তারের জালে বাজার, রান্না সরু গলিতেই

বিদ্যুতের তারের ফাঁসের ভিতর দিয়ে ঝুলছে সিলিং ফ্যান। মার্কেটের ভিতরেই হোটেল, চায়ের দোকান। গ্যাসের আগুনে রান্না হচ্ছে সেখানে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩৮
Share:

জট: বর্ধমানের একটি মার্কেটের গায়ে বিদ্যুতের তার। ছবি: উদিত সিংহ

বিদ্যুতের তারের ফাঁসের ভিতর দিয়ে ঝুলছে সিলিং ফ্যান। মার্কেটের ভিতরেই হোটেল, চায়ের দোকান। গ্যাসের আগুনে রান্না হচ্ছে সেখানে। কিন্তু অগ্নি নির্বাপণের জন্য ব্যবস্থা তেমন কিছু নেই। বর্ধমানের নানা বাজারে ‘মরণফাঁদ’ তৈরি হয়ে রয়েছে, অভিযোগ ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতাদের।

Advertisement

কলকাতার বাগড়ি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ছবি দেখে বর্ধমান শহরের বিসি রোডের বেশ কয়েকটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। তাঁরা মেনে নিচ্ছেন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার কোনও বালাই নেই। ‘সচেতন’ হওয়ার বদলে বাজারের বিভিন্ন রাস্তার উপরে দোকান খুলে বসে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। একে অপরিসর রাস্তা, তার উপরে দোকান বসে যাওয়ায় ক্রেতাদের ঢুকতে-বেরোতে সমস্যা হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, মালিকেরা তো বটেই, বাজারগুলিতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য পুরসভা বা দমকলেরও পা পড়ে না। তাই বাজারের ভিতরে ছোট পরিসরেও ত্রিপল খাটিয়ে জুতো-ব্যাগের পসরা সাজানো হয়েছে। তার মাথার উপরে রয়েছে মাকড়সা জালের মতো তার। মাথার উপর ঘুরছে ফ্যানও।

শহরের কার্জন গেটের পাশ থেকে বাঁ দিক দিয়ে হেঁটে অনিতা সিনেমার গলি পর্যন্ত পরপর তিনটি বাজার রয়েছে। তার মধ্যে কল্যাণী মার্কেটে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বড় ওষুধের পাইকারি দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, এই মার্কেটে নতুন ও পুরনো ভবন মিলিয়ে শ’দেড়েক দোকান রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি হয়। কিন্তু বাজারের অবস্থা তথৈবচ। ব্যবসায়ী সমিতির অভিযোগ, বাজারের ভিতরে হোটেল চলছে। গ্যাস জ্বেলে রান্না হচ্ছে। তাঁরা জানান, ১৯৯০ সালে পুরসভার কাছ থেকে ৯৯ বছরের ‘লিজ’ নিয়ে বাজারটি তৈরি হয়। মার্কেটের ভিতর ভূগর্ভস্থ জলাধার থাকলেও তাতে কেউ জল দেখেননি। ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিসিডিএ-র বর্ধমান অঞ্চল সভাপতি অসিত রায় বলেন, ‘‘দমকল ঢোকার মতো পরিস্থিতি নেই।’’

Advertisement

এই মার্কেটের পাশেই রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল। সে কথা মাথায় রেখে বাজারে অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, দাবি করেন বাজার সমিতির সম্পাদক মৃণাল তা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অগ্নিসুরক্ষায় জোর দেওয়ার বদলে হোটেল খুলে গেল!’’ ওই বাজারের কর্ণধার মৃণাল চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘এটা তো আমার একার বিষয় নয়। যৌথভাবে সমস্যা মেটাতে হবে। তবে অগ্নিসুরক্ষা মেনে বেশ কিছু নিয়ম জারি রয়েছে বাজরে।’’

শহরের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার দত্ত সেন্টার। প্রায় ১৩০টি দোকান রয়েছে সেখানে, যার অধিকাংশই বস্ত্রবিপণি। এ ছাড়া ওষুধ, জুতো, ব্যাগের দোকান রয়েছে। সে সবের আশপাশে রয়েছে খোলা তার। গোটা বাজার জুড়েই মাকড়সার জালের মতো তার। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ছাদ দিয়ে জল পড়ে। খোলা তারে জল লাগায় মাঝেমধ্যেই আগুনের ফুলকি দেখা যায়। কোনও দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটলে কী হবে, জানা নেই ব্যবসায়ীদের। তাঁদের অভিযোগ, অগ্নিসুরক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই। তার উপরে মার্কেটে রয়েছে দু’টি চায়ের দোকান। ওষুধ ব্যবসায়ী দেবাশিস মল্লিকের কথায়, ‘‘ভূগর্ভস্থ জলাধার তৈরি ও বিদ্যুতের তার ঠিক করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। কলকাতার ঘটনায় আমাদের আতঙ্ক বেড়েছে।’’ এই বাজারের ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক অরুণকান্তি গণের দাবি, ‘‘একটি সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে। কিন্তু আগুন লাগলে সেটির জল এত বড় বাজার নেভানো যাবে না।’’

কার্জন গেট লাগোয়া বৈদ্যনাথ কাটরা বাজারের অবস্থাও ভয়াবহ, জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারের ভিতরে ও বাইরে যাওয়ার রাস্তা এতটাই সরু যে, দমকলের কর্মীরা বা জলের পাইপ পৌঁছবে কি না সন্দেহ। এখানেও কোনও অগ্নিসুরক্ষার বালাই নেই। বাজারের মধ্যে চলছে চায়ের দোকান থেকে রেস্তোরাঁ।

পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘ওই সব বাজারের বিষয়ে আমাদের আইনি অধিকার নেই। তবে দায়িত্ব রয়েছে।’’ সেই দায়িত্ব পালন কতটা পালন হয়েছে? স্বরূপবাবুর বক্তব্য, ‘‘যা বলার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল খোকন দাস বলবেন।’’ খোকনবাবুর কথায়, ‘‘আমরা ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছি। ব্যবসায়ী থেকে মালিক, সবাইকে সচেতন হতে হবে।’’ দমকলের বর্ধমানের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা এখন হাসপাতাল নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। সেই কাজ মেটার পরে বাজারগুলি ঘুরে দেখে সুরক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, জানিয়ে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন