সামান্য জায়গা পেলেই বসে যায় আসর

প্রতিবাদ করতে গিয়ে এর আগে বারবার জুটেছে হুমকি। তাতে পিছু হঠেছেন তাঁরা। পুলিশ সক্রিয় হলে দিনের আলোয় খুন হতে হত না মানিক পালকে, এমনই অভিযোগ দুর্গাপুরের নতুনপল্লির শান্তিনগরের বাসিন্দাদের। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) অমিতাভ মাইতি অবশ্য পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কথা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বচসা থেকে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছি। এর সঙ্গে জুয়ার ঠেক চলার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৪৭
Share:

ভাঙচুর নতুনপল্লির সেই ঠেকে। ছবি: বিকাশ মশান।

প্রতিবাদ করতে গিয়ে এর আগে বারবার জুটেছে হুমকি। তাতে পিছু হঠেছেন তাঁরা। পুলিশ সক্রিয় হলে দিনের আলোয় খুন হতে হত না মানিক পালকে, এমনই অভিযোগ দুর্গাপুরের নতুনপল্লির শান্তিনগরের বাসিন্দাদের।

Advertisement

আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) অমিতাভ মাইতি অবশ্য পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কথা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বচসা থেকে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছি। এর সঙ্গে জুয়ার ঠেক চলার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না দেখা হচ্ছে।’’ তাঁর আরও দাবি, কোথাও কোনও ঠেক চলছে খবর পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফাঁসিপুকুর এলাকায় একটি মন্দিরের পাশে টিনের চালায় বছর দুয়েক ধরে এই ঠেকটি চলছে। এলাকার কিছু যুবক ছাড়াও বাইরে থেকে লোকজনের যাতায়াত আছে সেখানে। ঠেক থেকে পথচলতি মেয়েদের কটূক্তি করা হয়, রাত পর্যন্ত সেখানে চেঁচামেচি সেখানে লেগেই থাকে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, কয়েক বার প্রতিবাদ জানাতে গেলে খুনের হুমকি দিয়েছে ওই যুবকেরা। ভয়ে তাই তাঁরা কিছু বলতেন না।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার সকালে যখন মানিকবাবুকে মারধর করা হচ্ছে, তখন এলাকার কয়েক জন তাঁকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদেরও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে পিছু হঠেন তাঁরা। নিহতের ছেলে লবাকান্ত পাল জানান, বেশ কিছুক্ষণ পরে তাঁরা বাইরে বেরিয়ে দেখেন, বাবা অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছেন। দুষ্কৃতীরা বিনা বাধায় এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার অবশ্য এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ভাঙচুর চালানো হয় ওই ঠেকে। পাড়ার মহিলাদের বক্তব্য, প্রায় দু’বছর ধরে এখানে জুয়া, গাঁজার ঠেক চলছে। এই এলাকা ও আশপাশের নানা জায়গা থেকে সেখানে এসে নানা কুকর্ম করে কিছু যুবক। কিছু বলতে গেলেই জোটে হুমকি। এমনকী, ঠেক থেকে পাড়ার মহিলাদেরও নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করা হত। বহু রাত পর্যন্ত ঠেক চলত। এই দৌরাত্ম্যের ভয়ে অনেকে রাতে বাইরেই বেরোতেন না। তাঁদের ক্ষোভ, পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয় না। এ দিন ঠেক ভাঙলেও আতঙ্ক থাকছেই বলে এলাকাবাসীর দাবি। পাড়ার এক মহিলার কথা, ‘‘এখনও ভয় হয়, যদি ওরা আবার ফিরে এসে উৎপাত শুরু করে। প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।’’

তবে শুধু ফাঁসিপুকুর এলাকার এই ঠেক নয়, ঘটনার পরে আশপাশের নানা এলাকা থেকেই জুয়া, গাঁজার ঠেক চলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, যেখানে-সেখানে এই ঠেক গড়ে উঠেছে। সামান্য ফাঁকা জায়গা পেলেই ঠেক তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এই সব ঠেকে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকে। তার জেরে অশান্ত হয় এলাকা। মাঝে-মধ্যে ঝামেলা গড়ায় পাড়ার লোকজনের সঙ্গেও। নানা সময়ে এই সব ঠেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন প্রশাসনের নানা স্তরে জানানো হয়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি।

শহরের যে এলাকার এই ঘটনা সেই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা রাজু সিংহ অবশ্য দাবি করেন, এলাকায় কোনও ঠেক চলছে খবর পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি জানান, ওই এলাকায় এ ধরনের ঠেক চলছে তা আগে খবর পাওয়া মাত্র তাঁরা ভেঙে দিয়ে এসেছেন। কিছু দিন পরে আবার ঠেক শুরু হয়েছে, সে খবর তাঁরা পাননি।

পুলিশেরও দাবি, নানা সময়ে ওই সব এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অনেককে গ্রেফতারও করা হয়। দুর্গাপুর থানা এলাকাতেই মাসে গড়ে এক বার করে জুয়ার ঠেকে হানা দেওয়া হয় বলে পুলিশ জানায়। শান্তিনগরে পিটিয়ে খুনের ঘটনার পরে এলাকার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে আশ্বাস পুলিশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন