কঙ্কাল কারবার/২

বারবার ছাড়া পেয়ে যায় মাথা’রা

বহু বছর ধরে কঙ্কাল তৈরি ও পাচারের জন্য পরিচিত ভাগীরথী পাড়ের পূর্বস্থলী। পুলিশ ধরপাকড় চালালে ব্যবসার জায়গা বদলায়, কিছুদিন থমকেও থাকে ব্যবসা কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয় না কখনই। ধরা পড়ে না মূল পান্ডারাও। কেন এমন হাল, প্রশাসনই বা কী বলছে খোঁজ নিল আনন্দবাজার।  বহু বছর ধরে কঙ্কাল তৈরি ও পাচারের জন্য পরিচিত ভাগীরথী পাড়ের পূর্বস্থলী। পুলিশ ধরপাকড় চালালে ব্যবসার জায়গা বদলায়, কিছুদিন থমকেও থাকে ব্যবসা কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয় না কখনই। ধরা পড়ে না মূল পান্ডারাও। কেন এমন হাল, প্রশাসনই বা কী বলছে খোঁজ নিল আনন্দবাজার। 

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩৮
Share:

কঙ্কাল কারবার শুরু যাঁর হাত ধরে সেই মুক্তি বিশ্বাস ধরা পড়েছিলেন চার বার। প্রতি বারই ছাড়া পেয়ে যান।

Advertisement

বর্তমানে পূর্বস্থলীতে এই কারবারের মাথা হিসেবে যে দুই ভাইয়ের নাম সামনে আসে তাঁরাও বার তিনেক গ্রেফতার হয়েছেন। জামিনও পেয়ে গিয়েছেন।

বারবার অভিযুক্তদের ছাড়া পাওয়া, কারবার বন্ধ না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, যে এলাকায় কঙ্কাল তৈরি হয় সেখানে টেকা মুশকিল হয়ে পড়ে। দূষণ, অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগও দায়ের করা হয়। কিন্তু অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে ফের শুরু করে ব্যবসা।

Advertisement

পুলিশের যদিও দাবি, কঙ্কাল পাচার বা চুরির কোনও আলাদা আইন নেই। ফলে সাধারণ চুরির মামলা দিয়ে আদালতে তোলা হয় অভিযুক্তদের। তাতে জামিন পেতে অসুবিধে হয় না।

পূর্বস্থলীর একাধিক বাসিন্দার দাবি, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে যাতে জনমত না গড়ে ওঠে সে জন্য এলাকার বিভিন্ন সংগঠনের পিছনে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেন কঙ্কাল ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়াও কঙ্কাল পাচার, মৃতদেহের খোঁজ পাওয়ার জন্যও স্থানীয় অনেকের সঙ্গে যোগসাজশ থাকে বলে তাঁদের দাবি। শুধু স্থানীয় স্তরে নয়, যোগাযোগ থাকে ভিন জেলা, এমনকি রাজ্যেও। জানা গিয়েছে, তৈরি হওয়ার পর কঙ্কাল কিনে নিয়ে যায় হুগলি, হাওড়া-সহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন স্থানীয় ‘লিঙ্ক ম্যানে’রা। কখনও ট্রেনে, কখনও নদী পথে হাত ঘুরে কঙ্কাল পৌঁছে যায় ভিন রাজ্যেও। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা স্বীকার করেছে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও হাড়গোড় এবং কঙ্কালের কদর রয়েছে বিদেশে। নানা ওষুধ তৈরিতেও কাজে লাগে হাড়ের গুঁড়ো। ফলে মৃতদেহের চাহিদা থাকে। এমনকি, খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহ কঙ্কাল কারবারিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে বলে পুলিশের দাবি। কিন্তু এমন বিপজ্জনক পেশার কারবারিদের পাকাপাকি শাস্তির ব্যবস্থা নেই?

কালনা আদালতের আইনজীবীরা জানান, একসময় সিআইডি-এ কঙ্কাল কাণ্ডের তদন্তে নেমেছিল। তাতেও কিছু হয়নি।আদালতের সিনিয়র আইনজীবী গৌতম গোস্বামী বলেন, ‘‘কঙ্কাল চুরিতে গ্রেফতারের জন্য নির্দিষ্ট কোনও আইন নেই। ফলে পুলিশ চুরির মামলা দিয়েই আদালতে পাঠায়। তাতে জামিন মেলে সহজেই।’’

যদিও পুলিশের এক কর্তা জানান, যে হাড়গোড় উদ্ধার হয় তা থেকে মৃতদেহের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া গেলে মামলার জোর বাড়ে। খুনের প্রমাণ পেলে বা দেহ লোপাটের প্রমাণ পেলে তা কঙ্কাল পাচারের সঙ্গে জোড়া গেলে কারবারিদের কড়া শাস্তি হতে পারে।

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন