এক মাসের মধ্যে মহকুমাশাসককে রিপোর্ট জমা

কাটোয়ায় সার্কিট ট্যুরিজমের ভাবনা

ইতিহাসে সমৃদ্ধ কাটোয়া মহকুমা। শতাব্দী প্রাচীন সতীপীঠ যেমন রয়েছে, তেমনই আছে মসজিদ, পীরের মাজার। কিন্তু, দেখভালের অভাবে কোথাও মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা বেহাল, কোথাও পাঁচশো বছরের পুরোনো ধর্মীয় মেলায় নেই পর্যাপ্ত শৌচালয়, পানীয় জলের ব্যবস্থা।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৪
Share:

ইতিহাসে সমৃদ্ধ কাটোয়া মহকুমা। শতাব্দী প্রাচীন সতীপীঠ যেমন রয়েছে, তেমনই আছে মসজিদ, পীরের মাজার। কিন্তু, দেখভালের অভাবে কোথাও মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা বেহাল, কোথাও পাঁচশো বছরের পুরোনো ধর্মীয় মেলায় নেই পর্যাপ্ত শৌচালয়, পানীয় জলের ব্যবস্থা। সংস্কারের অভাবে মোগল, পাল-সেন যুগের বা বৈষ্ণব স্থাপত্যগুলোও ধুঁকছে।

Advertisement

আঞ্চলিক সংস্কৃতির মোড়কে সেই স্থাপত্যের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে কাটোয়াকে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরতে উদ্যোগী হল মহকুমা প্রশাসন। মহকুমায় ‘সার্কিট ট্যুরিজম’ গড়তে সোমবার পাঁচ বিডিও, মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করেন মহকুমাশাসক। সঙ্গে ছিলেন আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ ও লোকসংস্কৃতি গবেষকরা। জেলাভাগের ঠিক আগেই মহকুমাকে ‘সার্কিট ট্যুরিজম’ নিয়ে এই বৈঠককে গুরুত্ব দিচ্ছেন অনেকেই। এ দিনের বৈঠকের পরেই পাঁচটি ব্লকের পাঁচ বিডিও এবং ছ’জন আঞ্চলিক ইতিহাস-সংস্কৃতি গবেষক নিয়ে ১৩ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। যাঁরা আগামী মাসের মধ্যে মহকুমার পর্যটন ক্ষেত্রগুলোর সমীক্ষাভিত্তিক রিপোর্ট দেবেন মহকুমাশাসকের দফতরে।

আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষকদের দেওয়া প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, পর্যটকরা নদিয়ার মায়াপুর থেকে জলপথে কাটোয়া এসে ১৮৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত গৌরবাড়ি পরির্শন করবেন। এখানেই মহাপ্রভু কেশব ভারতীর কাছে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন। এরপর চৈতন্যের শিষ্য জগাই মাধাইয়ের স্মৃতি বিজড়িত মাধাইতলা আশ্রম, উইলিয়াম কেরির সমাধি, দাঁইহাটে সুজাউদ্দিন-ভাস্কর পণ্ডিতের যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে প্রসিদ্ধ ভাস্কর পণ্ডিতের ঘাট, শ্রীবাটির চন্দ্র পরিবারের টেরাকোটা নকশার মন্দির,

Advertisement

জগদানন্দপুরে প্রায় ৮০ ফুট উচ্চতার রথাকৃতি রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দির, সিঙ্গিতে মহাভারত অনুবাদক কাশীরাম দাসের ভিটে ঘুরবেন তাঁরা।

মঙ্গলকোট ব্লকের অন্যতম সতীপীঠ ক্ষীরগ্রামের যোগাদ্যা মন্দির, বনকাপাশির শোলাহাব, পিলসূয়াতে আউলচাঁদের সমাধি, সতীপীঠ উজানীনগর, কোগ্রাম কুমুদরঞ্জন মল্লিকের ভিটে, হুসেন শাহ মসজিদ রয়েছে এই প্রস্তাবের মধ্যে। কেতুগ্রামের সতীপীঠ অট্টহাস, বাহুলাক্ষী, অগ্রদ্বীপের গোপীনাথ মন্দির ও নতুনগ্রামের কাষ্ঠশিল্পকে নিয়ে তৈরি হবে সার্কিট টুরিজম।

পর্যটনক্ষেত্র তৈরি করতে প্রথমেই রাস্তার উন্নয়নে জোর দেন মহকুমাশাসক। উজানিনগরে মঙ্গলচণ্ডীর মন্দির পৌঁছাতে এক কিলোমিটার বেহাল রাস্তা, অট্টহাস পৌঁছাতে নিরোল পঞ্চায়েতের ভাঙা রাস্তা সংস্কারের কথা বলেন তিনি। পর্যটকদের রাত কাটানোর জন্য বিশ্রামাগার, অগ্রদ্বীপের গোপীনাথ মেলা, কেতুগ্রামের দধিয়া বর্গিতলার মতো মেলায় পর্যাপ্ত শৌচালয় ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে জানান তিনি। অজয়ের পাশে কেতুগ্রামের বেগুনকোলায় বিশ্রামাগার তৈরির প্রস্তাব দেন এক আঞ্চলিক গবেষক।

মহকুমার প্রতিটি স্টেশনে ট্যুরিজম ম্যাপ ও মহকুমায় সংগ্রহশালা তৈরির বিষয়েও আলোচনা হয়। মকুমাশাসকের দফতরে ২৮টি ছবি দিয়ে চিত্র সংগ্রহশালা তৈরির কথাও ওঠে। মঙ্গলকোটে যাঁদের সংগ্রহে দুর্মূল্য প্রত্নসামগ্রী রয়েছে তাঁদের সে সব সামগ্রী নিয়ে ব্লকে আলাদা সংগ্রহশালা তৈরির প্রস্তাব দেন মঙ্গলকোটের বিডিও সায়ন দাশগুপ্ত। সৌন্দর্যায়নেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন