বেলায় গরম। পরিবেশের যা মতিগতি তাতে আলুর ফলন মার না খায়।’’ মেমারির আলু চাষি সত্যনারায়ণ মজুমদারেরও দাবি, ‘‘নাবিধসা একবার ধরলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মেঘলা আবহাওয়া, কুয়াশা দেখে ভয় হচ্ছে।’’
কৃষি বিশেষজ্ঞদের দাবি, স্যাঁতসেতে আদ্র আবহাওয়া, ঝিরঝিরে বৃষ্টি বা কুয়াশায় আপেক্ষিক আদ্রতা ৯০ শতাংশের বেশি হলে নাবিধসা রোগ অত্যন্ত দ্রুত ছড়ায়। প্রথমে গাছের পাতায় হালকা সবুজ দাগ দেখা যায়, পরে তা বাদামি হয়ে পুরো পাতায় এবং কান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। দুর্গন্ধ ছড়ায় জমিতেও। তাই আগে থেকেই চাষিদের সতর্ক করতে লিফলেট বিলি করছে কালনা মহকুমা কৃষি দফতর। ব্লকে ব্লকে পৌঁছেও দেওয়া হয়েছে তা।
জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা সুব্রত ঘোষের পরামর্শ, এক বার নাবিধসা দেখা দিলে নাইট্রোজেন জাতীয় সারের প্রয়োগ কমাতে হবে। ভেলি ডুবিয়ে জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। কৃষি কর্তাদের আরও দাওয়াই, গাছের বয়স চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ হলে প্রতিষেধক হিসাবে কপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম প্রতি লিটার জলে, অথবা ম্যাঙ্কোজেব ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড ২.৫ গ্রাম লিটার প্রতি জলে স্প্রে করলে ভাল ফল মিলবে।এ ছাড়া মেটিরাম ৪ গ্রাম এবং প্রপিনেব ৩ গ্রাম লিটার প্রতি জলে মিশিয়েও স্প্রে করা যেতে পারে। তবে রোগ ছড়িয়ে পড়লে ডাইমিথোমফ ও ম্যানকোজেবের মিশ্রন ৩ গ্রাম লিটার প্রতি জলে বা সাইমক্সানিল ও ম্যানকোজেবের মিশ্রন ২.৫ গ্রাম লিটার প্রতি জলে স্প্রে করলে ভাল ফল মিলবে।
আর এক অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘এখনই আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয়। তবে নিয়ম মেনে প্রতিষেধক প্রয়োগ করতে হবে।’’ তাঁর দাবি, এ বার অনেক চাষিই হিমঘরের সাধারণ আলু বীজ হিসেবে পুঁতেছেন। কিন্তু তা সংশোধিত নয় বলেও রোগের সম্ভাবনা থাকে।