উৎসবে: বার্নপুরের প্রান্তিক ক্লাব সর্বজনীনের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র
উৎসব পালিত হবে, কিন্তু জমকালো আলো থাকবে না? তা হতে পারে না। সে দুর্গাপুজো বা অন্য যে কোনও পুজোই হোক। কালীপুজো হলে কথাই নেই। দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই শ্যামাপুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে শিল্পাঞ্চলে। আড়ে-বহরে দুর্গাপুজো ঠিক যতটা এগিয়ে থাকে আসানসোলে, ততটাই কালীপুজো জমকালো হয় ইস্পাত শহর বার্নপুরে। এ বারও তার অন্যথা নেই। শুধু আলোর ঝলকানিই নয়, থিমের বাহারেও একে অপরকে টেক্কা দিচ্ছেন পুজোর উদ্যোক্তারা।
এ বার ৬৪ বছরে পড়ল বার্নপুরের প্রান্তিক ক্লাব সর্বজনীন। ও-পার বাংলার শিল্প সৃষ্টিকে এ-পার বাংলায় ফুটিয়ে তোলার থিম নিয়ে ময়দানে নেমেছেন তাঁরা। দীপাবলির উৎসব তাই মণ্ডপ অলঙ্করণের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নানা আকৃতির বাহারি মাটির প্রদীপ ও হ্যারিকেন। উদ্যোক্তাদের দাবি, এগুলি হুবহু পূর্ববঙ্গীয় শিল্পের আদলে তৈরি করা হয়েছে। সজ্জায় থাকছে কদমফুল ও বাবুইপাখির বাসা। মণ্ডপটিকে মোহময়ী করে তুলতে প্রদীপ ও হ্যারিকেনে এলইডি বাল্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বার দেশের জাতীয় পাখিকে মণ্ডপের থিম করেছেন বার্নপুরের পাবলিক ফ্রেন্ড ক্লাব। মণ্ডপ জুড়ে থাকছে লোহার তারজালি দিয়ে তৈরি ময়ূর। এখানকার পুজোর মূল আকর্ষণ মেলা। স্থানীয় সুভাষ ময়দানে মেলা চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিনই থাকছে বিচিত্রানুষ্ঠান। এ বার পুজোর স্বর্ণজয়ন্তী বর্ষ পালন করছে বার্নপুরের মিলন চক্র ক্লাব সর্বজনীন পুজোকমিটি। দক্ষিণ ও উত্তর ভারতের শিল্পের মিশ্রণে একটি কাল্পনিক মন্দির তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা জানান, কালী মানেই যে প্রচলিত ভয়ঙ্কর রূপ, তা এখানে এলে মনে হবে না। মণ্ডপের গাম্ভীর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমা এখানে ধ্যানমগ্না, শান্ত ও সৌম। ইতিহাসের পাতায় দেখা প্রাচীন রাজ পরিবারের সেই পুজো মণ্ডপের আদলে এ বার মন্ডপ সাজিয়েছেন বার্নপুরের রাজস্থান ক্লাব। উদ্যোক্তাদের দাবি, সাধারণত রাজস্থানে এই ধরনের মণ্ডপ দেখা যায়। প্রতিমার ক্ষেত্রে অবশ্য কোনওরকম জারিজুড়ি রাখেননি তাঁরা। সাবেক ধাঁচের প্রতিমা শোভা পাচ্ছে এই মণ্ডপে। আলোর মালায় এ বার মণ্ডপ সাজিয়েছে নিউটাউনে নাকড়াসোঁতা জনকল্যাণ সমিতি। রাজস্থানের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে এরা।
আসানসোলের বিভিন্ন মণ্ডপে বিশাল মাপের প্রতিমা গড়ে পুজো করার রেওয়াজ রয়েছে। এ বারও প্রায় ৩৫ ফুট উচ্চতার প্রতিমা গড়েছেন আসানসোল রামসায়ের ময়দান ও গোপালনগর সর্বজনীন পুজো উদ্যোক্তারা। এই দু’টি মণ্ডপে বড় কালীপ্রতিমা দেখার ভিড় প্রতিবারই দেখা যায়। এ বারও তার অন্যথা হবে না বলেই দাবি উদ্যোক্তাদের। প্রায় ৩২ ফুট উচ্চতার কালীপ্রতিমা গড়ে পুরনো ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন বরাকর বাজার সর্বজনীন পুজোর উদ্যোক্তারা। মূলত এলাকার ব্যবসায়ী মহলই এই পুজো পরিচালনার মূল দায়িত্ব পালন করেন। কুলটির নিয়ামতপুর সর্বজনীন কালীপুজো কমিটি এ বারও জাঁকজমক ভাবে পুজো করছে। এখানকার মূল আকর্ষণ আধুনিক আলোকের বাহার।