পুরভোটের আগে এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে শাসক দল।— প্রতীকী ছবি।
পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরনোর এক দিন আগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে মেয়রকে চিঠি পাঠালেন এক মেয়র পারিষদ। মেয়র পারিষদ সভা ও সাধারণ সভায় মেয়র ‘অসাংবিধানিক’ আচরণ করেছেন, মেয়াদ শেষের আগে তড়িঘড়ি নিয়ম ভেঙে এক ইঞ্জিনিয়ারকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে— চিঠিতে এমনই একগুচ্ছ অভিযোগ করেছেন তিনি।
পুরসভায় ২০১২ সালে তৃণমূলের বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে জল সরবরাহ দফতরের মেয়র পারিষদ করা হয় প্রমোদ সরকারকে। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে দলের ভরাডুবির পরে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দফতরহীন মেয়র পারিষদ হিসেবে রাখা হয়। জল সরবরাহ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, তার পর থেকেই প্রমোদবাবুর সঙ্গে পুরসভায় ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। বুধবার পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়। তার আগের দিন প্রমোদবাবু মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে একটি চিঠি দেন। তাতে তাঁর অভিযোগ, ২৩ জুন পুরসভার ২৫২তম সাধারণ সভায় এক ইঞ্জিনিয়ারের পদোন্নতি নিয়ে আপত্তি তুললে মেয়র তাঁকে বাধা দেন ও বেরিয়ে যেতে বলেন। প্রমোদবাবুর অভিযোগ, ‘‘মেয়র পারিষদ থাকাকালীন ওই ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। তিনি অদক্ষ, দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁর জন্য পুরসভার বহু অর্থ অপচয় হয়েছে। এমনকি মৃতের নামেও জলের সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।’’ তাঁর দাবি, চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে তিনি বক্তব্য রাখতে উঠেছিলেন। সভা থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র চেয়ারম্যানের আছে। তাছাড়া মেয়র পারিষদ সভায় অনুমোদন না নিয়েই পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়টি সাধারণ সভায় পেশ করে দেন মেয়র।
পুরভোটের আগে এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে শাসক দল। বিদায়ী মেয়র অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘চিঠি আমি হাতে পাইনি। তবে উনি (প্রমোদবাবু) প্রায় সাড়ে তিন বছর জল দফতরের মেয়র পারিষদ ছিলেন। যদি কোনও অভিযোগ ছিল, তখন কেন বলেননি?’’ বিদায়ী ডেপুটি মেয়র অমিতাভবাবুর আবার অভিযোগ, ‘‘আমি জল দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে দেখেছি, মেয়র পারিষদ থাকাকালীন প্রমোদবাবু বহু অনিয়ম করেছেন। সে জন্য পুরসভার বহু আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’’ তৃণমূলের একাংশের আবার দাবি, পুরভোটে এ বার তাঁকে প্রার্থী করা হবে না বুঝে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এমন চিঠি পাঠিয়েছেন প্রমোদবাবু। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে মেয়রের অসাংবিধানিক কাজের বিরোধিতা করেছি।’’
সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘আমরা বরাবর বর্তমান পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দূর্নীতি, অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছি। ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। ভোট যত এগিয়ে আসবে তত এমন ঘটনা আরও প্রকাশ্যে আসবে।’’