বৈঠক হোক বা কোনও কর্মসূচি, পুরবোর্ডের যে কোনও সিদ্ধান্তের খবর পৌঁছে দিতে আলাদা ভাবে প্রত্যেকের কাছে চিঠি পাঠাতে হয়। সেই সংখ্যা কম নয়, ১০৬ জন। সে জন্য সময় লাগে, দরকার হয় কর্মীর। কখনও-কখনও চিঠি সময় মতো না পাওয়ার অভিযোগও ওঠে। এই সব সমস্যা এড়াতে সব কাউন্সিলরকে ল্যাপটপ উপহার দেওয়া হবে, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আসানসোল পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই পদক্ষেপেরও বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুরসভার কিছু বিরোধী কাউন্সিলর। তাঁদের দাবি, শহরে উন্নয়নের কাজ ঠিক মতো করা হচ্ছে না। কাজের বরাদ্দ মিলছে না। আগে সে দিকে নজর দেওয়া হোক, ল্যাপটপ নিয়ে ভাবা হোক পরে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির পৌরহিত্যে পুরভবনে একটি বৈঠক হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কাজের সুবিধের জন্য ১০৬ জন কাউন্সিলরকেই ল্যাপটপ দেওয়া হবে। তা ব্যবহার করা শেখানোর জন্য তিন দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে বলে ঠিক হয়। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, কোনও বৈঠক ডাকতে হলেও কাউন্সিলরদের কাছে চিঠি পাঠাতে হয়। সে জন্য যেমন কর্মী নিয়োগ করতে হয়, তেমনই গাড়ির তেল খরচ হয়। খরচ ও সময় বাঁচাতেই এই পদক্ষেপ। ডেপুটি মেয়র তবসসুম আরা জানান, পুজোর আগেই সবাইকে ল্যাপটপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শাসকদলের কয়েক জন কাউন্সিলর জানান, পুরবোর্ডের তরফে কাউন্সিলরদের নিজের ওয়ার্ডে উন্নয়নের কাজ করার জন্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। এর পরে আর নতুন করে কোনও কাজে খরচের টাকা মেলেনি। এর ফলে এলাকাবাসীর প্রশ্নের মুখে পড়ে দলের কাউন্সিলরদের মধ্যেও উষ্মা তৈরি হচ্ছে বলে তৃণমূলের নানা সূত্রের দাবি। এই অবস্থায় তাঁদের ক্ষোভ দূর করতেই পুজোর আগে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, মনে করছেন অনেক কাউন্সিলর।
কিন্তু ল্যাপটপ নেওয়ার ব্যাপারে বেঁকে বসেছেন বিরোধী কিছু কাউন্সিলর। তাঁদের দাবি, পুর এলাকায় অনেক কাজ পড়ে রয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ সে দিকে নজর দিচ্ছেন না। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা জানাচ্ছেন, আদালতের অদূরে শৌচাগার বন্ধ পড়ে রয়েছে, চালু করা হচ্ছে না। রবীন্দ্রভবনের উত্তরে বাসস্টপে, মনিমালা বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে আবর্জনা ফেলার জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা জঞ্জাল সাফ করা হচ্ছে না। দুগর্ন্ধে পথচলতি মানুষের হাঁটা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিরাপুরের সামনে একটি পার্কে আলো জ্বলে না। জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ পুর এলাকায় সাফাইয়ের কাজকর্ম হয় না বললেই চলে। সে নিয়ে মাঝেমাঝেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ হচ্ছে এলাকায়। এই পরিস্থিতিতে কাউন্সিলরদের ল্যাপটপ দেওয়ার বদলে পরিষেবার কাজে নজর দিলে নাগরিকদের মঙ্গল, দাবি ওই বিরোধী কাউন্সিলরদের।
সিপিএম কাউন্সিলর তাপস কবির বক্তব্য, “ল্যাপটপের থেকে অনেক বেশি প্রয়োজন স্তব্ধ হয়ে যাওয়া উন্নয়নের কাজ আবার চালু করা। কারণ, পরিষেবার প্রশ্নে কাউন্সিলররা নাগরিকদের কাছে মুখ দেখাতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে কাউন্সিলদের হাতে নতুন ল্যাপটপ দেখলে আরও বেশি বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হবে।’’ বিরোধী কাউন্সিলর গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়, পবিত্র মাজি, অনির্বান দাসেরা দাবি করেন, অন্তত ২৫ হাজার টাকা দামের ল্যাপটপ দেওয়া হলেও ২৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। সেই টাকা পরিষেবামূলক কাজ বা গরিব পড়ুয়াদের হাতে লেখাপড়ার জিনিসপত্র তুলে দিলে বেশি উপকার হবে। তাঁদের কথায়, ‘‘এ ভাবে অহেতুক টাকা অপচয় হবে। আমরা এই ল্যাপটপ উপহার নেব না বলে ঠিক করেছি। আমাদের জন্য বরাদ্দ টাকা দিয়ে উন্নয়নের কাজ শুরু হোক।’’
বিরোধী কাউন্সিলরদের এমন প্রতিক্রিয়ায় বিরক্ত পুর কর্তৃপক্ষ। মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, “সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে। কিন্তু কাউন্সিলরদের যা বলার তাঁরা তা পুরসভায় আলোচনা করতে পারেন। অহেতুক এ নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে কোনও লাভ নেই।”