এই জায়গায় আক্রান্ত হন মহিলা। কালনার রংপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
ফের বাড়িতে ঢুকে এক মহিলাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল কালনায়। হাটকালনা পঞ্চায়েতের রংপাড়া এলাকায় সোমবার সন্ধ্যায় এক দুষ্কৃতী তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ সরিফা বিবি নামে এক মহিলার। তিনি জানান, চিৎকার শুনে তাঁর মেয়ে এসে পড়ায় পালিয়ে যায় আততায়ী।
৩১ মার্চ এই পঞ্চায়েতেরই ধর্মডাঙা এলাকায় এক তরুণীর গলায় চেন পেঁচিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। সেক্ষেত্রেও তরুণীর চিৎকারে আততায়ী পালিয়ে যায়। কালনা ও মেমারি এলাকায় অজ্ঞাত আততায়ীর হাতে একের পর এক মহিলা আক্রান্ত হলেও কোনও কিনারা হয়নি। এর জেরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এলাকায়।
রংপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে বাড়ি ওই মহিলার। আশপাশে রয়েছে আরও কয়েকটি বাড়ি। মহিলা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়িতে তাঁতের সানা তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। গরমের জন্য ঘরের দরজা খুলে কাজ করছিলেন। বাড়ির একটি ঘরে তাঁর বছর বারোর মেয়ে ফারমিনা খাতুন টিভি দেখছিল। পেশায় রাজমিস্ত্রি স্বামী হাসমত মণ্ডল বাড়িতে ছিলেন না। সরিফা বিবির অভিযোগ, ‘‘সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ আচমকা একটি ছায়া দেখে পিছনে ঘুরে দেখি, এক জন দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার হাতে একটা দণ্ডের মতো জিনিস। আমি কিছু বলার আগেই সে আমার গলা টিপে ধরে। কিছু একটা হয়েছে বুঝে মেয়ে বেরিয়ে এসে এই কাণ্ড দেখে চিৎকার শুরু করে। তখনই সে পালিয়ে যায়।’’ মহিলা ও তাঁর মেয়ের দাবি, দুষ্কৃতীরা দু’জন এসেছিল। এক জন বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। ঘটনার খবর পেয়ে কালনা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
বছর তিনেক আগে কালনা মহকুমার নানা এলাকায় বাড়িতে একা থাকা তিন মহিলার উপরে হামলা হয়। গলায় চেন পেঁচিয়ে খুন করা হয় দু’জনকে। এক জন বেঁচে যান। তার পরে দীর্ঘ দিন এই রকম দুষ্কর্ম বন্ধ থাকলেও গত ২৭ জানুয়ারি কালনার আনুখালে একই ভাবে খুন করা হয় এক মহিলাকে। তার পরে তিন জনকে একই ভাবে খুনের চেষ্টা করা হয়েছে। মেমারি ও হুগলির পাণ্ডুয়াতেও বাড়িতে একা থাকা মহিলাদের উপরে হামলা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি মেমারিতে একই দিনে খুন হন দুই প্রবীণা। তবে সেক্ষেত্রে চেন ব্যবহারের প্রমাণ মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
জেলার পুলিশকর্তাদের অনুমান, মেমারি, কালনা, পাণ্ডুয়া এলাকার পথঘাট আততায়ীর ভাল চেনা। প্রত্যন্ত এলাকায় দুষ্কর্ম করেই সে দ্রুত মোটরবাইকে পালিয়ে যাচ্ছে। আততায়ীর ছবি আঁকানো হয়েছে। তা দেখানো হয়েছে বহু মানুষকে। গ্রামে-গ্রামে সতর্ক করা হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় চলছে নাকাবন্দি। তবে এখনও তার খোঁজ মেলেনি।
রংপাড়ায় ঘটনাটির সঙ্গে চেন পেঁচিয়ে খুনে যুক্ত আততায়ীই জড়িত কি না, সে নিয়ে সংশয়ে পুলিশ। কালনার এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘এই ঘটনাটির সঙ্গে আমরা আগের ঘটনাগুলির অনেক অমিল পেয়েছি। তবে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ যদিও এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা দীপ্তি দাস, আলো হালদারেরা বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে পুরুষেরা কাজে বেরিয়ে গেলে ভয়ে দরজা বন্ধ রাখছি। সব সময় চেন-কিলারের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। পুলিশ তাকে ধরতে না পারা পর্যন্ত শান্তি নেই।’’