গোবিন্দভোগ চাষ দেখছেন পড়ুয়া, শিক্ষকেরা। নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী থেকে দেশ-বিদেশের অতিথি— সকলেই মজেছিলেন রায়নায় চাষ হওয়া গোবিন্দভোগ চালে। দেশ ছাড়িয়ে ভিন্ দেশের বাজার ধরতে সেই চাষ জৈব পদ্ধতিতে করার পরিকল্পনা করা হয়। এই পদ্ধতিতে ধানের ফলনও চোখ টেনেছে রাজ্যের কৃষি কর্তা ও বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী, পড়ুয়াদের।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দলুই বাজারের কৃষি খামারে ১৭ একর ও মুক্তিপুর গ্রামে ৫০ একর জমিতে জৈব পদ্ধতিতে গোবিন্দভোগ ধান চাষ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদাররের কথায়, “রায়নার গোবিন্দভোগের সুনাম রয়েছে। সরকার চাইছে, জৈব পদ্ধতিতে চাষ হোক। এ বছর চাষের পরে বীজ উৎপাদন হবে। সেই বীজ চাষিদের মধ্যে বিলি করবে সরকার।”
রাজ্যের মধ্যে সুগন্ধী ধান চাষের অন্যতম এলাকা রায়না। সুগন্ধী ধান থেকে চাল তৈরির জন্য এলাকায় রয়েছে প্রায় ৮০টি চালকল। এই এলাকার চাল ফি বছরই দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরল ও অন্ধ্রপ্রদেশে রফতানি করা হয়। বাম জমানায় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রায়নায় এসে চাল রফতানির জন্য চাষি ও চালকল মালিকদের অভিনন্দন জানান। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দিল্লির প্রগতি ময়দানে আয়োজিত ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারে রায়নার গোবিন্দভোগ দিয়েই তৈরি হয় পায়েস। অতিথিরা তার সুখ্যাতিও করেন। দেশে এমন কদরের পরে গত দু’বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চাল রফতানি হচ্ছে।
বিপণন দফতরের কর্তাদের মতে, দেশ-বিদেশের বাজারে আরও পরিমাণ চাল রফতানি করতে হলে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে। জৈব পদ্ধতিতে চাষ শুরু করে খুশি চাষিরাও। মুক্তিপুর গ্রামের চাষি রামপ্রসাদ চন্দ্রের কথায়, “রাসায়নিক সারের খরচ বাড়ছে। ভিন্ রাজ্যে ও দেশে রাসায়নিক পদ্ধতির চেয়ে জৈব পদ্ধতিতে চাষের ফলনের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি মিলবে। সেই কারণেই জৈব পদ্ধতি চাষ করছি।’’ আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনা ও পোকার আক্রমণ থেকে গাছ বাঁচানোর জন্য নজরদারি ও নিয়মমতো জৈব সার প্রয়োগ করার দাওয়াই দিয়েছেন কৃষি কর্তারা। জৈব পদ্ধতির চাষ খতিয়ে দেখে গিয়েছেন প্রদীপবাবু, কৃষি আধিকারিক ও সচিবেরা।
সম্প্রতি পড়ুয়া, শিক্ষক ও কৃষি বিজ্ঞানীরা ব্লক কৃষি খামারে এসে জৈব পদ্ধতিতে চাষ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট ডিন সঞ্জয় দত্ত রায় বলেন, ‘‘গাছের ফলন খুবই ভাল হয়েছে।’’ খামারের ম্যানেজার পড়ুয়া ও শিক্ষকদের জানান, কখন, কোন সময় ও কী ভাবে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। কেঁচো সার ও নিম তেল দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কেও বিশদে জানান তিনি। কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রশ্নের উত্তরে ব্লক কৃষি অধিকর্তা সৌমেন রায় করেন, ‘‘আশঙ্কা ছিল, জৈব চাষটা ঠিক মত করা যাবে তো? তা না হলে চাষিদের কাছে যাব কী ভাবে? তবে ফলন দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কী হতে চলেছে।”