হল্লোড়: তিলকডাঙায় উৎসবে মেতেছে পড়ুয়ারা। ছবি: বিকাশ মশান
মজ হুই কানা! মজ হুই কানা!
টিফিনের প্যাকেট হাতে ছুটে বেড়াচ্ছে আবির মাখা মুখগুলো। মাদল, করতালের তালে মেতে উঠেছে কচিকাঁচারা। যোগ দিয়েছেন বয়স্করাও। সবার মুখেই এক কথা, মজ হুই কানা! অর্থাৎ, খুব মজা হচ্ছে।
কাঁকসার তিলকডাঙা গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় সোমবার সকাল থেকে ছবিটা ছিল এই রকমই। দুর্গাপুরের বাসিন্দা দীপক মণ্ডলের উদ্যোগে গোটা গ্রাম মাতল দোল উৎসবে।
ছোট থেকে শারীরিক সমস্যা ছিল ছেলে অনির্বানের। বছরখানেক আগে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ে তার মৃত্যু হয়। তবে সেই স্মৃতি নিয়ে মুষড়ে থাকতে নারাজ দীপকবাবু। শোক ভুলতে এই আদিবাসী পাড়ার শিশুদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন তিনি। খুঁজে নিয়েছেন বাঁচার আনন্দ।
গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে তিলকডাঙার স্কুলের পড়ুয়াদের নানা ভাবে সাহায্য করছেন একটি সংস্থার কর্মী দীপকবাবু। স্কুলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা, নববর্ষে নতুন পোশাকআশাক, পড়াশোনার জিনিসপত্র কিনে দেওয়া— উদ্যোগী হয়েছেন বিভিন্ন বিষয়ে। এ বার গ্রামে আয়োজন করলেন দোল উৎসবের। জঙ্গলের মাঝে এই আদিবাসী গ্রামে পাশাপাশি রয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। গ্রামের ছেলেমেয়েরা সেখানেই পড়তে যায়। এ দিন দু’জায়গাতেই উৎসবের আয়োজন করেন তিনি।
টিফিন বিলি করছেন দীপক মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
সকাল-সকাল আবিরের পাশাপাশি পাউরুটি, কলা, মিষ্টি, লাড্ডু, সাবান, শ্যাম্পু নিয়ে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন দীপকবাবু। গ্রামের মেয়েরা জঙ্গলের পলাশ ফুল তুলে মালা গেঁথে রেখেছিলেন। কেউ কেউ পলাশের আবির বানিয়েছেন কয়েক দিনের চেষ্টায়। নাচের জন্য বাঁশ কেটে কাঠি বানিয়ে রাখা ছিল। সকাল ১০টা নাগাদ শুরু হয় শোভাযাত্রা। কচিকাঁচাদের সঙ্গে পা মেলান বড়রাও। গ্রাম ঘুরে স্কুল চত্বরে এসে শুরু হয় আবির খেলা। গ্রামের ৫৪টি পরিবারই মেতে ওঠে তাতে।
স্কুলের শিক্ষিকা করুণা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ১৪ বছর ধরে এই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। আগে শালগাছের তলায় ক্লাস হত। তার পরে সরকারি উদ্যোগে ঘর তৈরি হয়। চালু হয় মিড-ডে মিল। স্কুলছুটের সংখ্যা তলানিতে নেমে আসে। তিনি বলেন, ‘‘দীপকবাবুর উদ্যোগে বাচ্চাদের মধ্যে পড়াশোনা নিয়ে উৎসাহ আরও বেড়েছে। এ বার দোল উৎসব তো ওদের কাছে উপরি পাওনা!’’
নানা রঙের আবির দেখে খুশি ধরে না ছোট-বড় সকলেরই। হাওয়ায় আবির উড়িয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছিল প্রমীলা মুর্মু, সুরজিৎ মুর্মু, মন্দিরা সোরেনরা। এখানকার প্রাক্তন ছাত্রী কল্যাণী মুর্মু এই বছর মাধ্যমিক দিয়েছে। পলাশ সংগ্রহে মুখ্য ভূমিকা ছিল তার। সে বলে, ‘‘কাকু (দীপকবাবু) যেন একরাশ আনন্দ নিয়ে এসেছে আমাদের কাছে।’’