ওরা খুব যত্ন করেছে, বলল রাজা, নমিতারা

চাকরি জীবন থেকে প্রায় অবসরের দোড়গোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছেন সুভাষবাবু। এলাকায় সামাজিক কর্মী বলেও পরিচিত।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১২
Share:

ভোজন: পাতপেড়ে খাচ্ছে আশ্রমের শিশুরা। তদারকি করছেন নববধূ। — নিজস্ব চিত্র

কোনও সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে ওদের ডাক পড়ে না। আদর করে কাছে ডেকে গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে খাইয়েও দেয় না কেউ। তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার কর্মী সুভাষ ঘোষ। সুভাষবাবুরও দীর্ঘদিন ধরে ইচ্ছে ছিল পারিবারিক কোনও অনুষ্ঠানে ওদের বাড়িতে ডেকে আদর করে পাত পেড়ে খাওয়ানোর। এ দিন নিজের ছেলের বৌভাতের অনুষ্ঠানে সেই ইচ্ছে পূরণ করে মনকে সান্ত্বনা দিলেন তিনি। তাঁর এই আপ্যায়নে খুশি সালানপুর ব্লকের কালীপাথর গ্রামের হাওড়া সাউথ পয়েন্ট সামাজিক কল্যাণ অনাথ আশ্রমের শিশুরাও।

Advertisement

চাকরি জীবন থেকে প্রায় অবসরের দোড়গোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছেন সুভাষবাবু। এলাকায় সামাজিক কর্মী বলেও পরিচিত। হঠাৎ করে এই ভাবনা এল কেন? প্রথমে কিছুই বলতে চাননি প্রচার বিমুখ এই মানুষটি। পরে অবশ্য জানালেন, অনেক বছর ধরেই এই অনাথ শিশুদের দেখছেন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ওই শিশুদের দেখলেই কষ্ট হয় তাঁর। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘অনেকবারই ভেবেছি ওদের একবার বাড়িতে ডেকে এনে পাত পেড়ে খাওয়াবো। আজ সেই তৃপ্তিই পেলাম।’’ তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী বড় ছেলে সুজয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠানে ওই অনাথ শিশুদের খাওয়ানোর প্রস্তাব করতেই তাঁকে উৎসাহ দেন স্ত্রী অনুশ্রী, মা লিলি ঘোষ। পিছিয়ে থাকেননি তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী পুত্রবধূ পম্পাও। শ্বশুরের সঙ্গে তিনিও কালীপাথরে গিয়ে কার্ড দিয়ে ওই শিশুদের নিমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন।

এ দিন অনুষ্ঠান বাড়ির পরিবেশ ছিল দেখার মত। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পরিবারের জনা পঞ্চাশেক আত্মীয়-পরিজন মূল দরজার দু’পাশে গোলাপের পাঁপড়ি হাতে দাঁড়িয়েছিলেন। শিশুরা প্রবেশ করতেই ফুল ছিটিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান। শিশুরাও ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নিল নববধূকে। এরপর গৃহকর্তা ও কর্তৃ শিশুদের হাত ধরে যত্নে খাবারের জায়গায় নিয়ে বসালেন। শিশুদের পাতে ঘি-ভাত দিলেন নববধূ। পাতে একে একে পড়ল ভাত, ডাল, ভাজা, তরকারি, মুরগির মাংশ, মাছ, চাটনি, পাঁপড়, মিষ্টি। সব শেষে আইসক্রিম।

Advertisement

শুধু খাওয়ানোই নয়। ফেরার পথে ওদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হল শিক্ষাসামগ্রী। এই আয়োজন দেখতে হাজির হয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারাও। নব-দম্পতি সুজয় ও পম্পা বলেন, ‘‘একটা অন্যরকম অনুভূতি হল। যা বলে বোঝানো যাবে না।’’

সুভাষবাবুর কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই বলে জানালেন আশ্রমের সন্ন্যাসী ফ্রান্সিস অ্যান্টনি। তিনি বলেন, ‘‘শিশুরা আজ একটা বিরল আনন্দ পেয়েছে।’’ ফেরার পথে রাজা রাও, নমিতা মুর্মুরা একগাল হেসে বলল, ‘‘ওরা আজ খুব আদর দিয়েছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন