এ বার পথে নামো, ডাক দিচ্ছে গুসকরা

একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। এ বার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব একেবারে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি তে নেমে আসায় বিরক্তি সীমা ছাড়িয়েছে গুসকরার বাসিন্দাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৩:১৫
Share:

একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। এ বার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব একেবারে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি তে নেমে আসায় বিরক্তি সীমা ছাড়িয়েছে গুসকরার বাসিন্দাদের।

Advertisement

তাঁদের একাংশ মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন, কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকার নীচে নয়, ন্যূনতম পরিষেবার দাবিতে ও ব্যাক্তি-কুৎসার প্রতিবাদে তাঁরা নিজেরাই পথে নামবেন। শহরের বাসিন্দাদের কথায়, এই ছোট জনপদের সঙ্গে সংস্কৃতির যোগ বহু পুরনো। তৃণমূলের দ্বন্দ্বে তা মাটিতে মিশে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শহরের বদনাম মেটাতে পথে নামা ছাড়া উপায় নেই বলেই তাঁদের দাবি। তা ছাড়া, দুই নেতার লড়াইয়ে আবর্জনামুক্ত, সাফসুতরো শহর, উন্নয়ন যে শিকেয় উঠেছে, সে অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা।

পথে নামার ভাবনা কেন?

Advertisement

বাসিন্দাদের দাবি, সাম্প্রতিক কালে পুরসভার কাজকর্মই এর জন্য দায়ী। পুরপ্রধানের সঙ্গে দলেরই কাউন্সিলরদের বিভেদ, সিপিএম কাউন্সিলরদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুরপ্রধানকে অপসারণের তলবি সভা ডাকা, একের পর এক উন্নয়নমূলক বৈঠক বাতিল হয়ে যাওয়াই এই ক্ষোভের কারণ বলে জানাচ্ছেন আমজনতা। পুরসভা সূত্রেও জানা যায়, প্রথম থেকেই তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে বাসস্ট্যান্ডে মাটি ফেলা, গাড়ি কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তারপরে অভিযোগ উঠতে শুরু করল, রাস্তা তৈরি থেকে বিদ্যুতের খুঁটি লাগানোর বরাত দেওয়ার সময় রাজ্য সরকারের নিয়ম না মেনে দরপত্র ডাকা নিয়েও। এর মধ্যেই পুরসভায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী প্রকাশ্যে চলে আসে। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন স্বয়ং পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়। আরেকটি নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুরসভার প্রবীণ কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়। শুরু হয় দড়ি টানাটানি। তার কয়েক মাসের মধ্যেই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার অভিযোগে নিত্যানন্দবাবুর অনুগামী রাখী মাজিকে উপপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। উপপ্রধান হন চাঁদনিহারা মুন্সি। স্বাভাবিক ভাবেই পুরপ্রধান বিরোধী গোষ্ঠার ক্ষোভ বেড়ে যায়। আর কয়েক মাস আগের নিয়োগ সংক্রান্ত বৈঠকে নিত্যানন্দবাবু ও আর এক কাউন্সিলর মল্লিকা চোঙদারের মধ্যে ‘চড়-চুলি’র ঘটনা তো গুসকরা পুরসভায় ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে মারধর, শ্লীলতাহানির অভিযোগও করেছেন কাউন্সিলরেরা। তারপরে দলীয় বৈঠকেও বিষয়টি মেটেনি। বরং পুর-বৈঠকে একসঙ্গে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করে দেন তৃণমূল ও সিপিএমের কয়েকজন কাউন্সিলর। পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে আসা হয়। তা নিয়ে মামলাও হয়। তার মধ্যেই তৃণমূলের পাঁচ ও সিপিএমের পাঁচ কাউন্সিলর একসঙ্গে তলবি সভায় পুরপ্রধানকে সরানোর পক্ষে রায় দেন। তার প্রতিলিপি দেওয়া প্রশাসন ও বিভিন্ন ব্যাঙ্কে। এমনকী, ওই প্রতিলিপি পাওয়ার পরে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক গুসকরা পুরসভার অ্যাকাউন্ট সিল করে দেয় বলেও কাউন্সিলরদের দাবি।

এ দিকে, পুর-প্রশাসন নড়বড়ে হতেই রাস্তায় আবর্জনা পড়ে থাকছে। কোথাও জল সুতোর মত পড়ছে। আলোও জ্বলছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। বাসিন্দাদেরও দাবি, নেতাদের দলবাজি আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে পরিষেবা দেওয়াটাই লাটে উঠেছে। গুসকরা পুরসভার প্রাক্তন পুরকর্মী তপনকুমার মাজি বলেন, “এই অচলাবস্থা ভাঙার জন্য আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে পথে নামতে হবে।” গুসকরার উন্নয়নের ব্যাপারে তাঁদের পরিবার ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিলেন বলে দাবি করে প্রাক্তন শিক্ষক শরৎ গড়াইও বলেন, “এর বিরুদ্ধে সবাইকে সরব হতে হবে।” শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী স্বপন ঘোষের দাবি, “পুরসভায় কোনও নিয়মের বালাই নেই।” গৃহশিক্ষক সৈকত গোলদারের মতে, “ব্যক্তি কুৎসা যে পর্যায়ে চলে গিয়েছে তা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।” অন্যদেরও দাবি, পুরসভা তো নয়, যেন বেনিয়মের খেলা চলছে!

আর যাঁদের জন্য পুরসবাসী তিতিবিরক্ত তাঁরা কী বলছেন?

গুসকরার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “১১ জন কাউন্সিলর বিরুদ্ধে, তারপরেও তিনি চেয়ার আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন। বুঝতেই পারছি না, গণতান্ত্রিক ভাবে অপসারিত হওয়ার পরেও উনি কিসের লোভে চেয়ার ছাড়ছেন না?” পাল্টা জবাবে পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায় বলেন, “অগণতান্ত্রিক ভাবে সভা ডাকা হয়েছিল। আমাকে দল পুরপ্রধান করেছে। দল যখনই বলবে পদ ছেড়ে দেব। কয়েকজন কাউন্সিলরের কাজকর্মে মানুষ বিরক্ত।”

পরিবর্তনের জমানায় শহর কোথা থেকে কোথায় চলে গেল বলে তোপ দাগছেন বিরোধী দলের নেতারাও। সিপিএমের বিরোধী দলনেতা মনোজ সাউ বলেন, “ক্ষমতার দাদাগিরি আর কুৎসা বন্ধ করে মানুষ কী ভাবে পরিষেবা পাবে তা নিয়ে সত্যিই ভাবার সময় এসেছে। গুসকরাকে আমরা পিছিয়ে দিতে পারি না।”

পুরসভার অচলাবস্থা নিয়ে চিন্তায় জেলা প্রশাসনও। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন গুসকরা পুরসভার পুরো বিষয়টি নিয়ে রাজ্য পুর দফতরে চিঠি পাঠিয়ে কী করণীয় জানতে চেয়েছেন। পুর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চিঠি পাওয়ার পর বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞদের মতামত চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement