দামোদরে বেআইনি ভাবে চলছে বালি তোলা।—নিজস্ব চিত্র।
দরপত্র ডাকা হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত আবেদন জমা পড়েনি। তাই ঘাট থেকে বালি তোলা যাচ্ছে না। শিল্পাঞ্চল জুড়ে বালির জোগানে টান পড়ায় লাটে উঠতে বসেছে শহরের নির্মাণশিল্প। প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ফের এক প্রস্থ দরপত্র ডাকা হয়েছে বলে। তবে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, বালি মাফিয়াদের হুমকিতে আগ্রহী সংস্থাগুলি দরপত্রে যোগ নিতে পারছে না।
অবৈধ বালি খাদানের করাবার বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো তৎপর হয়েছে প্রশাসনও। আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে ধারাবাহিক অভিযান চলছে এলাকা জুড়ে। তাতে বালি পাচারে অনেকটা রাশ টানা গিয়েছে বলে সরকারি কর্তাদের দাবি। কিন্তু নির্মানশিল্প সংস্থাগুলির অভিযোগ, বৈধ ঘাট থেকে বালি তোলার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় মহকুমা জুড়ে বালির জোগানে বেশ টান পড়েছে।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল মহকুমায় অজয়ের ঘাট থেকে তোলা বালি চাহিদা মেটায়। এর জন্য সালানপুরে চারটি, বারাবনিতে একটি ও জামুড়িয়ায় চারটি বৈধ বালিঘাট আছে। সম্প্রতি ওই সব বালি ঘাট থেকে বালি তোলার জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত সংস্থার আবেদন জমা পড়েনি বলে জানায় জেলা প্রশাসন। তাই ৫ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ফের এক প্রস্থ দরপত্র জমা দেওয়ার আহ্বান করা হয়েছে। আসানসোল মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তন্ময় রায় বলেন, ‘‘দরপত্র ডাকা হয়েছে। সময়সীমা শেষে সেগুলি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।’’
এই পরিস্থিতিতে মহকুমা জুড়ে বালির হাহাকার পড়ে গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বালির টানে একাধিক এলাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে সরকারি নির্মাণও। বারাবনি ও সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির এলাকাতেও আটকে রয়েছে কাজ। সালানপুর পঞ্চায়েতের সভাপতি শ্যামল মজুমদার বলেন, ‘‘দ্রুত সমাধানের জন্য আবেদন করেছি।’’ শহরের বেসরকারি নির্মাণকাজও প্রায় থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ। একটি নির্মাণ সংস্থার মালিক হরিনারায়ণ মিশ্রের কথায়, ‘‘বালি পাচ্ছি না। খুব কষ্টে দু’এক গাড়ি জোগাড় করলেও প্রায় দ্বিগুণ দাম দিতে হচ্ছে।’’ আর এক প্রমোটার সন্দীপ চৌধুরী বলেন, ‘‘চোরা পথে খানিক পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না।’’
পর্যাপ্ত আবেদন জমা প়ড়ছে না কেন? প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, এই মহকুমায় দামোদরে কোনও বৈধ বালিঘাট নেই। সবই রয়েছে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায়। কিন্তু কল্যাণেশ্বরী, ডিসেরগড়, বার্নপুরের কালাঝরিয়া, রানিগঞ্জ এলাকায় প্রচুর অবৈধ বালিঘাট আছে। মাফিয়ারা সেগুলি চালায়। তারা নিজেদের কারবার চালু রাখার জন্য চাপ দিয়ে বালি তোলার সংস্থাগুলিকে দরপত্র জমা দিতে দিচ্ছে না। শহরে বালির অভাব তৈরি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তবে মহকুমা প্রশাসন বেআইনি বালি কারবারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ বহাল রাখবে বলে মহকুমা প্রশাসনের কর্তাদের আশ্বাস।
বালির ট্রাক আটক। অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালি বোঝাই ৯টি ট্রাক আটক করল আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। শনিবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এই ট্রাকগুলিকে আটক করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, আসানসোল মহকুমায় এখন কোনও বৈধ বালিঘাট নেই। চোরাপথে নদী থেকে বালি তুলে পাচার করা হচ্ছে। তার জেরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। তা আটকানোর জন্য এই অভিযান বলে পুলিশ সূত্রে খবর।