চোর সন্দেহে গণপিটুনির নালিশ

পুলিশ জানায়, ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সকালে। ওই যুবক শীতলপুরের তুলসি মহল্লায় ভিক্ষা করছিলেন। সঙ্গে ছিল একটি ঝোলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কুলটি ও জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের সংস্থান রাখা হয়েছে এ রাজ্যের ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল (প্রিভেনশন অব লিন্চিং) বিল, ২০১৯’-এ। কিন্তু কড়া শাস্তির হুঁশিয়ারি থাকলেও ফের গণপিটুনির অভিযোগ সামনে এল। এ বার ঘটনাস্থল, পশ্চিম বর্ধমানের কুলটি থানার শীতলপুর। সাঁকতোড়িয়া ফাঁড়ির পুলিশ জানায়, চোর ও ছেলেধরা সন্দেহে এক যুবককে মারধর করা হয়েছে। তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। গণপিটুনিতে অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশিও চলছে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সকালে। ওই যুবক শীতলপুরের তুলসি মহল্লায় ভিক্ষা করছিলেন। সঙ্গে ছিল একটি ঝোলা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন জানান, ‘অপরিচিত’ ওই ভিক্ষাজীবীকে দেখেই আশপাশের কয়েক জন তাঁকে ঘিরে ধরেন। তার পরে জনতা ওই যুবকের কাছে জানতে চায়, ‘তুই কোথা এসেছিস? এখানে কী করছিস?’ যুবক উত্তর দেওয়ার আগেই কয়েকজন মারমুখী হয়ে ওঠেন। যুবক পালানোরও চেষ্টা করেন। সেই সময়ে প্রায় ৩০ জন মিলে চড়াও হন ওই যুবকের উপরে। কয়েক জনকে বাঁশের লাঠি হাতেও মারধর করতে দেখা যায়। চলে চড়, কিল, ঘুসিও।

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিনিট দশেকের মধ্যেই ফাঁড়িতে এলাকাবাসীই ‘গণপিটুনির’ খবর দেন। খবর পেয়ে লাগোয়া এলাকায় থাকা পুলিশের টহলদার গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ততক্ষণে জনতা লাগোয়া একটি ফাঁকা ঘরে যুবককে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে দিয়েছে। পুলিশ গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করে ইসিএলের সাঁকতোড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে, তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট জানায়, ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাঁর কাছ থেকে মেলেনি চুরির কোনও সামগ্রীও।

পাশাপাশি, এ দিন একটি ভিডিয়ো ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় ‘ভাইরাল’ হয়। আনন্দবাজার সে ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। তাতে দেখা গিয়েছে, এক যুবককে কয়েক জন রাস্তায় ফেলে চড়-থাপ্পড় মারছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন ও ওই যুবককে উদ্ধার করেন। জামুড়িয়া থানার শ্রীপুর ফাঁড়ির পুলিশ জানায়, ভিডিয়োটি নর্থব্রুক কোলিয়ারি মোড় এলাকার। ‘আক্রান্ত’ যুবককে আখলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। সম্ভবত, মোটরবাইক চোর ও ছেলেধরা সন্দেহে ওই যুবককে আটকেছিল জনতা, অনুমান পুলিশের। পুলিশ জানায়, ভিডিয়োটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গণপিটুনির ঘটনা বোঝা গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর বাঁটুল রজক বলেন, ‘‘আমিই পুলিশে খবর দিয়েছিলাম। আইন যেন কেউ নিজের না হাতে না তোলেন, সে বিষয়ে আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে।’’

কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘বারবার প্রচার করা হচ্ছে, কোথাও কোনও অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে বলে মনে হলে কেউ যেন নিজের হাতে আইন না তুলে নেন। তেমন হলে পুলিশে খবর দিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন