ভোট এলেই তপ্ত খণ্ডঘোষ

আলিপুর গ্রামের বছর পঞ্চান্নর কামরুল শেখের খুনের ঘটনা নিয়ে অবশ্য তৃণমূল-সিপিএমে চাপান-উতোর দেখা দিয়েছে। গ্রামের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, কামরুল তাঁদের দলের সমর্থক ছিলেন।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

খণ্ডঘোষ শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০০:৫৭
Share:

খণ্ডঘোষে সিপিএমের মিছিল। নিজস্ব চিত্র

ভোটের মরসুম মানেই রাজনৈতিক হানাহানি— খণ্ডঘোষে এটাই যেন চেনা ছবি। রাজ্য-রাজনীতিতে ক্ষমতার হাতবদল হলেও পুরনো এই ছবির পরিবর্তন নেই। ১২ মে ভোট বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনস্থ এই এলাকায়। ঠিক তার এক সপ্তাহ আগে, রবিবার খুনের ঘটনা ঘটেছে খণ্ডঘোষে।

Advertisement

আলিপুর গ্রামের বছর পঞ্চান্নর কামরুল শেখের খুনের ঘটনা নিয়ে অবশ্য তৃণমূল-সিপিএমে চাপান-উতোর দেখা দিয়েছে। গ্রামের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, কামরুল তাঁদের দলের সমর্থক ছিলেন। সিপিএম অবশ্য কামরুলকে তাঁদের সমর্থক বলে দাবি করেছে। দলের জেলা কমিটির সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘ওই গ্রামের তৃণমূলের একাংশ আমাদের সমর্থক কামরুলের পরিবারকে ভয়ের মধ্যে রেখেছেন।’’ ব্লক বা জেলা তৃণমূল যদিও জানিয়েছে, মৃত কামরুল শেখ সিপিএমের কর্মী ছিলেন।

সিপিএমের দাবি, নিহতের ছোট ছেলে পদার্থবিদ্যায় অনার্স নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সিপিএম করলে বর্তমান রাজ্য সরকার চাকরি দেবে না, কামরুলের পরিবারের লোকজনকে এই রকম বোঝানো হয়েছে। তাই তাঁরা কামরুল তৃণমূল সমর্থক ছিলেন বলে জানিয়েছে। তা ছাড়া, পাশের গ্রাম ওঁয়ারিতে ২০১৫ সালের জুনে গোষ্ঠী-সংঘর্ষে নিহত হন তিন জন। সেই নিহতদের এক জনের ভাই শেখ ফিরোজ রবিবারের ঘটনায় অভিযুক্ত। সিপিএমের এক নেতার দাবি, ‘‘ফিরোজ ওই ঘটনার পরে ১৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এ ছাড়া পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ৪৩ জনের নামে অভিযোগ করে। তাতে আলিপুর গ্রামের অনেকের নাম ছিল। তারাই কামরুলকে তৃণমূল সমর্থক বলে দাবি করে অপর গোষ্ঠীকে শায়েস্তা করতে চাইছে।’’

Advertisement

বছর চারেক আগে সেই গোষ্ঠী-সংঘর্ষের পরে পুলিশ জানিয়েছিল, খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েতের ‘দখল’ কার হাতে থাকবে সে নিয়েই অশান্তির সূত্রপাত। তার পরে অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে, নতুন পঞ্চায়েত গঠন হয়েছে। কিন্তু গোলমালে দাঁড়ি পড়েনি। গত নভেম্বরে খণ্ডঘোষ ব্লকের পর্যবেক্ষক উত্তম সেনগুপ্ত ও জেলা পরিষদ সভাধিপতি শম্পা ধাড়ার কাছে একটি স্মারকলিপি দেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। সেখানে কামরুল-খুনে মূল অভিযুক্ত শেখ হাসানুজ্জামান ওরফে টুটুলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, একশো দিনের কাজ না করে ব্যক্তিগত কাজে শ্রমিকদের ব্যবহার করা হচ্ছে। কেউ অনিচ্ছা জানালে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে। একশো দিনের কাজের সুপারভাইজারদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে এমন কিছু মানুষকে কাজ দেওয়া হচ্ছে, তাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এর পিছনে বিধায়কেরও মদত রয়েছে বলে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ।

২০১৬ সালে বিধানসভা ভোট শেষ হওয়ার পরে এই এলাকারই লোদনা গ্রামের দু’জন সিপিএম কর্মীকে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। মৃত শেখ ফজল হক ও দুখীরাম মণ্ডলের পরিজনেরা তৃণমূলের ৩০ জনের নামে থানায় অভিযোগ করেছিলেন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে তৃণমূল কর্মী শেখ ইউসুফ ও ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল কর্মী শেখ আম্বিয়া খুন হন।

তৃণমূল নেতা উত্তমবাবুর অবশ্য দাবি করেন, “দলের ভিতরে মান-অভিমান থাকে, সেটা আমরা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়েছি। খণ্ডঘোষে ভোট এলেই বাম জমানায় খুনের আতঙ্ক তৈরি হত। এখন মানুষ আর আতঙ্কের মধ্যে থাকেন না। শান্তির পরিবেশ ফিরে এসেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন