ফের বিস্ফোরণ, এ বার নান্দাইয়ে

বল ভেবে খেলতে গিয়ে উড়ল কব্জি

শিবরাত্রিতে স্কুল ছুটি থাকায় উঠোনের এক প্রান্তে নিজেদের মতো খেলছিল চার শিশু। সেখানে বলের মতো কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখে শুরু হয় কাড়াকাড়ি, লোফালুফি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

হাসপাতালে জখম শিশু।

শিবরাত্রিতে স্কুল ছুটি থাকায় উঠোনের এক প্রান্তে নিজেদের মতো খেলছিল চার শিশু। সেখানে বলের মতো কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখে শুরু হয় কাড়াকাড়ি, লোফালুফি। কারও কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিস্ফোরণ!

Advertisement

কালনার নান্দাই পঞ্চায়েতের নতুনগ্রাম এলাকায় শুক্রবার দুপুরের ওই বিস্ফোরণে উড়ে যায় সাড়ে তিন বছরের শিশুর কব্জি। স্‌প্লিন্টার বেঁধে বুকে। এই ঘটনায় আহত হয়েছে বছর ছ’য়েকের শাহুন শেখও। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শাহুনের বোন আনসুরা খাতুনের আঘাত গুরুতর। তার বুকে গভীর ক্ষত রয়েছে। দু’জনকেই প্রথমে কালনা মহকুমা হাসপাতালে, পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বোমা না পটকা, কী ফেটে বিস্ফোরণ— সে সম্পর্কে এখনও নিঃসংশয় নয় পুলিশ। কালনার এসডিপিও প্রিয়ব্রত রায় জানান, ঘটনাস্থল থেকে রাংতায় মোড়া কাগজ-সহ কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কী ধরনের বোমা ফেটে বিস্ফোরণ, পরীক্ষা করে বলা যাবে।

দিন দু’য়েকের ব্যবধানে কালনাতেই ফের বিস্ফোরণ ভাবাচ্ছে পুলিশকে। বুধবার শহর ঘেঁষা হরিহরপাড়া এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে বোমা তৈরির করার সময় জোরালো বিস্ফোরণ হয়। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিন যুবক। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এই বিস্ফোরণ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নান্দাই পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েক’টি গ্রামে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা রয়েছে। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বও রয়েছে। ক্ষমতা জাহির করতে বোমাবাজিও বিরল নয়। এ দিনের ঘটনার পিছনে তার যোগ রয়েছে কিনা, দেখছে পুলিশ। নতুনগ্রামের পাশেই রয়েছে ঘুঘুডাঙা। এই গ্রাম থেকেও অতীতে বহু বার বোমা উদ্ধার হয়েছে। সমাজবিরোধীদের দ্বন্দ্বে বহু বোমাবাজিও হয়েছে। বছর দু’য়েক আগে নতুনগ্রাম থেকে কিছু দূরেই এক ব্যবসায়ীকে বোমা ছুড়ে খুন করা হয়।

Advertisement

এখানেই পড়েছিল বোমা।

এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ নতুনগ্রামে বিস্ফোরণটি হয়। গ্রামের একটি মাঠের গা ঘেঁসে কয়েক ঘর বাসিন্দার সঙ্গে স্ত্রী, পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে বসবাস পেশায় রাজমিস্ত্রি সরিফুল শেখের। টিনের বাড়ির সামনে এক ফালি উঠোন। বাসিন্দারা জানান, সরিফুলের ছেলে শাহুন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। আনসুরা সদ্য অঙ্গনওয়াড়িতে ভর্তি হয়েছে। কাজের সূত্রে সকাল হতেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়েন সরিফুল। বেলা দশটা নাগাদ কাছাকাছি একটি ব্যাঙ্কে বেরিয়ে যান তাঞ্জুরা বিবিও। স্কুল ছুটি থাকায় ছেলেমেয়েরা বাড়িতেই ছিল। বেলা দশটা নাগাদ বোনকে নিয়ে উঠানে খেলা শুরু করে ছোট্ট শাহুন। কিছু পরে পাশের বাড়ি থেকে খেলায় যোগ দেয় বছর ছ’য়েকের ইয়ারুল শেখ এবং বছর তিনেকের ইসরাফিল শেখ। খেলতে খেলতেই চোখ যায় উঠোনের শেষে শৌচালয়ের কাছে একটি নারকেল গাছের নীচে। সেখানেই পড়েছিল বোমাটি। বল ভেবে বোমার সুতুলিও খুলে ফেলে তারা। এরপরেই শুরু হয় লোফালুফি খেলা। কিছু পরেই বিস্ফোরণ!

সে সময় টিনের ঘরে বসে টিভিতে কার্টুন দেখছিলেন দুই শিশুর বড় দিদি পারুল। দশম শ্রেণির ছাত্রী পারুলের কথায়, ‘‘হঠাৎ বিকট আওয়াজ। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখি ভাই আর বোনের শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে।’’ স্থানীয়দের থেকে পুলিশ খবর পেয়ে ভাই, বোনকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। কালনা মহকুমা হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই বলেন, ‘‘ছোট মেয়েটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। ওর হাতে, বুকে গভীর ক্ষত রয়েছে।’’

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বাড়িটি ঘিরে প্রতিবেশীর ভিড়। রয়েছে পুলিশও। পরে অবশ্য আতিপাতি করে খুঁজেও আর কোনও বোমা পায়নি পুলিশ। উঠোনে দাঁড়িয়ে ঠাকুমা রন্দুবতী বিবি বলেন, ‘‘যাদের জন্য ফুটফুটে দুই নাতি-নাতনির এমন হল, তাদের শাস্তি দিক পুলিশ।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন