প্রতীকী চিত্র।
এই লোকসভা কেন্দ্রে দলেরই বিদায়ী সাংসদ রয়েছেন। সেই সঙ্গে গত পুরসভা ভোটে সব ক’টি ওয়ার্ডে মিলেছে জয়। লোকসভা ভোটের আগে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত দুর্গাপুরে শাসক দলের প্রচারেও কোনও খামতি নেই। কিন্তু শাসক দলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, দুর্গাপুরে দলের সংগঠনে বেশ কিছু খামতির কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একাধিক তৃণমূল নেতা, কর্মীরা প্রধান যে খামতিটির কথা বলছেন তা হল, শহরের নেতাদের গুরুত্ব কোথাও যেন কম ঠেকছে। আর তাই, এই ভোটের আগে সে ভাবে গোষ্ঠী কোন্দল সে ভাবে প্রকাশ্যে না এলেও দু-একটি ঘটনা নিয়ে চর্চা হচ্ছে দলের অন্দরেই। তৃণমূল সূত্রে খবর, লোকসভা ভোটের আগে প্রার্থীর উপস্থিতিতে দলের বৈঠকে দেখা মেলেনি শহরের তিন জন ব্লক সভাপতির দু’জনেরই! কখনও বা নির্বাচনী বৈঠকে স্থানীয় এক নেতার বিরুদ্ধে অপমান করার অভিযোগ করে দলীয় নেতৃত্বের সামনেই সভাস্থল ছাড়ছেন এক মহিলা কাউন্সিলর, তা-ও দেখা গিয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শহরের ওই তৃণমূল নেতা, কর্মীদের মতে, দুর্গাপুরের নেতাদের ‘গুরুত্বহীন’ হওয়াটার সূত্রপাত বেশ কিছু দিন আগে থেকেই। তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুরের দু’টি বিধানসভাতেই হারের পরে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। সূত্রের খবর, সেই সময়ে উঠে আসে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য। যেমন, ছেলে দিনভর তৃণমূল কার্য়ালয়েই থাকেন। কিন্তু পরিবারের ভোটও তিনি দলের হয়ে টানতে পারেননি। পাড়া তো দূরঅস্ত।
২০১৬-র পরেই ২০১৭-র পুরসভা ভোট হয় দুর্গাপুরে। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেই সময়ে, আসানসোল, এমনকি পূর্ব বর্ধমানের বেশ কয়েক জন নেতাকে ভোট পার করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই ভোটে ‘চমকপ্রদ’ সাফল্য মিললেও শহরের নেতাদের গুরুত্ব ক্রমে আরও কমে যায় বলে দাবি তৃণমূলের নেতা, কর্মীদের একাংশের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলরও বলেন, ‘‘দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আসানসোলের নেতাদের গুরুত্ব দুর্গাপুরের নেতাদের থেকে বেশি, তা পুরভোটেই দলীয় কর্মীরা বুঝে গিয়েছিলেন। প্রচারে নেমে আমরা এখন তারই ফল পাচ্ছি।’’ কী ‘ফল’, জিজ্ঞাসা করতেই অন্য এক কাউন্সিলরের বক্তব্য, ‘‘আসলে প্রচারের জাঁকজমক রয়েছে। কিন্তু ‘টিম ওয়ার্ক’টা যেন ঠিক মতো হচ্ছে না।’’
এর উদাহরণ দিতে গিয়ে দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতা, কর্মীদের একাংশ আইএনটিটিইউসি-র অন্দরের কথা বলছেন। বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পরে আইএনটিটিইউসি-র সব কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। ২০১৮-র জুনে আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি হিসেবে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ, খাতায়-কলমে কংগ্রেস বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের নাম ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় আইএনটিটিইউসি-র প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীদের সঙ্গে বিশ্বনাথবাবুর অনুগামীদের দ্বন্দ্ব। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে দুই নেতাকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে মাঝেসাঝেই। কিন্তু দলের একাংশের মতে, দু’পক্ষের নিচুতলার অনুগামীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মিটছে না। এর প্রভাব পড়ছে প্রচারেও।
এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘পুরসভা ভোটে তৃণমূল সন্ত্রাস করে ভোট লুট করে জিতেছিল। লোকসভা ভোটেই ওঁদের পাশে যে মানুষ নেই, তা প্রমাণিত হবে।’’ যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাউন্সিলর থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতারা, সবাই এককাট্টা হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। কোনও খামতি নেই। হারের ভয়ে বিরোধীরা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’’