বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পরিদর্শনে স্বাস্থ্যসচিব

সময় সাত দিন, নির্দেশ ব্যবস্থার

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, “স্বাস্থ্য সচিব যে সব পরামর্শ দিয়েছেন, সেই মত কাজ করতে শুরু করে দিয়েছি।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১১:৫৭
Share:

বিএমসিএইচ-এ পরিদর্শন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

‘লেবার রুমে’র জানলা খোলা। অপরিচ্ছন্ন টেবিলগুলি। লাগাম নেই রোগীর বাড়ির লোকজনের যাতায়াতেও।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে চুপিসাড়ে ঘুরে এমনই সব অনিয়ম নজরে পড়ে দফতরের এক কর্মীর। তার পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে ‘রিপোর্ট’ করেন স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মাকে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এর পরে সন্ধ্যাতেই প্রসূতি বিভাগকে কড়া বার্তা দিয়ে তিনি নির্দেশ দেন, এক সপ্তাহের মধ্যে অনিয়মগুলি মেটাকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।

কিন্তু এমন পরিদর্শন কেন? স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের মতে, চলতি বছরের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এই হাসপাতালে গত তিন মাসে ২৬ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন। যা প্রসূতি মৃত্যুর হারের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এই মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়ে স্বাস্থ্য কর্তাদের নজরে আসে চিকিৎসকদের ‘নজরদারি’র অভাব। সপ্তাহে কার্যত দেড় দিনও প্রসূতি বিভাগে পা পড়ে না, এমন চিকিৎসকেরও খোঁজ মিলেছে বলে জানান স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তার উপরে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্মীর চোখে পড়ে, ‘লেবার রুমে’ প্রসূতিদের ‘প্রাইভেসি’ নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও প্রায় নেই। জুতো পরেই রোগীর পরিজনরা অবাধে লেবার রুমে ঢুকে পড়ছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রও চলছে, আবার জানলা-দরজাও খোলা, এমনও অনিয়ম নজক পড়ে। এ ছাড়াও ‘ওয়ার্মার’-সহ কিছু যন্ত্র খারাপ হয়ে পড়ে থাকলেও তা দেখার কেউ নেই।

Advertisement

কয়েক দিন আগে বিএমসিএইচ-এর সুপার স্পেশ্যালিটি শাখা অনাময়ে এসেছিলেন অনিলবাবু। সেই সময়ে তিনি চিকিৎসকদের হাজিরায় কারচুপি ধরে ফেলে বৈঠক ডেকে প্রবীণ চিকিৎসককে রীতিমতো ভর্ৎসনাও করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বৈঠকের আগে তাঁর ‘টিম’ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে কী কী বেনিয়ম রয়েছে, সে বিষয়ে রিপোর্ট করে। ওই সব রিপোর্ট নিয়েই জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) অনুরাগ শ্রীবাস্তব, কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার বসাক, হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ এবং বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, প্রবীণ চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টা তিনেক বৈঠক করেন অনিলবাবু। তারপরে হাসপাতালের চক্ষু ও ইএনটি বিভাগ, ব্লাড ব্যাঙ্ক পরিদর্শন করেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রসূতি বিভাগ ছাড়াও হাসপাতালের আরও কিছু অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান সচিব। ব্লাড ব্যাঙ্কে মজুত রক্তের অর্ধেকও বিভাজন হয়নি কেন জানতে চাওয়া হলে সুদত্তর না মেলায় অনিলবাবু ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বলে জানা যায়। চোখের অস্ত্রোপচার তুলনায় কম হচ্ছে দেখে সিএমওইচ-কে চক্ষুপরীক্ষা শিবির করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার বিষয়ে পদক্ষেপ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তা ছাড়া সম্প্রতি নানা বিষয়ে ছাত্র-অসন্তোষের কথা বলে অনিলবাবু পড়ুয়াদের দাবি কেন মেটানো সম্ভব হয়নি, সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বলে জানা যায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তাঁর মতে, কলেজ কর্তৃপক্ষের পরিকাঠামোগত নানা সমস্যা মেটাতে আরও একটু উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল। সমস্যা সমাধানে তিনি পূর্ত দফতর-সহ সরকারের নানা দফতরগুলির সঙ্গে সমণ্বয় রেখে কলেজ কর্তৃপক্ষকে কাজ করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা যায়।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, “স্বাস্থ্য সচিব যে সব পরামর্শ দিয়েছেন, সেই মত কাজ করতে শুরু করে দিয়েছি।”

এ দিন কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতালেও পরিদর্শন চলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন