সকালে হাসিমুখে ছবি, বিকেলে গোলমাল শাসক-বিরোধীদের

রাজ্য জোড়া অশান্তির আবহে অনেকটাই নির্ঝঞ্ঝাট ভোট দেখল মেমারি শহর। শেষ ঘণ্টার আগে পর্যন্ত ভোটারদের দিব্যি হাসিমুখে বুথে ঢুকতে দেখা গেল, বুথের বাইরে একসঙ্গে ক্যামেরায় ‘পোজ’ দিলেন নানা দলের প্রার্থীরাও। দু’একটা ভাঙচুরের অভিযোগ ছাড়া ভোট শেষে বিরোধীদের মুখে শাসকদলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগও বিশেষ শোনা গেল না।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

মেমারি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫০
Share:

ভোটের লাইন।

রাজ্য জোড়া অশান্তির আবহে অনেকটাই নির্ঝঞ্ঝাট ভোট দেখল মেমারি শহর।

Advertisement

শেষ ঘণ্টার আগে পর্যন্ত ভোটারদের দিব্যি হাসিমুখে বুথে ঢুকতে দেখা গেল, বুথের বাইরে একসঙ্গে ক্যামেরায় ‘পোজ’ দিলেন নানা দলের প্রার্থীরাও। দু’একটা ভাঙচুরের অভিযোগ ছাড়া ভোট শেষে বিরোধীদের মুখে শাসকদলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগও বিশেষ শোনা গেল না।

শনিবার মেমারির প্রায় প্রতি বুথের বাইরেই চাটাই বিছিয়ে ভোটার স্লিপ, বুথ লিস্ট নিয়ে বসেছিলেন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। মাঝেমধ্যে জোড় হাত করে ভোটারদের সঙ্গে হাসি বিনিময় চলছিল। সেজেগুজে হাজির ছিলেন প্রার্থীরাও। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল সিপিএমের প্রার্থী সৌমেন হাজরা, তৃণমূল প্রার্থী স্বপনকুমার ঘোষাল ও কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামল সরকার পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলছেন। পোজ দেওয়ার ফাঁকে কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামল সরকার বললেন, ‘‘স্বপনবাবু আমার দাদার মতো। ভোটে হারি বা জিতি, ব্যক্তিগত সম্পর্কে তাতে চিড় ধরবে না।” উত্তরে স্বপনবাবু বলেন, ‘‘বিকেলেই রাজনৈতিক যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। তারপর আমাদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক বজায় তো থাকবেই।” আর এঁদের দুজনের কথা শুনে সিপিএমের প্রার্থী সৌমেন হাজরার বক্তব্য, ‘‘আমার দুই বিরোধী প্রার্থী একদম ঠিক বলেছেন। ভোটের পরে আমরা শুধুই মেমারির নাগরিক। প্রত্যেকের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক থাকবে।”

Advertisement

একসঙ্গে ক্যামেরায় পোজ তিন দলের প্রার্থীর।

সদ্ভাবের দৃশ্য দেখা গিয়েছে মেমারির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ পাড়ার পুরনো জিটি রোডের একটি বুথেও। ভোট কেমন চলছে জানতে চাওয়ায় ওই ওয়ার্ডের তিন প্রার্থী কংগ্রেসের আশিস দত্ত, তৃণমূলের চিরঞ্জিব ঘোষ এবং বিজেপির চন্দ্র শেখর সাউ বলেন, “কারও বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ নেই।” আশিসবাবুর সংযোজন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভোট চলছে। আমরা তিনজন নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করতে করতে ভোট দেখছি।” শুধু প্রাথীরাই নয়, অনেক বুথে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারেরাও জানালেন, কোনও ঝামেলা ছাড়াই ভোট দিয়েছেন তাঁরা।

তবে সকালের এই হাসিখুশি ছবিটা ফিকে হয়ে যায় ভোটের শেষ ঘণ্টা। বুথ দখলকে কেন্দ্র করে একদিকে স্বপনবাবুর দল ও অন্যদিকে সিপিএম-কংগ্রেস দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। দু’পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে বচসা, মারপিট, মোটরবাইক ভাঙচুরের অভিযোগ করে। পুলিশ গিয়ে তাণ্ডব থামায়। একটি বুথে ভাঙচুরের অভিযোগ করেন অন্যতম বিরোধী মুখ, সিপিএমের প্রাক্তন উপপুরপ্রধান অভিজিত কোঙার। তাঁর দাবি, ‘‘শনিবার সকালের দিকে আমাদের একটি বুথ ক্যাম্প শাসকদলের লোকেরা ভাঙচুর করে। তবে তার বাইরে কিছু ঘটেনি।” সেদিন তাঁকে ও তাঁর স্ত্রী শ্যামলিনা কোঙারকে নিজেদের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গ সংসারের মতোই বুথ ক্যাম্পে বসে সামলাতে দেখা গিয়েছে।

পুলিশের বিরুদ্ধেও বিশেষ অভিযোগ নেই বিরোধীদের। কংগ্রেসের এআইসিসি-র সদস্য সেলিম মোল্লা বলেন, “ এই ভোটে অন্তত পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। পুলিশ যেভাবে ছুটে এসেছে, আমরা সন্তুষ্ট।” মেমারির পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী বলেন, “শান্তিতে ভোট করাটাই মেমারির ঐতিহ্য।’’ বিজেপি নেতা ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যের আবার দাবি,বলেছেন, “ ভোটে অশান্তি পুলিশ হতে দেয়নি ঠিকই। কিন্তু তৃণমূলকে পুলিশ অনেক বেশি সুযোগ দিয়েছে, যা আমরা পাইনি।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন