বিদ্যুতের অপেক্ষায় এই এলাকারই বাসিন্দারা। ছবি: পাপন চৌধুরী
বার্নপুর-সূর্যনগরের মূল রাস্তা থেকে কিলোমিটার খানেক মেঠো পথ ধরে এগোলেই দেখা মিলবে আদর্শ ব্যারাকের। কিন্তু নামের সঙ্গে বাস্তবের যে কোনও মিল নেই, তা জানালেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের ক্ষোভ, ‘ঢাকেশ্বরী কটন মিলের’ ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার পরে থেকেই আঁধারে দিন কাটছে ১১টি পরিবারের। তা-ও দু-তিন বছর নয়। গত ৫৬ বছর ধরে এমনই অবস্থা! ভোটের মুখে তাঁদের প্রশ্ন, এলাকায় কবে আসবে বিদ্যুৎ।
আসানসোল পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে এই এলাকা। ঝোপঝাড়, জঞ্জালেরর স্তূপ ডিঙিয়ে সামান্য এগোলেই দেখা যাবে পুলিশ ব্যারাকের মতো সার বাঁধা দু’কামরার বাড়িগুলি। কেন এমন হাল? ঝাঁকড়া নিম গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বৃদ্ধা রানিবালা দে। তিনি জানান, এটি আসলে ‘ঢাকেশ্বরী কটন মিলের’ কর্মী আবাসন। তিনি ওই মিলে এক সময়ে কাজও করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মিল চালু থাকা অবস্থায় এখানে জল, রাস্তা, বিদ্যুৎ সবই ছিল। কিন্তু তালা পড়ার পরে আর কোনও পরিষেবা পাই না।’’ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ১৯৬৩ সালে মিল বন্ধ হলেও তাঁরা এখানেই থেকে গিয়েছেন। গত ৫৬ বছর ধরে তাঁদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় বিদ্যুদয়নের আবেদন জানিয়ে নেতা, কাউন্সিলর, সাংসদের কাছে বারবার গিয়েছেন। কিন্তু কেউই মুখ তুলে তাকাননি। তবে বিদায়ী সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ের দাবি, ‘‘এলাকায় সৌর-আলো বসানো হয়েছে। বাকিটা আমরা খতিয়ে দেখব।’’
ক্ষোভ উগরে দিয়েছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রূপম দে। তার কথায়, ‘‘আমার স্কুলের বন্ধুরা বিজলি বাতির আলোয় লেখাপড়া করে। আমিই শুধু হ্যারিকেনে পড়ি। খুব চোখ জ্বালা করে।’’ তার প্রশ্ন? ‘‘এ পাড়ায় কবে আসবে বিদ্যুৎ?’’ বিদ্যুৎ দিতে সমস্যা কোথায়? বিদ্যুৎ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, এই এলাকায় খুঁটি পুঁতে তার টানতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে। কিন্তু সেই খরচ বহন করা নিয়ে জট রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর প্রিয়ব্রত সরকারের দাবি, ‘‘আমি পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে এই খরচ বহন করার আবেদন জানিয়েছি। এখন পুরসভাই একমাত্র ভরসা।’’ স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল দাস জানান, পুর-কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাঁরা গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের সংযোগ চেয়ে দফতরে আবেদন জমা করেছেন। তার পরে আর একচুলও কাজ এগোয়নি বলে অভিযোগ। সমস্যার কথা শুনে শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘পুরসভা এ বিষয়ে যথেষ্ট সহানুভূতিশীল।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ দিকে, সূর্য অস্ত যেতে না যেতেই এলাকায় ঘুটঘুটে আঁধার নামে। তখন কেরোসিনের বাতিই একমাত্র ভরসা আদর্শ ব্যারাকের। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, কিন্তু ক্রমশ অমিল হচ্ছে কেরোসিনও। যেটুকু মেলে তা-ও চড়া দামে কিনতে হয়। বধূ কৃষ্ণা দাসের আক্ষেপ, ‘‘কত দিন এ ভাবে চলবে জানি না!’’ বৃদ্ধা রানিবালাদেবী জানান, এত কষ্টের মধ্যে থেকেও ফি বছর তাঁরা চড়া রোদে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিষেবার ভাঁড়ার সেই শূন্যই থেকে গিয়েছে। এ বার কী হবে জানা নেই কারও!