বিজেপি-র অবরোধে যানজট ২ নম্বর জাতীয় সড়কে। নিজস্ব চিত্র
কাউকে আটকানো হয়েছে বুথের খানিকটা আগেই। কাউকে আবার বুথে শুধু আঙুলে কালি লাগিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্গাপুরে বুথফেরত অনেকেই এমন দাবি করলেন রবিবার।
বুথে ঢোকার মুখে বিরোধী দলের সমর্থক ভোটারদের আটকে দেওয়া, পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া, ইভিএমের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ভয় দেখানো, ভোটারের আঙুলে কালি লাগিয়েই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া— পরিস্থিতি অনুযায়ী নানা জায়গায় এমন নানা পদ্ধতিতে বহিরাগতরা ভোট পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। একই রকম অভিযোগ শোনা গিয়েছে ভোটারদের অনেকের মুখেও।
বেনাচিতির একটি বুথ থেকে বেরিয়ে এক ভোটারের অভিযোগ, ‘‘ইভিএমের পাশে তিন জন অচেনা যুবক দাঁড়িয়েছিল। আমি প্রতিবাদ করতেই অবশ্য সরে গেল। কিন্তু আমি বেরিয়ে আসতেই আবার গিয়ে ঢুকেছে।’’ আইনস্টাইন রোডের একটি বুথে সপরিবারে ভোট দিতে গিয়েছিলেন চণ্ডীদাস এলাকার এক ব্যবসায়ী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তৃণমূলের সমর্থক। আমায় ঢুকতেই দিল না! বাইরে থেকে সব এসেছে। আমাদের তো চেনেই না!’’
সিপিএমের অভিযোগ, শনিবার রাতে ডিএসপি টাউনশিপ, এমএএমসি-সহ নানা এলাকায় রাতভর দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে। বোমা ছোড়া, ভোটারদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ দিন ভোট শুরুর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই অধিকাংশ বুথ থেকে বিরোধী পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের আরও দাবি, অশান্তি এড়াতে প্রায় চারশো ভোটকর্মীও বুথ ছেড়ে চলে যান।
ভোটের আগে বহিরাগতদের রুখতে শহরে প্রতিরোধের ডাক দিয়ে গিয়েছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সাংসদ মহম্মদ সেলিম-সহ সিপিএম নেতারা। কিন্তু রবিবার কার্যক্ষেত্রে তেমন কিছু দেখা যায়নি। দলের কর্মীদেরই একাংশের দাবি, প্রার্থীকে মারধর, ক্যাম্প অফিসে হামলা, ভোট দিতে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটলেও নেতারা রাস্তায় নামেননি। তাঁরা পার্টি অফিসে বসে ১৬ অগস্ট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন বলে ওই কর্মীদের ক্ষোভ।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘প্রায় ১৫ হাজার সশস্ত্র দুষ্কৃতীকে বাইরে থেকে নিয়ে এসেছিল শাসকদল। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কারও পক্ষে কি তাদের আটকানো সম্ভব? মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া কাজের কথা নয়।’’
বিজেপি অবশ্য সহজে হাল ছাড়েনি। সকালে তাদের কয়েকজন প্রার্থীকে নিগ্রহ, মহিলা পোলিং এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মেনগেট এলাকায় বুথ দখলের চেষ্টা ও বোমাবাজির অভিযোগ তুলে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিজেপি। সে নিয়ে পুলিশের সঙ্গে গোলমাল বাধে। পরে গাঁধী মোড়ে ফের এক দফা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে তারা। দুপুরে মহকুমা রিটার্নিং আধিকারিকের কাছে বিক্ষোভ দেখিয়ে স্মারকলিপি দেয় বিজেপি।
বিজেপি-র জেলা সভাপতি তাপস রায় বলেন, ‘‘ভোটের নামে সকাল থেকে প্রহসন হল। পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার। প্রতিবাদে আমরা দুপুর ১টা থেকে ভোট বয়কট করেছি।’’ কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা বিকেলে প্রার্থী প্রত্যাহার করেছি।’’
তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় অবশ্য তাঁদের কর্মীরাই আক্রান্ত হয়েছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এক কর্মী জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দুর্গাপুরের মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন।’’