কেন্দ্রের নির্দেশই সার

ভূকম্প রোধক নকশা ছাড়াই নির্মাণ বহুতল

নির্দেশ এসেছিল মাস ছয়েক আগে। পঞ্চায়েত এলাকায় ভূকম্প রোধক নকশা ছাড়া বহুতল নির্মাণ করা যাবে না বলে সেই নির্দেশে জানিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর মারফত সেই নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে জেলা পরিষদেও। কিন্তু, তা কার্যকর না করে নির্দিষ্ট অনুমোদন ছাড়াই আগের মতো বহুতল গড়ে উঠছে পঞ্চায়েত এলাকায়। সম্প্রতি ভূমিকম্পের পরে গোটা বিষয়টি নিয়ে নড়াচড়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৩:০৫
Share:

কাঁকসার বামুনাড়ায় বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি।

নির্দেশ এসেছিল মাস ছয়েক আগে। পঞ্চায়েত এলাকায় ভূকম্প রোধক নকশা ছাড়া বহুতল নির্মাণ করা যাবে না বলে সেই নির্দেশে জানিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর মারফত সেই নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে জেলা পরিষদেও। কিন্তু, তা কার্যকর না করে নির্দিষ্ট অনুমোদন ছাড়াই আগের মতো বহুতল গড়ে উঠছে পঞ্চায়েত এলাকায়। সম্প্রতি ভূমিকম্পের পরে গোটা বিষয়টি নিয়ে নড়াচড়া শুরু হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের মতে, আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ ‘সিসমিক জোন ৩’ এলাকার মধ্যে পড়ে। মাটির নীচে কয়লাখনি। মাঝে-মাঝেই তাই ধস নামে। ভূমিকম্প হলে এই এলাকায় মাঝারি মানের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই এখানে বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা জরুরি। শুধু এই এলাকা নয়, এ রাজ্যের অর্ধেকের বেশি এলাকা ‘সিসমিক জোন ৩’-এর মধ্যে পড়ে। বাকিটা রয়েছে আবার ‘সিসমিক জোন ৪’-এর আওতায়। সেই সব এলাকায় ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়বে।

Advertisement

কেন্দ্রের পঞ্চায়েত রাজ দফতর গত বছর ১৩ জুন রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরকে চিঠি দিয়ে জানায়, গ্রাম এলাকায় বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূকম্প রোধক নকশা ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়া যাবে না। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের মতোই লাগোয়া গ্রামাঞ্চলেও বহুতল নির্মাণ শুরু হয়েছে। এর অন্যতম কারণ, পুর এলাকায় নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক অন্য খরচ অনেক বেশি। তাছাড়া সহজে জমি মেলে না। পুরসভার ছাড়পত্র পেতেও দেরি হয়। কিন্তু পঞ্চায়েত এলাকায় নিয়মের কড়াকড়ি তুলনায় কম। স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে জেলা পরিষদ থেকে সহজেই নির্মাণের ছাড়পত্র পাওয়া যায়। কাজেই ভূমিকম্প হলে শুধু শহর নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রামিণ এলাকার এ সব বহুতলও। সে কারণেই ভূকম্প রোধক নকশা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে কেন্দ্রের পঞ্চায়েত রাজ দফতরের নির্দেশিকায়।

রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বহুতল নির্মাণের নকশা ভূকম্প রোধক কি না, তা পরীক্ষা করে দেখে নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের পাঁচটি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। যে কোনও একটি থেকে নির্মাণের নকশা অনুমোদন করিয়ে শংসাপত্র নিতে হবে। গত বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা পরিষদগুলিকে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হল দুর্গাপুরের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ (এনআইটি)। নির্দেশ জারির পরে কেটে গিয়েছে প্রায় সাত মাস। এখনও পর্যন্ত অনুমোদনের শংসাপত্র চেয়ে একটিও নকশা জমা পড়েনি সেখানে। অথচ, বর্ধমান জেলার সব শহর লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকায় একের পর এক বহুতল নির্মাণের কাজ চলছে।

Advertisement

এনআইটি-র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক রাধিকেশপ্রসাদ নন্দ জানান, এখনও পর্যন্ত কোনও নির্মাতা নকশা অনুমোদনের শংসাপত্র চেয়ে এনআইটি-র কাছে আবেদন করেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নির্মাতা জানান, পঞ্চায়েত এলাকায় সহজেই বহুতল নির্মাণের অনুমোদন মেলে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে অনুমোদন দিয়ে থাকে জেলা পরিষদ। কিন্তু আবার তা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অনুমোদনের ভরসায় বসে থাকলে সময় ও অর্থ— দুইয়েরই অপচয় হবে বলে তাঁদের ধারণা।

বছর দুয়েক আগে এনআইটি-তে ভূমিকম্পের উপরে পাঁচ দিনের কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। রাধিকেশবাবু জানান, ঝড়-বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস আগে থেকে মেলে। কিন্তু, ভূমিকম্পের কোনও আঁচ আগাম পাওয়া মুশকিল। সে জন্য ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রাধিকেশবাবু বলেন, ‘‘বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূকম্প রোধক নকশা আবশ্যিক করা তার মধ্যে একটি। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে খুব কড়াকড়ি না করা হলে বহুতল নির্মাতারা আগ্রহ দেখাবেন বলে মনে হয় না।’’

বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু অবশ্য দাবি করেন, ‘‘এখনও আগের পদ্ধতিতেই বহুতল নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। তবে নির্মাতারা এখন এমনিতেই বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক নকশা অনুসরণ করে থাকেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন