তপন রুইদাস। —নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার কাকভোর। গুটিগুটি পায়ে অন্ডাল থানায় হাজির মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। ‘‘বউ, মেয়েকে খুন করেছি। আমাকে গ্রেফতার করুন।’’— লোকটির মুখে এমন কথা শুনে হকচকিয়ে যান ডিউটি অফিসার। জোড়া খুনের দায় মাথায় নিয়ে থানায় গিয়ে এ ভাবে আত্মসমর্পণ করলেন তপন রুইদাস। ‘বাবা’র বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেবেন বলে জানান তাঁর কলেজ পড়ুয়া বড় মেয়ে।
অন্ডালের মাধবপুরে ইসিএলের পরিত্যক্ত আবাসনে ছোট মেয়ে পাপিয়া (১৬), স্ত্রী পদ্মা রুইদাসকে (৩৭) নিয়ে থাকতেন গৃহশিক্ষক তপন। স্ত্রী-মেয়েকে খুনের কথা কবুলের পরে বছর সাতচল্লিশের তপনকে সঙ্গে নিয়েই পুলিশ ওই আবাসনে যায়। তদন্তকারীরা জানান, গিয়ে দেখা যায়, ঘরের কোণে বিছানায় পড়ে মা-মেয়ের দেহ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘর। পুলিশের দাবি, জেরায় তপন জানিয়েছেন, প্রথমে ঘুমন্ত স্ত্রীর মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মারেন। সেই সময়ে পাশেই ঘুমিয়ে থাকা পাপিয়া জেগে উঠলে তার মাথাতেও পড়ে হাতুড়ির ঘা। এর পরে স্ত্রী ও মেয়ের হাতের শিরা, গলার নলি ভোজালি দিয়ে কেটে ফেলেন তপন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে দু’জনের শরীরের নানা স্থানে ভোজালির একাধিক কোপ মারা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
পড়শিরা টের পাননি, পাশের বাড়িতে এমন কাণ্ড ঘটছে। আবাসনে পুলিশ দেখে, তাঁদের টনক নড়ে।
কেন এমন নৃশংস ভাবে মারা হল মা-মেয়েকে? কারণ এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। তপনের বড় মেয়ে, দুর্গাপুরের মাইকেল মধুসূদন কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পিয়ালি পানাগড়ে মামার বাড়িতে থাকেন। ঘটনার খবর পেয়ে এসেছেন বাড়িতে। তাঁর দাবি, বাবার আয় কম। তা নিয়ে বাড়িতে অশান্তি লেগেই থাকত। তা ছাড়া মায়ের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে, এমন সন্দেহ করতেন তপন। তার জন্য এই পরিণতি বলে সন্দেহ মেয়ের। পিয়ালি বলেন, ‘‘খুনি বাবার শাস্তি চাই। তার জন্য আদালতে গিয়ে আমি নিজে সাক্ষ্য দেব।’’
পুলিশ জানায়, খুনে ব্যবহৃত হাতুড়ি ও ভোজালি উদ্ধার করা হয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘ধৃত নিজেই খুনের কথা স্বীকার করেছেন।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ভাইকে খুনের অভিযোগে আগেও মাস তিনেক জেল খেটেছেন তপন। মামলা পরে তুলে নেন তপনের বাবা।