প্রদর্শনী। — নিজস্ব চিত্র।
এক সময়ে কাঁধে চাপিয়ে আনা হতো প্রতিমা। লাঠিখেলা ও ঢাক বাজানোর প্রদর্শনী হতো। সে সবের জন্য ছিল সেরার পুরস্কারও। এখন সে সব রীতির অনেক কিছুই নেই। তবু আউশগ্রামের বারো সতীর ডাঙায় প্রতিমা বিসর্জনে শোভাযাত্রার প্রথা রয়ে গিয়েছে। তা দেখতে ভিড় জমান কয়েক হাজার মানুষ।
এলাকার মানুষের কাছে এই উৎসব বারো সতীর ডাঙায় ভাসানমেলা বলে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শতাধিক বছর ধরে এই শোভাযাত্রা চলে আসছে। রামনগর, গোস্বামীখণ্ড, মালিয়ারা, মল্লিকপুর, খটনগর, হাটমাধবপুরের মতো নানা গ্রাম থেকে পুজো উদ্যোক্তারা প্রতিমা কাঁধে চাপিয়ে শোভাযাত্রা করে এই ডাঙায় নিয়ে আসতেন। সেখানে প্রতিমা রেখে চলত লাঠিখেলা এবং ঢাক বাজানোর প্রতিযোগিতা। সেরা পালোয়ান এবং ঢাকিকে পুরস্কৃত করা হত।
সময়ের সঙ্গে রেওয়াজ পাল্টেছে। এখন প্রতিমা আনা হয় ট্রাক্টরে চাপিয়ে। লাঠিখেলাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরস্কার না থাকলেও ঢাকিরা এখনও প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। শোভাযাত্রা, বাজনা এবং প্রতিমা দেখার জন্য আশপাশের এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় জমান। ঘণ্টা তিনেকের জন্য মেলাও বসে। পরে প্রতিমা নিজেদের এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। রামনগরের মিত্র বাড়ি, চট্টোপাধ্যায় বাড়ি, খাটনগরের মজুমদার পরিবারের পুজোর পাশাপাশি নানা সর্বজনীন পুজোর প্রতিমাও সামিল হয় শোভাযাত্রায়।
আউশগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৈয়দ হায়দার আলি জানান, মেলা উপলক্ষে প্রশাসনের তরফে নিরাপত্তার ব্যবস্থা, জল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার বন্দোবস্ত রাখা হয়। এলাকার যুবক শিবাজি মিত্র, উৎসব চট্টোপাধ্যায়েরা জানান, শতাব্দী প্রাচীন এই শোভাযাত্রা ও মেলা এলাকার ঐতিহ্য। স্থানীয় বাসিন্দা রাধামাধব মণ্ডল জানান, এই ডাঙায় আগে ঢিবি ছিল। জনশ্রুতি, সেখানে বারো জন সতীকে দাহ করা হয়। সে জন্য সেটি বারো সতীর ডাঙা নামে পরিচিত।