মিনির নতুন রুট তৈরি হলেই মিটতে পারে সমস্যা

রাতের শহরে বাস না পেয়ে কী ভাবে নিত্যদিন ভুগতে হচ্ছে তাঁদের, জানালেন শিবরাম সিংহ, মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, লক্ষ্মী মিত্র, রামপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫১
Share:

আলোচনাচক্রে বাসিন্দারা। দুর্গাপুরের বিধাননগরে। ছবি: বিকাশ মশান

সন্ধ্যার পরে শহরের রাস্তায় বাসের দেখা মেলে না, দুর্গাপুরের নানা এলাকার বাসিন্দাদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কী ভাবে এই সমস্যা থেকে রেহাই মিলতে পারে, শহরের বিধাননগরে এক সমবায় আবাসনে আনন্দবাজার পত্রিকা আয়োজিত আলোচনাচক্রে সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল বাসিন্দাদের কাছে। মিনিবাসের রুটের পুনর্মূল্যায়ন ও সম্প্রসারণ, অটোর উপরে নিয়ন্ত্রণ এবং রাতের দিকে অন্তত ঘণ্টায় একটি করে সার্কুলার রুটে সরকারি বাস চালানো— এই তিন দাওয়াই উঠে এল ‘শহর কী বলছে’ শীর্ষক সেই আলোচনায়।

Advertisement

রাতের শহরে বাস না পেয়ে কী ভাবে নিত্যদিন ভুগতে হচ্ছে তাঁদের, জানালেন শিবরাম সিংহ, মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, লক্ষ্মী মিত্র, রামপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। সন্ধ্যা ৬টা বাজলেই সিটি সেন্টার থেকে বিধাননগরে আসার মিনিবাস প্রায় উধাও হয়ে যায়। ৭টার পরে রুটের অটো মেলে না। পলাশডিহার চোখের হাসপাতাল, গাঁধী মোড়ের বেসরকারি হাসপাতালে যাতায়াত তখন মুশকিল হয়ে ওঠে। ইচ্ছে করলেও সিটি সেন্টারের শপিংমলে সন্ধ্যায় বাজার করা বা মাল্টিপ্লেক্সে রাতের শোয়ে সিনেমা দেখতে যেতে পারেন না অনেকে। শিবরামবাবু বলেন, ‘‘বহু আগে তৎকালীন দুর্গাপুর রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার (ডিএসটিসি) বাস রাত ১০টা নাগাদ স্টেশন থেকে ছেড়ে সারা শহর ঘুরত। তেমন যদি ফের হয়, তাহলে হয়তো সমস্যা কিছুটা মেটে।’’

ওই আবাসিক কমিটির সম্পাদক দীপঙ্কর দে-র মতে, ‘‘রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একটি করে সার্কুলার (চক্র) রুট ধরে সরকারি বাস চলুক। বহু মানুষ উপকৃত হবেন।’’ সন্ধ্যার পরে পর্যাপ্ত যাত্রী মেলে না, মিনিবাস ও অটোর মালিকদের এই দাবির সঙ্গে সহমত নন দীপঙ্করবাবু। শহর ক্রমশ বাড়লেও গণ পরিবহণ ব্যবস্থা বদলাতে কার্যকরী পদক্ষেপ হয়নি অভিযোগ করে তাঁর প্রস্তাব, ‘‘মিনিবাসের রুটের পুনর্মূল্যায়ন ও সম্প্রসারণ দরকার, যাতে শহরের সব জায়গা মিনিবাসের রুটের আওতায় আসে। শহরের যে সব জায়গা মিনিবাসের রুটে নেই, সেখানেও যদি বাস চলতে শুরু করে তবে সেখানকার যাত্রীরা বাড়ি ফেরার জন্য সন্ধ্যার পরেও মিনিবাসের জন্য অপেক্ষা করবেন। যাত্রী পেলে মিনিবাসগুলিও চলবে।’’

Advertisement

অটোর প্রসঙ্গ উঠতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রায় সবাই। তমৈনিকা দে-র অভিযোগ, ‘‘অটোস্ট্যান্ড আছে পাড়ায়। কিন্তু সেখানে রুটের অটোর বালাই নেই। কোথাও যেতে গেলে অটো ‘রিজার্ভ’ করতে হয়। বিকেলের পরে তো কথাই নেই!’’ বিশ্বনাথ রায় বলেন, ‘‘যে-যে জায়গায় মিনিবাস চলে না, সেখানে রুটোর অটোও চলে না। এমনকি, কম ভাড়ায় টোটো যাতায়াত করে বলে সেগুলিকেও তাড়িয়ে দেন কিছু অটোচালক। ফলে, চড়া ভাড়া দিয়ে অটো রিজার্ভ করা ছাড়া গতি থাকে না।’’

আবার রুটের তুলনায় প্রায় দশ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ‘রিজার্ভ’ করার পরেও অটো চালকদের একাংশ দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ স্বপন পালের। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় দেড় দশক ধরে অটো চলছে শহরে। দুঃখের বিষয়, যাত্রীদের প্রতি কোনও সহমর্মিতা নেই চালকদের। বয়স্কেরা অনেকে শারীরিক ভাবে পোক্ত নন। সন্ধ্যার পরে অনেকে কম দেখেন। কিন্তু অটোয় ওঠানামায় সামান্য দেরি হলে চালকেরা কথা শুনিয়ে দেন।’’

বাসিন্দাদের প্রস্তাব, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে নতুন মিনিবাসের স্ট্যান্ড চালু করা হোক। তা হলে মিনিবাসের রুটও ছড়িয়ে পড়বে প্রত্যন্ত এলাকায়। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী, পুরনো রুটগুলির পুনর্মূল্যায়ন ও সম্প্রসারণ করুক প্রশাসন। রাতে যাত্রীরা যাতে পথে বিপাকে না পড়েন সে জন্য শহর ঘুরে সরকারি বাস চালু করা হোক। অন্তত রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রুটের অটো চলাচল নিশ্চিত হোক। অটো, বাস রাত পর্যন্ত চলাচলের ব্যবস্থা খাতায়-কলমে হলেও তা যে আসবেই, রাতের শহরে সেই ভরসা কোথায়, প্রশ্ন অনেক বাসিন্দার। নাগরিকদের তরফে প্রস্তাব, ‘অ্যাপ’ তৈরি করে বাস, অটোর যাবতীয় তথ্য রাখা হোক। তাতে যাত্রীরা বাস বা অটোর অবস্থান জেনে নিতে পারবেন।

আলোচনার একেবারে শেষ দিকে দীপঙ্করবাবু জানান, আবাসন এলাকার ভিতরে তাঁরা একটি বহুতল শপিংমল গড়ার কথা ভাবছেন। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য তো আছেই। সঙ্গে রয়েছে গণ পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত করে তোলার আকাঙ্ক্ষাও। কী ভাবে? তাঁর উত্তর, ‘‘এলাকা জমজমাট হলে ভিড় বাড়বে। সন্ধ্যার পরে মিনিবাস, অটোর যাত্রী না মেলার অভিযোগ তখন আর ধোপে ঠিকবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন