তফসিলি ভোটে নজর সব পক্ষের

বোলপুর লোকসভার অধীন আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকায় মোট ভোটারের ৪৯ শতাংশ তফসিলি জাতি ও ১৩ শতাংশ জনজাতি।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

চাষের জন্য সেচের জল মেলে না বললেই চলে। শালপাতার থালা তৈরি করে রোজগার করার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা মেলে না। বাধ্য হয়ে ভিন্‌ রাজ্যে মজুরের কাজ করতে যেতে হয় গ্রামের তরুণদের— অভিযোগ বাসিন্দাদের। আউশগ্রামের গ্রামীণ এলাকায় কাজের জন্য যখন এমন হাপিত্যেশ, রাজনৈতিক দলগুলির তখন তফসিলি জাতি ও জনজাতির মানুষজন কোন দিকে ঝুঁকছেন, নজর সে দিকে।

Advertisement

বোলপুর লোকসভার অধীন আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকায় মোট ভোটারের ৪৯ শতাংশ তফসিলি জাতি ও ১৩ শতাংশ জনজাতি। এই ভোটের বেশিরভাগটা যে দল খাতায় তুলতে পারবে, তারাই এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা। এক সময়ে বামেদের ‘খাসতালুক’ বলে পরিচিত ছিল আউশগ্রাম। ১৯৬৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বিধানসভা ভোটে টানা জিতেছে তারা। তবে হাওয়া যে ঘুরছে তা বোঝা যায় ২০১৪-র লোকসভা ভোটে। সে বার এখানে তৃণমূল আঠারো হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে যায়। দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে প্রথম বার এই আসন জিতলেও সিপিএমের সঙ্গে ব্যবধান কমে দাঁড়ায় হাজার ছয়েক ভোটে। লোকসভার তুলনায় প্রায় ছ’হাজার ভোট কমে বিজেপির।

বিজেপির আউশগ্রাম ২ ব্লকের মণ্ডল সভাপতি স্মৃতিকান্ত মণ্ডল দাবি করেন, “আমদের সংগঠন দ্রুত হারে বাড়ছে। তৃণমূলকে হারানোর জন্যে সিপিএমের একটা অংশ চলে আসছে। তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েও আমাদের সঙ্গে অনেকে যোগাযোগ করছেন।’’ তাঁর অভিযোগ, তাঁদের সমর্থকদের পানীয় জল থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। দলের পতাকা-ফেস্টুন ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। ব্লক অফিস চত্বরেও আক্রান্ত হতে হচ্ছে কর্মীদের।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সিপিএম নেতাদের অবশ্য দাবি, বিধানসভা ভোটে আউশগ্রাম ১ ব্লক ও গুসকরা পুরসভা এলাকায় তাঁরা বেশ খানিকটা এগিয়েছিলেন। আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূলকে জিতিয়ে দেয়। তবে এলাকার অনেক জায়গায় এখন দলের নড়াচড়া কমেছে, মেনে নেন দলের কর্মীদের একাংশ। আউশগ্রাম ২ ব্লকে আবার বিজেপির উপস্থিতি নজরে পড়ছে। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারের যদিও দাবি, ‘‘কয়েকজন বিজেপি করলেও তাঁদের বাড়ির লোকেরাও আমাদের ভোট দেবেন।’’

এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, সেচ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। প্রতি বছর জলের দাবিতে অবরোধ-বিক্ষোভ হয়। জঙ্গল এলাকায় আদিবাসীরা শালাপাতা থেকে থালা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু তাঁদের ন্যূনতম চাহিদা, শালাপাতা তৈরির জন্য একটি আচ্ছাদনের দাবি মেটে না। চাষি বা শালপাতা তৈরিতে যুক্ত মহিলারা মহাজনের ঋণ শোধ করতে নাজেহাল হন বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, ঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনা প্রতি বছরই ঘটে। তাই কাজের খোঁজে কিশোর থেকে যুবকেরা এখন পা বাড়াচ্ছেন ভিন্‌ রাজ্যে। অনেকে গাড়ির মাথায় চেপে ধান কিনতে বীরভূম-মুর্শিদাবাদে ছোটেন। এ ভাবে ধান কিনতে গিয়েই কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। মৃতের এক পরিজনের প্রশ্ন, ‘‘আমাদের জীবনের কোনও গুরুত্ব কি রাজনৈতিক দলগুলির কাছে রয়েছে?’’

এলাকার বিজেপি নেতা জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘স্থানীয় মানুষের জন্য কাজ, সেচের দাবি নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি।’’ তৃণমূল বিধায়কের পাল্টা দাবি, ‘‘একশো দিনের কাজ থেকে সেচ ব্যবস্থার উন্নতি করে কাজের জোগান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করেছে। ভিন্‌ রাজ্যে কাজের খোঁজে যাওয়ার প্রবণতা থমকে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন