কয়লা চুরিতে বাড়বে ধসের সম্ভাবনা, আশঙ্কা শিশুবাগানে

অবৈধ খাদান খোঁড়ায় বাধা বাসিন্দাদের

বনের মাঝে ফাঁকা জমিতে কুয়ো খাদান তৈরির তোড়জোড় করছিল কয়েকজন। ভোরে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে তা চোখে পড়ে যায় লাগোয়া এলাকার কিছু মহিলার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫১
Share:

দুষ্কৃতীদের তৈরি করা কুয়ো খাদান ভরাটের উদ্যোগ শিশুবাগানের সুকান্তপল্লি এলাকার এক দল বাসিন্দার। শুক্রবার সকালে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

বনের মাঝে ফাঁকা জমিতে কুয়ো খাদান তৈরির তোড়জোড় করছিল কয়েকজন। ভোরে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে তা চোখে পড়ে যায় লাগোয়া এলাকার কিছু মহিলার। ওই মহিলাদের কাছে খবর পেয়ে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা বেআইনি খাদান তৈরি রুখে দিলেন রানিগঞ্জের শিশুবাগান মোড় এলাকায়। খনিমুখগুলি ভরাট করতেও উদ্যোগী হন তাঁরা। পুলিশ এসে সেগুলি ভরাট করে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রানিগঞ্জের শিশুবাগান মোড় লাগোয়া সুকান্তপল্লি এলাকায় প্রায় আড়াইশো পরিবারের বাস। এলাকাটি ধসপ্রবণ। পুনর্বাসনের দাবিতে অনেক দিন ধরেই সরব বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে এলাকার আশপাশে বেআইনি ভাবে কয়লা কাটার জন্য খাদান তৈরি হলে ধসের সমস্যা বাড়বে। ২০০১ সালের আগে এই এলাকায় অবৈধ খনির রমরমা শুরু হয়েছিল। সেই সময়ে পুলিশ-প্রশাসন খনিমুখগুলি ভরাট করে নিবিড় বনসৃজনের ব্যবস্থা করে।

বাসিন্দাদের দাবি, দিন তিনেক আগে এক দল দুষ্কৃতী অদূরে সেই বনের মাঝে ফাঁকা জমিতে চারটি কুয়ো খাদান তৈরি করে কয়লা কাটায় উদ্যোগ হয়। তা জানার পরেই আতঙ্ক তৈরি হয় এলাকায়। শুক্রবার এলাকার কিছু মহিলা সকালে সেখানে প্রাতর্ভ্রমণে গিয়ে কুয়ো খাদানগুলি দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীদের জানান। জনাকয়েক বাসিন্দা দুষ্কৃতীদের কাজ বন্ধ করতে বলেন। অভিযোগ, তখন ওই দুষ্কৃতীরা তাঁদের এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়।

Advertisement

এর পরেই এলাকার বেশ কিছু মহিলা-পুরুষ একজোট হয়ে সেখানে যান। তাঁদের দেখে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। ওই বাসিন্দারা জানান, তাঁরা গিয়ে দেখেন, গর্ত থেকে মাটি, পাথর উপরে তুলে আনার জন্য কুয়োর দু’দিকে বাঁশের খুঁটি বেঁধে মাচা তৈরি করা রয়েছে। কিছু মাটি, পাথর কেটে উপরে জমাও করা হয়েছে। তাঁরা ওই খুঁটি, মাচা সব খুলে দেন। মাটি-পাথর ফেলে খনিমুখগুলি ভরাট করাও শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দুষ্কৃতীদের ফেলা যাওয়া নানা সামগ্রী উদ্ধার করে। মাটিকটার যন্ত্র নিয়ে এসে চারটি খনিমুখ ভরাটও করে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দা সান্ত্বনা দত্ত, লক্ষ্মণ তিওয়ারিদের দাবি, দু’দশক আগেই এই এলাকা ধসপ্রবণ বলে জেলা প্রশাসন চিহ্নিত করেছে। ‘ডিরেক্টর জেনারেল অব মানইস সেফটি’ (ডিজিএমএস) এই এলাকা-সহ রানিগঞ্জের বিস্তীর্ণ অংশে নির্মাণকাজ নিষিদ্ধ করেছে। কারণ, ভূগর্ভে কয়লা কেটে নেওয়ার পরে ফাঁকা হয়ে যাওয়া অংশে জমা জলের উপরে দাঁড়িয়ে আছে জমির উপরিভাগ। অবৈধ খননে সেই জলস্তর নেমে গেলে ধসের আশঙ্কা বাড়বে। সেক্ষেত্রে তাঁদের এলাকা ছেড়ে যেতে হবে। নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থেই এ দিন তাঁরা একজোট হয়েছেন বলে জানান ওই বাসিন্দারা।

রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক রুনু দত্তের অভিযোগ, ‘‘শাসকদলের মদতে বেআইনি কয়লা খনন চলছে। বাসিন্দারা সাহসের পরিচয় দিয়েছেন।’’ যদিও কয়লা কাটায় কোনও মদতের অভিযোগ উড়িয়ে রানিগঞ্জের তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ দিব্যেন্দু ভগতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুলিশের পাশাপাশি বাসিন্দাদেরও এ ভাবে সজাগ থাকা প্রয়োজন। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন