Bardhaman

টোপ দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে ধান বিক্রির লেনদেন, ধৃত ৩

পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম থেকে গলসির একটি চালকলের দুই কর্মী ও এক ধান ব্যবসায়ী বা ‘ফড়েকে’ গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৩ ০৯:৪৭
Share:

ধান বিক্রি নিয়ে চিন্তিত চাষীরা। — ফাইল চিত্র।

সহায়ক মূল্যে ধান কেনায় ‘ফড়েদের’ দৌরাত্ম্য আটকাতে ও প্রকৃত চাষিরাই যাতে বিক্রির সুযোগ দিতে একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছিল রাজ্যের খাদ্য দফতর। কিন্তু সরকারি অনুদানের টোপ দিয়ে চাষিদের নামে ‘জ়িরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট’ খুলে সেখানে ধান বিক্রির টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠল মন্তেশ্বরে। সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা সুদীপ দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত হবে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ধৃতদের কাছ থেকে ৮ জনের ৩৮টি ডেবিট কার্ড মিলেছে। ল্যাপটপ, মোটরবাইক ও নগদ ৫০ হাজার টাকাও উদ্ধার হয়েছে।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম থেকে গলসির একটি চালকলের দুই কর্মী ও এক ধান ব্যবসায়ী বা ‘ফড়েকে’ গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা মোটরবাইকে করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ। এ দিন ধৃতদের মধ্যে স্থানীয় কামারশাল গ্রামের বাসিন্দা, চালকল কর্মী সঞ্জয় ঘোষকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠায় কালনা আদালত। ওই চালকলেরই আর এক কর্মী, দেনুয়া গ্রামের শ্রীকান্ত ঘোষ ও ‘ফড়ে’ বলে পরিচিত আসানপুরের ঋজু ঘোষকে (মঙ্গলময়) জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

মন্তেশ্বর থানায় সুদীপ দাস নামে ওই প্রান্তিক চাষি অভিযোগ করেছেন, ঋজু ‘জ়িরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট’ খোলার জন্য তাঁর ও বাবা-মায়ের নথি নিয়েছিল। বাবা নীলমণি দাস, মা সূচনা দাসকে বলা হয়েছিল, এই অ্যাকাউন্ট খুললে সরকারি অনুদান পাওয়া যাবে। সে কারণে নথিপত্র দেন তাঁরা। সুদীপের দাবি, ‘‘বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার পর থেকে দেখি, মোটা অঙ্কের টাকা ঢুকছে আর কিছুক্ষণের মধ্যে তুলে নেওয়া হচ্ছে। মোবাইলে তার মেসেজও আসে।’’ তাঁর দাবি, খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের মতো অনেকের অ্যাকাউন্টে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির টাকা ঢুকেছে। ঋজু নিজেকে গলসির নকুলেশ্বর চালকলে অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মী বলে পরিচয় দেন। সুদীপের অভিযোগ, চালকলের আরও কেউ এই কাজে যুক্ত থাকতে পারেন। যদিও গলসির ওই চালকলের অন্যতম কর্তা গোপাল আগরওয়ালের দাবি, ‘‘আমাদের চালকলে দু’চার ঘণ্টা কাজ করে চলে যেত ওই ব্যক্তি। তার পরে কী করত, জানা সম্ভব নয়।’’

খাদ্য দফতরের দাবি, এ বার পূর্ব বর্ধমানে গত মরসুমের চেয়ে ১৭ হাজার টন বেশি ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ধান বিক্রি নিয়ে ‘ফড়ে’ বা চালকল মালিকেরা যাতে ‘কারচুপি’ করতে না পারেন, সে জন্য অনলাইনে লেনদেন, জমির পরিমাণ দেখে উৎপাদিত ধান নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেও অনেক চাষিই ধান্যক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে যাননি। তাঁদের নামে অ্যাকাউন্ট খুলেই কারচুপি হয়েছে, অনুমান কর্তাদের।

দুর্নীতি যে হয়েছে, সে কথা মেনে নিচ্ছে চালকল মালিক সংগঠন। বর্ধমান চালকল মালিক সংগঠনের সভাপতি আব্দুল মালেকের দাবি, ‘‘খাদ্য দফতরের একাংশ ও ফড়েদের যোগসাজসেই প্রান্তিক কৃষকেরা প্রতারিত হয়েছেন বলে মনে করছি।’’ জেলা খাদ্য দফতরের সহকারী খাদ্য নিয়ামক বাবুয়া সর্দার অবশ্য কোনও দুর্নীতির কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের কাছ থেকে প্রাথমিক রিপোর্ট নেওয়া হবে। তার পরে বিভাগীয় স্তরে খতিয়ে দেখব। কোনও গরমিল পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন