সবুজ শহরের জন্য কোমর বেঁধেছে ‘সই’

গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে বার্তা পাঠানোর উদ্যোগটা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেই আটকে ছিল। হাতেকলমে যে কাজটা করা যায়, সে ভাবে ভাবেননি তাঁরা। কিন্তু ভাবনাটা পাল্টে গেল পুরুলিয়ার একটি গ্রাম ও আলিপুরদুয়ারের এক জনের কথা জানার পরে।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০২:২১
Share:

সেপকো টাউনশিপে বৃক্ষরোপণে মহিলারা। ছবি: বিশ্বনাথ মশান

গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে বার্তা পাঠানোর উদ্যোগটা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেই আটকে ছিল। হাতেকলমে যে কাজটা করা যায়, সে ভাবে ভাবেননি তাঁরা। কিন্তু ভাবনাটা পাল্টে গেল পুরুলিয়ার একটি গ্রাম ও আলিপুরদুয়ারের এক জনের কথা জানার পরে।

Advertisement

রাজ্যের সীমানায় পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের এক গ্রামে আধশতাব্দী আগে সংগঠন গড়ে তুলে রুখু-সুখু জমি সবুজ করে তোলায় মন দিয়েছিলেন কয়েক জন। পরে তাঁদের সংগঠনের নামেই পরিচিতি পেয়েছে ওই এলাকা। পুরুলিয়ার সেই ‘ভাল পাহাড়’-এর কথা শুনেছিলেন দুর্গাপুরের সেপকো টাউনশিপের জনা কয়েক মহিলা। তাঁদের মনের জোর বেড়ে যায় আলিপুরদুয়ারের ‘গেছোদাদা’র কথা জেনে, যিনি গাছ লাগানোকেই ব্রত করেছেন।

এ সব জানার পরে আর বসে থাকতে পারেননি সেপকো টাউনশিপের দশ জন বধূ। সংসার সামলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিকনিক— এ সবের আয়োজন নিয়েই মেতে থাকতেন তাঁরা। কিন্তু এখন তাঁদেরও নেশা, শহর সবুজ করে তোলা। সবাই মিলে হাত লাগিয়েছেন সেই কাজে।

Advertisement

‘পাড়ার ছোট্ট পার্ক, ঘাস নেই আছে ধুলো’— গানের লাইনের মতো পার্কে ধুলো চাননি সেপকো টাউনশিপের পুরনো বাসিন্দারা। তাঁরা নিজের মতো করে পাড়ার পার্কের চারপাশে গাছ লাগিয়েছিলেন। টাউনশিপের তিন নম্বর স্ট্রিটের সেই পার্ক এখন বেশ সবুজ। রিমা সেন, টুম্পা প্রমাণিক, কৃষ্ণা মণ্ডল, মধুছন্দা সিংহ, সঞ্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘পাড়ায় এসে থেকে দেখেছি কাকু-কাকিমারা পার্কে নানা ফুল-ফলের গাছ লাগান, নিয়ম করে জল দেন। তাঁরাই আমাদের অনুপ্রেরণা।’’ সম্প্রতি সেই পার্কেই বেশ কিছু নতুন গাছ লাগিয়েছে ওই বধূদের তৈরি সংগঠন ‘সই’।

এক সময় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছিল টিলা, তার উপর জঙ্গল। প্রায় দেড় দশক আগে তা সাফ করে তৈরি হয় এই টাউনশিপ। এখন চারদিকে কংক্রিটের জঙ্গল। গাছ থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। নূপুর কুণ্ডু, চন্দনা পুরকায়স্থরা বলেন, ‘‘দিন দিন প্রকৃতি বিরূপ হচ্ছে। হাত গুটিয়ে বসে থাকার সময় আর নেই। পুরুলিয়ার ভাল পাহাড়ে যদি হাজার-হাজার গাছ বেড়ে উঠতে পারে, দুর্গাপুরেই বা হবে না কেন!’’

সেপকো টাউনশিপের ওই বধূরা জানান, আমলকি, কৃষ্ণচুড়া, হরিতকি, বকুল-সহ মোট ১০ রকমের গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে টাউনশিপের রাস্তার ধারে। এ ছাড়া কয়েকটি পার্কেও গাছ লাগানো হবে। পরবর্তী পর্যায়ে দুর্গাপুজোর প্রাঙ্গণে গাছ লাগানো হবে। সেই সব গাছের দেখভালের দায়িত্ব তাঁরা দিয়ে আসবেন পাড়ার বাসিন্দাদেরই। কিন্তু তাঁরা যে দায়িত্ব পালন করবেন সে নিশ্চয়তা কোথায়? ‘সই’-এর সদস্যেরা জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সচেতনতা তৈরির প্রয়াস শুরু করে দিয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘শুধু রাস্তা বা পার্কে নয়। প্রত্যেকে বাড়ির উঠোনে বা ছাদে পাঁচটি করে গাছ লাগাতে হবে, সেই বার্তাই প্রচার করছি।’’

তাঁদের এমন উদ্যোগের কথা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট মারফত পৌঁছে গিয়েছে ভিন্‌ রাজ্যেও। ইতিমধ্যে কলকাতা, শিলিগুড়ির পাশাপাশি পুণে, মুম্বই, দিল্লি থেকে পরিচিতরা শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই নিজেদের পাড়ায় এমন উদ্যোগ শুরুর ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন বলে চন্দনাদেবীরা জানান। যেমন, মুম্বই থেকে ত্রয়ী দেওয়ান জানিয়েছেন, ‘বৃক্ষরোপণ অভিযানের ছবি দেখে আমি আপ্লুত। আমিও যদি নিজে এমন করতে পারতাম!’ কলকাতা থেকে অপরাজিতা ঝা লিখেছেন, ‘তোমাদের মতোই এখানেও উদ্যোগ শুরু করব বলে ভাবছি।’ শিলিগুড়ির সোমা চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘আশপাশ হয়ে উঠুক নিকষ সবুজ!’

এই সব বার্তাই অক্সিজেন ‘সই’-এর উদ্যোগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন