শহরেই এখনও বাড়ি বাড়ি বাঁশি বাজিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ ঠিক ভাবে রূপায়িত হয়নি, তার মধ্যেই বর্ধমানের বিভিন্ন গ্রামে পরীক্ষামূলক ভাবে এই প্রকল্প চালু করতে চলেছে জেলা পরিষদ। প্রশ্ন উঠছে, বেশ কিছু শহরেই যেখানে খরচ সামলাতে না পেরে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে সেখানে পঞ্চায়েতেগুলি কী খরচ টানতে পারবে?
জানা গিয়েছে, স্বচ্ছ ভারত মিশন বা নির্মল বাংলা মিশনের আওতায় সলিড অ্যান্ড লিকুইড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এই আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে। সেই জঞ্জাল থেকে কেঁচো সার তৈরি করে গ্রামের চাষিদের মধ্যে বিক্রি করারও ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পঞ্চায়েতের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের কী ভাবে আবর্জনা সংগ্রহ করে সার তৈরি করতে হবে তার জন্য জেলা পরিষদে প্রশিক্ষণ দিয়েছে একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা। এ ছাড়াও আইএসজিপি থেকেও বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় পরিবেশ দূষণ রোধে এই ধরণের প্রকল্প নিয়েছে জেলা পরিষদ। বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) হৃষিকেশ মুদি বলেন, “প্রকল্পটি চালু হয়ে গেলে গ্রামীণ এলাকায় পরিবেশ দূষণ রোধের পাশাপাশি কেঁচো সার তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে।”
“আবর্জনা থেকে প্রথমে কেঁচো সার তৈরি হবে।
পরে তা চাষিদের বিক্রি করারও ভাবনা রয়েছে।”
—দেবু টুডু, সভাধিপতি।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষামূলক ভাবে ৩২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এবং আইএসজিপি-র টাকায় ৩০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি বাড়ি বাঁশি বাজিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে। প্রত্যেক এলাকাতেই খাস জমি বা পঞ্চায়েতের নিজস্ব জায়গায় একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে আবর্জনা ফেলা হবে। সেখানেই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা কেঁচো সার তৈরি করবেন। বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিস বলেন, “আমরা প্রথমে ‘সলিড ও লিকুইড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ থেকে ৩২টি পঞ্চায়েতে এই প্রকল্প শুরু করতে চলেছি। এর জন্য প্রতিটি পঞ্চায়েত ২০ লক্ষ টাকা করে পাবে। যার মধ্যে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রথম পর্যায়ে আবর্জনা সংগ্রহ করার জন্য লোক নিয়োগ করতে পারবে।” যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ এই পরিষেবা পেতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে, সেগুলি হল, বর্ধমান ১ ব্লকের রায়ান ১, বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুল ১, বড়শুল ২ ও কুড়মুন ২, মেমারি ১ ব্লকের দলুইবাজার ২, আমাদপুর, মেমারি ২ ব্লকের সাতগাছিয়া ২, মন্তেশ্বরের দেনুর, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের জাহাননগর, অন্ডালের রামপ্রসাদপুর, শ্রীরামপুর, পাণ্ডবেশ্বরের বহুলা, জামুরিয়ার ডোবরানা, কাটোয়া ১ ব্লকের শ্রীখণ্ড ও সুদপুর, কাটোয়া ২ ব্লকের অগ্রদ্বীপ ও গাজিপুর সহ প্রমুখ। তবে আইএসজিপি-র টাকায় যে সব পঞ্চায়েতে এই প্রকল্প তৈরি হবে, তার তালিকা এখনও তৈরি হয়নি বলেও জানা গিয়েছে।
জেলা পরিষদের দাবি, পঞ্চায়েতগুলি কুড়ি লক্ষ টাকা দিয়ে প্রত্যেক বাড়িতে বালতি দেওয়ার জন্য লাল ও সবুজ রঙের বালতি কিনবে। লাল বালতি পচনশীল বস্তু ও সবুজ বালতিতে অপচনশীল বস্তু ফেলবেন গৃহস্থরা। ওই টাকাতেই কেনা ভ্যানের উপর লাল ও সবুজ রঙের বড় বড় পাত্র থাকবে। সকালবেলা বাঁশি বাজিয়ে ভ্যান নিয়ে কর্মীরা বাড়ির দরজায় দাঁড়াবেন। লাল বালতির আবর্জনা লাল পাত্রে এবং সবুজ বালতির আবর্জনা সবুজ বালতিতে ফেলতে হবে। এই আবর্জনা চলে যাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বড় গাড়িতে। তারপর তা যাবে কেঁচো সার তৈরি প্রকল্প এলাকায়। সেখানে আবর্জনা থেকে সংগৃহীত দ্রব্যগুলি বেছে নিয়ে নির্দিষ্ট গর্তে রেখে মাটি ও গোবরের সংমিশ্রণ করা হবে। তারপর কেঁচো ছেড়ে দিয়ে সার তৈরি করা হবে। জেলা পরিষদের সভাপতি দেবু টুডু জানান, এই প্রকল্পের জন্য প্রথমে কেঁচো কিনতে হবে। এক একটি কেঁচোর দাম পড়বে ৫০ পয়সা করে। এক বার সার তৈরি হয়ে গেলে কেঁচোরও আর অভাব হবে না। তিনি আরও জানান, গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বাজার এলাকা থেকেও আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে।
প্রশ্ন উঠছে, বর্ধমান জেলারই দাঁইহাট, গুসকরার মতো শহরে এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেখানে প্রাথমিক ভাবে শুরু হলেও নিয়মিত খরচের ধাক্কায় পঞ্চায়েতগুলির পক্ষে এই প্রকল্প চালানো কী সম্ভব? দেবু টুডু ও গোলাম জার্জিসের দাবি, “প্রাথমিক ভাবে আমরা পঞ্চায়েতগুলিকে সাহায্য করছি। তারপর স্বনির্ভর গোষ্ঠী কিংবা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি (এসকেইউএস)কে দায়িত্ব তুলে দিতে বলা হয়েছে পঞ্চায়েতগুলিকে। ওই সংস্থাগুলিই কেঁচো সার বিক্রি করে কিংবা প্রয়োজনে প্রতি মাসে বাড়ি-দোকান থেকে ৫-১০ টাকা আদায় করে প্রকল্প চালাবে।” তাঁরা আরও জানান, এই প্রকল্প ঠিক মতো চালু হয়ে গেলে ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে যুক্ত করে দিলে অর্থনৈতিক সমস্যা অনেক কমে যাবে।