কন্যাশ্রীর টাকায় পণ রুখতে উদ্যোগ

কাটোয়ার পানুহাটের একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুপ্রিয়া (নাম পরিবর্তিত) গত অগস্টে আঠারোয় পড়তে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা পান। ঠিক তাঁর পরের মাসেই বিয়ে হয় তাঁর।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৮
Share:

কাটোয়ার পানুহাটের একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুপ্রিয়া (নাম পরিবর্তিত) গত অগস্টে আঠারোয় পড়তে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা পান। ঠিক তাঁর পরের মাসেই বিয়ে হয় তাঁর। সুপ্রিয়া জানিয়েছেন, প্রকল্প থেকে পাওয়া সরকারি টাকা উচ্চশিক্ষার বদলে বিয়েতে খরচ করা হয়েছে তাঁর।

Advertisement

জামালপুরের সুমিতা মুর্মুওর (নাম পরিবর্তিত) গল্পটাও একই রকম। একাদশ শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই আঠারোয় পা দেন সুমিতা। তাঁর অ্যাকাউন্টে ‘কন্যাশ্রী’র টাকা ঢুকতে তা তাঁর বিয়ের পণ বাবদ খরচ করা হয়েছে বলে সম্প্রতি জানতে
পেরেছে প্রশাসন।

বাল্যবিবাহ আটকানো এবং গরিব ঘরের মেয়েদের পড়াশোনা শিখিয়ে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছেন। কিন্তু সেই টাকায় বর-পণ দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে ‘কন্যাশ্রী’র আওতায় থাকা ছাত্রী ও তাঁদের পরিবারের সচেতনতা বাড়াতে সচেষ্ট হল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।

Advertisement

প্রথম উদ্যোগ— বাংলা টিভি সিরিয়ালের এক পরিচিত নায়িকাকে নিয়ে সচেতনতা-প্রচারের তথ্যচিত্র তৈরি করে স্কুল ও গ্রন্থাগারে দেখানো। দ্বিতীয় পন্থা, জেলার ৩৫টি ‘কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যদের জন্য ‘কন্যাশ্রী সুরক্ষা সহায়িকা’ প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণে মেয়েদের ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় হেনস্থা হওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যৌন-নিগ্রহ কী ভাবে ঠেকানো যায়, তা শেখানো হবে।

তিন মিনিটের তথ্যচিত্রে দেখা যাচ্ছে— নায়িকা পুলিশ আধিকারিক হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁকে দেখতে তাঁর বান্ধবী ছেলে কোলে ছুটে আসেন। পরিজনদের উদ্দেশে নায়িকা বলে ওঠেন, ‘‘কন্যাশ্রী ২-এর টাকা বিয়ের পণে খরচ না করে পড়াশোনায় খরচ করেছিলে তোমরা, তাই আমি আজ পুলিশ অফিসার। আর আমার বান্ধবী সংসার করছে!”

‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের প্রথম ধাপে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বছরে ৭৫০ টাকা মেলে। দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ ‘কন্যাশ্রী ২’-এ আঠারো বছর বয়সে এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। মেয়েটিকে স্কুল বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীও হতে হয়। কিন্তু মেয়েটির পরিবার সেই অর্থ দিয়ে কী করবে— তা সরকারি নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে বলা নেই। তা ছাড়া, মেয়ের ১৮ বছর বয়স হলে বিয়ে
আইনসিদ্ধও বটে।

‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের জেলা আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, “ওই টাকা যাতে উচ্চশিক্ষায় বা স্বনির্ভর হওয়ার কাজে খরচ করে মেয়েরা, সে জন্য তথ্যচিত্রটি করা হয়েছে। কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েদের ওই সহায়িকার বিষয়বস্তু নিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে আলোচনা করতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। সচেতনতা বাড়াতে জেলা স্তরে এই উদ্যোগ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন