বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

নিরাপত্তা রক্ষীর অভাবে বারবার গোলমাল

একে টানাটানির সংসার। তার থেকে আবার জোগান দিতে হয় অনাময় হাসপাতালকেও। নিরাপত্তা কর্মী নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হালটা এমনই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

একে টানাটানির সংসার। তার থেকে আবার জোগান দিতে হয় অনাময় হাসপাতালকেও। নিরাপত্তা কর্মী নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হালটা এমনই।

Advertisement

সাকুল্যে ৩৬ জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে চলছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালের এক বিভাগীয় প্রধানের কথায়, ‘‘এ পুরো চলতি কা নাম গাড়ি। যতক্ষণ চলছে চলছে, কখন দুর্ঘটনা ঘটবে কেউ জানে না।”

এই হাসপাতালে রোগীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে রাতে অবাধে ঘুরে বেড়ানো যায়। হাসপাতাল চত্বর থেকে যখন-তখন ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটারেও অবাধে প্রবেশ করতে পারেন রোগীর আত্মীয়েরা। আর গোলমাল বাধলে তো ডাক্তারদের উপর চড়াও হওয়াও নতুন নয়। তবে এত দিন রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে চিকিৎসক বা কর্মীদের গোলমাল চেনা ছিল, সোমবার দেখা গেল কর্মীদের সঙ্গে ডাক্তারদের গোলমাল। সঙ্গে প্রমাণ হয়ে গেল হাসপাতাল কতখানি অরক্ষিত।

Advertisement

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ছাড়াও, বিজয়চন্দ ভবন, রাধারানি ভবন-সহ ১৫টি ভবন রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই ২৪ ঘন্টাই রোগী ভর্তি হয়ে চলেছে। জরুরি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারও সবসময় খোলা। এক কথায়, হাসপাতাল চত্বর সব সময় ভিড় ঠাসা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন দু’ থেকে আড়াই হাজার রোগীর পরিজন এবং প্রায় ১৮০০ রোগীমিলিয়ে হাজার পাঁচেক মানুষ হাসপাতালে থাকেন। অথচ তাঁদের নিরাপত্তার দাবিতে রয়েছেন ৩৬ জন রক্ষী। তার মধ্যে থেকেই অনাময় হাসপাতাল কিংবা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য রক্ষী পাঠাতে হয়।

সোমবার রাতে ‘অরক্ষিত’ জরুরি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে হাতে চোট নিয়ে দলবল সমেত ঢুকে পড়েন এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। অপারেশন থিয়েটারে জুতো পরে কেন ঢুকেছেন প্রশ্ন করতেই জুনিয়র চিকিৎসক ইমরান খানের সঙ্গে বচসা শুরু হয়ে যায়। অভিযোগ, দলবল নিয়ে ওই ডাক্তারকে মারধর শুরু করেন ওি কর্মী। বাকি চিকিৎসকরা আটকাতে গেলে তাঁরাও প্রহৃত হন। এরপরেই অস্ত্রোপচার বন্ধ করে চিকিৎসকরা বেরিয়ে যান। অন্য বিভাগের চিকিৎসকরা জড়ো হয়ে ধর্না দিতে বসে যান। রোগী ভর্তি এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটে আসেন হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ ও এসডিপিও (সদর) সৌমিক সেনগুপ্ত। তাঁদের আশ্বাসে পাঁচ ঘন্টা পর ধর্না তুলে কাজে যোগ দেন চিকিৎসকরা।

রাধারানি ওয়ার্ডের এক নার্স বলেন, “আমাদের এখানে ছ’টি ব্লক রয়েছে। রাতে এলেই দেখতে পাবেন, মহিলা ওয়ার্ডে পুরুষদের অবাধ প্রবেশ। একজন নিরাপত্তারক্ষীর পক্ষে ভিড় সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।” দেখভালের অভাবে টোটোর দৌরাত্ম্যও রয়েছে হাসপাতালের ভিতর। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জরুরি বিভাগের কাছে পুলিশের ক্যাম্প রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই ওই ক্যাম্পের পুলিশ বা সিভিক ভলেন্টিয়াররা দুর্ঘটনায় আহতদের সেবা করতে কিংবা বহির্বিভাগে রোগীদের লাইন ঠিক করতে গিয়েই সময় কাটিয়ে ফেলে। রাতের দিকে পুলিশ থাকলেও নিরাপত্তার অভাব থেকেই যায়।

সোমবার রাতের ওই ঘটনার পরে বৈঠকে ঠিক হয়েছে, জরুরি বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ, শিশু ওয়ার্ড, রাধারানি ওয়ার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে সিভিক ভলেন্টিয়ার ও নিরাপত্তা রক্ষী বেশি করে নিয়োগ করতে হবে। বৈঠক শেষে হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “জোড়াতাপ্পি দিয়েই চালাতে হবে। এ ছাড়া তো কিছু করার নেই।”

তবে বৈঠকে হাজির মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) মুফতি শামিম সওকত বলেন, “রাজ্য সরকার ২৯২ জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুমোদন দিয়েছে। দরপত্র করে কোনও সংস্থার মাধ্যমে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন