তাঁতঘর জলে ভরা, দেখবে কে?

পঞ্চায়েত সমিতির দফতরে সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক। নাগরিকদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন কেদারনাথ ভট্টাচার্য। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।অসুখ-বিসুখে এলাকার মানুষের কাছে একমাত্র চাঁদপুরের গ্রামীণ হাসপাতালই ভরসা। তবে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি কিছু করছে? পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রকল্প রয়েছে। তবে রিজার্ভার না থাকায় বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছয় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৩
Share:

বৃষ্টির জলে ভেসেছে পূর্বস্থলীর নসরতপুর। নিজস্ব চিত্র।

অসুখ-বিসুখে এলাকার মানুষের কাছে একমাত্র চাঁদপুরের গ্রামীণ হাসপাতালই ভরসা। তবে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি কিছু করছে?

Advertisement

বিরাজ অধিকারী, চাঁদপুর

সভাপতি: বিষয়টি নিয়ে রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। চেষ্টা চলছে হাসপাতালে চিকিৎসকের ঘাটতি মেটানোর।

Advertisement

পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রকল্প রয়েছে। তবে রিজার্ভার না থাকায় বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছয় না।

স্বপন ঘোষ, উত্তর শ্রীরামপুর

সভাপতি: গোটা শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত এলাকাতেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর তাদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পরিষেবা দেয়। প্রকল্পগুলির জন্য রিজার্ভার জরুরি। পঞ্চায়েত সমিতি বিষয়টি ওই দফতরের নজরে এনেছে।।

চাঁপাহাটি কলোনির সঙ্গে মূল রাস্তার সংযোগের জন্য একটি সাড়ে ছ’শো মিটার কংক্রিটের রাস্তা অত্যন্ত জরুরি। রাস্তাটি হলে মানুষ বর্ষায় স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারেন।

বিশ্বনাথ ঘোষ, চাঁপাহাটি

সভাপতি: এলাকায় উদ্বাস্তু উন্নয়ন দফতর বেশ কিছু রাস্তা তৈরি করেছে। ওই দফতর অতি সম্প্রতি চাঁপাহাটি এলাকার প্রাইভেট কলোনির রাস্তাটি জরিপ করেছে। আশা করা যাচ্ছে, এই আর্থিক বছরেই ওই এলাকার মানুষ নতুন রাস্তা পাবেন।

এলাকায় একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। তবে সেখানে নিয়মিত চিকিৎসক মেলে না। অথচ এলাকার মানুষের জ্বর, পেটের অসুখ লেগেই থাকে। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক আনতে পঞ্চায়েত সমিতির কি ভাবছে?

হুমায়ুন শেখ, চর গোয়ালপাড়া

সভাপতি: এলাকায় ২১টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটিতে যাতে পালা করে প্রতি সপ্তাহে চিকিৎসক পাঠানো যায় সে ব্যাপারে বিএমওএইচের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।

গাজীপুর মোড় থেকে দামোদর পাড়া পর্যন্ত মোরাম রাস্তটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি চণ্ডীপুর গ্রামে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সেখানে কোন দিন, কোন পরিষেবা মেলে এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত সমিতির তরফে একটি নোটিস টাঙিয়ে দিলে ভাল হয়।

সনৎ ঘোষ, মালতীপুর

সভাপতি: রাস্তাটি আরআইডিএফ প্রকল্পে যাতে হয় সে জন্য একটি বিস্তারিত প্রজেক্ট রিপোর্ট পাঠিয়েছি। আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কি কি পরিষেবা মিলবে সে ব্যাপারে বোর্ড ঝুলিয়ে সাধারণ মানুষকে জানানোর প্রস্তাবটি ভাল। শুধু চণ্ডীপুরেই নয়, পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনেই একটি করে বোর্ড লাগানো হবে।

পাড়ার মধ্যে ৩০০ মিটার কাঁচা রাস্তা রয়েছে। স্বল্প বৃষ্টিতেই রাস্তাটিতে জল জমে। রাস্তাটি পাকা অথবা ঢালাইয়ের ব্যবস্থা করা হলে ভাল হয়।

সবিতা ধারা, হেমায়েতপুর

সভাপতি: ওই গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাস্তা ইতিমধ্যেই ঢালাই হয়েছে। এই রাস্তাটি শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত যাতে তাদের তহবিল থেকে করে সে ব্যপারটি দেখা হবে।

এলাকার মানুষ চাষের উপর নির্ভরশীল। অথচ ভারী বৃষ্টি হলেই মাঠে জল জমে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। লক্ষ্মণপুর গ্রাম থেকে খড়ি নদী পর্যন্ত কিলোমিটার ছয়েক একটি নিকাশি নালা হলে চাষিরা উপকৃত হবেন।

নকুল ঘোষ, ফলহারি

সভাপতি: বিষয়টি নিয়ে দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চেষ্টা করা হবে একশো ১০০ দিনের প্রকল্পে ধাপে ধাপে নালাটি তৈরির কাজ শেষ করার।

হস্তচালিত তাঁতে নানা সামগ্রী তৈরি করে সংসার চালান এলাকার বেশির ভাগ মানুষ। অনেককেই মহাজনের কাছে সুতো এনে কাপড় বুনতে হয়। সেই কাপড় মহাজনকে দিলেও চাহিদা মতো মজুরি মেলে না।

শেফালি মণ্ডল, ভাটপাড়া ( গোপাল কলোনি)

সভাপতি: তাঁতিদের উন্নতির জন্য এলাকায় ৮টি ক্লাস্টার তৈরি হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস্টারের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৪০০ জন করে তাঁত শিল্পী। ক্লাস্টারগুলির উন্নতির জন্য ডিজাইন, রং, বিপণন-সহ নানা ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ক্লাস্টারের মধ্যে থাকলে এক দিকে যেমন ১০ শতাংশ কম দামে তাঁতিরা সুতো পাবেন, তেমনি তাদের পণ্য কিনে নেবে তন্তুজ। তাঁতিদের স্বার্থের কথা ভেবে আরও ক্লাস্টার তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।

ছাত্রের তুলনায় মহিষগড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের অভাব রয়েছে। অন্তত একটি শ্রেণিকক্ষ খুব জরুরি। পঞ্চায়েত সমিতি কি কিছু করতে পারে?

মুস্তাক আলি শেখ, আকবপুর

সভাপতি: সমস্যার কথা সম্প্রতি পঞ্চায়েত সমিতি জানতে পেরেছে। আইএসডিপি প্রকল্পে একটি শ্রেণিকক্ষ গড়ার কথা ঠিকও হয়েছে। খুব শীঘ্র দরপত্র ডাকা হবে।

সমুদ্রগড় হিমঘর থেকে মোল্লার বিল পর্যন্ত ১৪০০ মিটার পাকা রাস্তাটির বেহাল দশা। অথচ ফসল তোলা, নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা কাজে ওই রাস্তাটি এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ব্যবহার করেন। রাস্তাটি দ্রুত সারানো দরকার।

অলোক বিশ্বাস, সমুদ্রগড়

সভাপতি: নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সঙ্গে রাস্তাটি নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি আলোচনা করেছে। তারা আশ্বাস দিয়েছে রাস্তাটি সংস্কারের।

চাষের সুবিধার জন্য এলাকায় একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। অথচ গত এক বছর ধরে সেটি বিকল হয়ে পড়ায় চাষাবাদ করতে সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা। নলকূপটি সারানোর ব্যাপারে পঞ্চায়েত সমিতি কী ভাবছে?

আব্দুর রহমান শেখ, দক্ষিণবাটি

সভাপতি: গভীর নলকূপটি সারানো বেশ খরচসাপেক্ষ। তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেচ দফতরকে জানানো হবে।

বছর পাঁচেক আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর এলাকায় একটি পানীয় জলের প্রকল্প তৈরির কাজে হাত লাগায়। বর্তমানে সেটি থেকে ঘোলা জল বেরোচ্ছে। তা ছাড়া স্ট্যান্ড পোস্টও চাহিদার তুলনায় অনেক কম রয়েছে। নেই জলাধারও।

হাসমত মল্লিক, রাহাতপুর

সভাপতি: জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর এখনও প্রকল্পটি হস্তান্তর করেনি। সেপ্টেম্বর নাগাদ তারা এ কাজ করবে। প্রকল্প হস্তান্তর হলে ঘোলা জলের সমস্যা থাকবে না। ব্লক জুড়েই ধাপে ধাপে জলাধার তৈরি করা হবে।

তাঁত শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সমুদ্রগড়, নসরতপুর। অথচ ভারী বৃষ্টি হলে এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় কোমর সমান যে জল জমছে তাতে তলিয়ে যাচ্ছে পানীয় জলের নলকূপ। ফলে জল পেতে দূরে যেতে হচ্ছে। এর সঙ্গে তাঁত ঘরে জল ঢুকে যন্ত্র বিকল হয়ে যাচ্ছে। সমস্যাটি সমাধানে পঞ্চায়েত সমিতির কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?

প্রকাশ দেবনাথ, নসরতপুর

সভাপতি: সমস্যা বেশি নসরতপুরে। ওই এলাকায় সম্প্রতি কিছু ঢালাইয়ের রাস্তা তৈরি হয়েছে, যার জেরে নিকাশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। বড় পরিকল্পনা নিচ্ছে পঞ্চায়েত সমিতি।

পূর্বস্থলী ১ ব্লকে চৈতন্য স্মৃতি বিজড়িত দর্শনীয় স্থান রয়েছে। রয়েছে প্রাচীন মসজিদ। এ ছাড়াও বাঁশদহ বিল, চাঁদের বিল এবং মুড়ি গঙ্গার মতো জলাশয় রয়েছে। এ সব নিয়ে এলাকাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার কোনও ভাবনা রয়েছে?

সবিতা মজুমদার, শ্রীরামপুর

সভাপতি: বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তাঁর উদ্যোগেই তিন জলাশয় সংস্কার করে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা শুরু হয়েছে। এতে খরচ হবে ৪০ কোটি টাকা। সংস্কারের কাজ শেষ হলে বন্যা থেকে রক্ষা পাবেন এলাকার মানুষ। পাশাপাশি পর্যটন দফতরের দৃষ্টি আকষর্ণ করারও চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন