Anubrata Mandal

Anubrata Mondal: ‘সবচেয়ে ক্ষমতাশালী, রয়েছে সরকারি যোগ’, প্রভাবশালী তত্ত্বেই খারিজ কেষ্টর জামিনের আবেদন

শনিবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মক্কেলের জামিন চান অনুব্রতের আইনজীবী। তার বিরোধিতা করে সিবিআই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২২ ১৬:০৭
Share:

সিবিআইয়ের গাড়িতে নিজাম প্যালেসের পথে অনুব্রত মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

বীরভূম তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে আরও চার দিন সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত। শনিবার শুনানির শুরুতেই অনুব্রতের জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। প্রত্যাশিত ভাবেই তার বিরোধিতা করেন সিবিআইয়ের কৌঁসুলি।

Advertisement

শনিবার শুনানির শুরুতে মক্কেলের জামিনের আবেদন জমা করেন অনুব্রতের আইনজীবী। বলেন, ‘‘আমার মক্কেলকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওঁর সিওপিডি-সহ আরও একাধিক অসুস্থতা আছে। ওঁর বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ আছে। প্রথমত, গরু পাচার-কাণ্ডে গরুর নিলামে প্রভাব খাটানো। দ্বিতীয়ত, এনামুল হকের সঙ্গে ওঁর দেহরক্ষী ফোনে যোগাযোগ। এই দু’টি অভিযোগ উঠে এসেছে, যার কোনও প্রমাণ নেই।’’

এর পর অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘‘রাইস মিলটি ওঁর শ্বশুর উপহার দিয়েছিলেন বহু বছর আগে। আর অ্যাকাউন্টে যে অর্থের কথা বলা হয়েছে, তা ওঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর পাওয়া এলআইসির টাকা।’’

Advertisement

অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘‘অভিযোগ, ওঁর মেয়ে বিবৃতি দিতে অস্বীকার করেছেন। সেটা কি আমার মক্কেলকে হেফাজতে নেওয়ার কারণ হতে পারে?’’ অনুব্রত তদন্তে ‘অসহযোগিতা’ করছেন বলে বার বার অভিযোগ করছে সিবিআই। সেই প্রেক্ষিতে অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘‘যথেষ্ট সহযোগিতা করা হয়েছে, তা-ও অসহযোহিতার অভিযোগ উঠছে। ধরে নিচ্ছি, আমি সহযোগিতা করিনি, কিন্তু এক জন নাগরিক হিসেবে সে ক্ষেত্রে আমার আইনি রক্ষাকবচ রয়েছে। এজেন্সি ১৪ দিন হেফাজতে রাখতে পারে বলে এটা তাদের বিশেষ অধিকার নয়।’’ আইনজীবীর যুক্তি, ‘‘যদি আমি সহযোগিতা না-ই করে থাকি, তা হলে কি প্রমাণ যে আমি এই চার দিনেও সহযোগিতা করব?’’

এ কথা শুনে বিচারক বলেন, ‘‘ধরে নিচ্ছি, যদি কোনও নথি সামনে রাখা হয়, তবে সেটায় যদি আমি চুপ থাকি বা সই না করি, সেটা কি অসহযোগিতা নয়? সেখানে আমার চুপ থাকার অধিকারের কারণে কি তদন্তে অসুবিধা হবে না?’’ অনুব্রতের আইনজীবীর জবাব, ‘‘ধরে নিন, আমি চার দিন হেফাজতে থাকব। এই চার দিনে সব বলে দেব, তার কী মানে?’’

কেষ্টর আইনজীবীর সওয়াল, ‘‘প্রথমত, অনুব্রত সহযোগিতা করছেন না। দ্বিতীয়ত, ওঁর মেয়ে সহযোগিতা করছেন না। এই দু’টি কারণেই সিবিআই তাদের হেফাজতে চাইছে। সিবিআই যে ভাবে বলেছিল, সে ভাবে হাজিরা দিতে পারেননি উনি। এটাও অভিযোগ। কিন্তু ওঁর অসুস্থতার জন্য আসতে পারেননি।’’

বিচারক বলেন, ‘‘কাকতালীয় ঘটনা কত বার ঘটতে পারে?’’ অনুব্রতের আইনজীবীর যুক্তি, ‘‘কাকতালীয় নয়। উনি প্রতি বারই বলেছেন, আমি ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকতে পারি অথবা আমার বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে সিবিআই। আমি অসুস্থতার জন্য যেতে পারছি না। আমাকে যখন অভিযুক্ত হিসেবে ধরা হয়, তখনই তো ৪১এ ধারায় নোটিস দেওয়া হয়।’’

বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি এই দুই বিকল্প দিয়েছিলেন?’’ অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘‘হ্যাঁ। সিবিআইয়ের হাতে এমন অনেক সুবিধা রয়েছে, যার মাধ্যমে স্বচ্ছ ভাবে তদন্ত করা যায়। আমি যখন আমার বাড়ি এসে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তাব দিয়েছি, তখন কোনও জবাব পাইনি সিবিআইয়ের কাছ থেকে। পরের দিন আবার যাওয়ার নোটিস পেয়েছি। এতে সিবিআইয়ের স্বচ্ছতা নষ্ট হয়েছে। আমি মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখিয়ে বলেছি, ডাক্তাররা আমাকে ১৪ দিন বিশ্রাম নিতে বলেছেন। তার পরের দিনই আমাকে আবার কলকাতায় নিজাম প্যালেসের অফিসে যাওয়ার নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। আমার সঙ্গে কী ব্যবহার করা হয়েছে দেখুন। আমি পলাতক নই। আমি নোটিস গ্রহণ করেছি, তার জবাবও দিয়েছি।’’

বিচারক প্রশ্ন করেন, উনি এর মধ্যে কত বার কলকাতা গিয়েছিলেন? কেষ্টর আইনজীবী জানান, এক বার। বিচারক আবার প্রশ্ন করেন, ‘‘তাই? এক বছর চার মাসে মাত্র এক বার?’’ কেষ্টর আইনজীবী বলেন, ‘‘গত বছর ২৪ এপ্রিল আমাকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। আমি জানিয়েছি অসুস্থ। পরবর্তী নোটিস ১০ মাস পরে এসেছে। ১০ মাসে তারা এক বারও ডাকেনি!’’ তাঁর আরও দাবি, অসুস্থতার কারণেই অনুব্রত সিবিআই দফতরে যেতে পারেননি। যে বার তিনি সুস্থ ছিলেন, সিবিআই অফিসে গিয়ে কথা বলেছেন। বিচারক অনুব্রতের শেষ মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখেন।

এর পর বলতে ওঠেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী বলেন, ‘‘উনি বলছেন অভিযুক্ত সব সময় সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু আমি বলতে চাই, জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে এমন কাজ নেই অভিযুক্ত করেননি। উনি কলকাতা গিয়েছেন এসএসকেএমে। কিন্তু ৮০০ মিটার দূরে নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে যাননি। সেটা হাই কোর্টও মেনেছিল। চিকিৎসকদের সার্টিফিকেট দিতে হুমকি দেওয়া হত।’’ বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনার কাছে বিবৃতি আছে?’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী জবাব দেন, ‘‘আছে।’’ তার পর বলতে থাকেন, ‘‘কোটি কোটি টাকা ওঁর অথবা ওঁর মেয়ে কিংবা ওঁর পরিচিতের অ্যাকাউন্ট থেকে এ দিক-ও দিক হয়েছে।’’ আদালতে সিবিআইয়ের দাবি, ‘‘উনি সবচেয়ে প্রভাবশালী। রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে। এখানে এক ব্যক্তির ব্যবসার কথা হচ্ছে না। এটা আসলে একটি ‘চেইন’।’’ এর পর সরাসরি অনুব্রতকে আরও চার দিন হেফাজতে চেয়ে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘এখনও অনেক ব্যাপার জানার আছে। ওঁর সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন জিনিস খতিয়ে দেখতে হবে। সে জন্য তাঁকে আবার আমাদের হেফাজতে নিতে হবে। আমাদের হেফাজতে তাঁর প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। অভিযুক্তের কোনও অসুবিধা হয়নি।’’

দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে বিচারক নির্দেশ স্থগিত রাখেন। কিছু ক্ষণ পর জামিনের আবেদন খারিজ করে তাঁকে চার দিনের সিবিআই হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন