কমছে লাভ, বেলমালা তৈরিতে অনীহা

দিন পাল্টেছে। আগের মতো লাভ আর হয় না। বেলের মালা তৈরি করে আর পেট চলছে না। বাজারে মালা ভাল দামে বিক্রি হলেও তার সুফল তাঁদের কাছে পৌঁছচ্ছে না, অভিযোগ শিল্পীদের। সরকারের তরফে সাহায্য না পেলে এই পেশায় আর কত দিন থাকবেন, সে নিয়ে সংশয়ে তাঁরা।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৭ ০১:৪৯
Share:

এখনও মালা গড়ে কিছু পরিবার। নিজস্ব চিত্র

দিন পাল্টেছে। আগের মতো লাভ আর হয় না। বেলের মালা তৈরি করে আর পেট চলছে না। বাজারে মালা ভাল দামে বিক্রি হলেও তার সুফল তাঁদের কাছে পৌঁছচ্ছে না, অভিযোগ শিল্পীদের। সরকারের তরফে সাহায্য না পেলে এই পেশায় আর কত দিন থাকবেন, সে নিয়ে সংশয়ে তাঁরা।

Advertisement

দুর্গাপুর ব্যারাজের অদূরে বাঁকুড়ার গৌরবেড়া, শালগড়া, গোকুলমথুরা, নপাড়া, মেটালি, বড়জোড়া ইত্যাদি এলাকার মহিলারা বেলমালা তৈরি করেন কয়েক প্রজন্ম ধরে। তাঁরা জানান, সাধারণত ৩২০টি বেল কেনেন চারশো-সাড়ে চারশো টাকা দরে। এক গোছা মালা তৈরি করতে খরচ ১৫ থেকে ১৮ টাকা। গ্রামের মহাজন তা কেনেন ৬০-৬৫ টাকা দরে। মাসে এক এক জন ২০-২২টি গোছা বিক্রি করে নশো টাকার মতো লাভ করেন বলে জানান শিল্পীরা। কখনও লাভের অঙ্ক দাঁড়ায় সাতশো টাকার আশপাশে। কিন্তু তা দিয়ে আর চলছে না বলে জানান মহিলারা।

অথচ, মালা তৈরির পিছনে পরিশ্রম কম নয়। শালগাড়ার ভদ্রাবতী দাস, চায়না দাসেরা জানান, প্রথমে বেলটি দু’টুকরো করা হয়। তার পরে শাঁস বের করে নির্দিষ্ট যন্ত্র দিয়ে খোলটি কেটে বিভিন্ন আকারের পুঁতি তৈরি হয়। তা দিয়েই বানানো হয় মালা। প্রতিটি মালা ১৯ ইঞ্চির মতো লম্বা হয়। দীর্ঘ দিন ধরে ঝুঁকে কাজ করতে করতে অনেক শিল্পী শিরদাঁড়ার সমস্যায় ভোগেন বলে দাবি। অথচ, চায়নাদেবীর প্রশ্ন, ‘‘মালা তৈরি করে রোজগার হয় সামান্য। আমরা না থাকলে বেল মালা কে বানাবে?’’ একই কথা বলেন স্থানীয় শিল্পী বিশ্বনাথ দাসও।

Advertisement

শিল্পীদের কাছ থেকে এই মালা কেনেন প্রণব দাস। তিনিই মহাজন। তাঁরও দাবি, ‘‘পাইকারি হারে বিক্রি করি। খুব বেশি লাভ আমাদেরও হয় না।’’ গ্রামের শিল্পী বা মহাজনেরা তেমন দাম না পেলেও এই ধরনের মালার বাজারদর কিন্তু বেশ চড়া। শিল্পীদের দাবি, নবদ্বীপ, এমনকী বিদেশের বাজারে চড়া দামে বিক্রি হয় বেল মালা। সেই লাভের গুড় অবশ্য পিঁপড়েতে খায় বলে অভিযোগ।

শিল্পীদের দাবি, সরকারি ভাবে এই শিল্পকে বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ না করা হলে, এই পেশা অচিরেই হারিয়ে যাবে। স্থানীয় ঘুটগড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান তারাপদ দাসের দাবি, এক বার বেল মালা, বঁড়শি, শাঁখা-পলার শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা করার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও নানা কারণে তা সফল হয়নি। যদিও বাঁকুড়া জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মৌ সেনের দাবি, ‘‘এই শিল্পীদের সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন