Bardhaman

ভিলেজ পুলিশের নজরে পড়ে ফুটেজে, সেই সূত্র ধরেই ব্যবসায়ী খুনের অপরাধী গ্রেফতার

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার ভিলেজ পুলিশ অভিজিৎ দাস ও সিভিক ভলেন্টিয়ার কবীর মল্লিকের চোখেই প্রথম ধরা পড়ে যাত্রিবাহী সন্দেহজনক গাড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়না শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২১ ২২:৪৬
Share:

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার ভিলেজ পুলিশ অভিজিৎ দাস ও সিভিক ভলান্টিয়ার কবীর মল্লিক। নিজস্ব চিত্র

কলকাতার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলকে খুনের মূল অপরাধীদের ধরতে তদন্তকারীরা লাগাতার সন্ধান করেছেন প্রমাণের। আর তাই সিসি ক্যামেরার ফুটেজের দিকে টানা তাকিয়ে বসেছিলেন ওঁরা দু’জন। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার ভিলেজ পুলিশ অভিজিৎ দাস ও সিভিক ভলান্টিয়ার কবীর মল্লিক। ওঁদের চোখেই প্রথম ধরা পড়ে যাত্রিবাহী সন্দেহজনক গাড়ি। সেটি দেখেই পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের জানান তাঁরা। তাঁদের চিহ্নিত ফুটেজের সূত্র ধরেই তদন্ত চালিয়ে যান পুলিশ কর্তারা। আর তাতেই মেলে সাফল্য। ধরা পড়ে দুই সুপারি কিলার। পাওয়া যায় আংশিক সাফল্য। পুলিশ মনে করছে, এই পথ ধরেই বাকি সাফল্য পাবে পুলিশ।

Advertisement

বর্ধমান দক্ষিণের এসডিপিও আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘ওই ভিলেজ পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার তদন্তে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তাঁরা গোপনে অনেক তথ্য জোগাড় করেন। আমাদের মহকুমা থেকে তো বটেই জেলা পুলিশও যাতে ওই দু’জনকে পুরস্কার দেয় সে বিষয়ে আবেদন জানানো হবে।’’ ভিলেজ পুলিশ অভিজিৎ এবং সিভিক ভলান্টিয়ার কবীর জানিয়েছেন, উচ্চপদস্থ কর্তারা তাঁদের যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তা তাঁরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। অপরাধী ধরা পড়ায় পুলিশ কর্তারা তাঁদের কাজের প্রশংসা করেছেন। অপরাধের ঘটনার তদন্তমূলক এই কাজ করে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হল বলেও তাঁরা মনে করছেন।

Advertisement

পাশাপাশি, তদন্তে উঠে এসেছে ব্যবসায়ী সব্যসাচীকে খুনে ব্যবহৃত গাড়িটি কেনার টাকা দিয়েছিলেন সোমনাথ মণ্ডল। সোমনাথ সম্পর্কে সব্যসাচীর ভাইপো। কয়েক মাস আগে হাওড়ায় সব্যসাচীর বাড়িতে বোমাবাজির ঘটনাও ঘটে। সেই ঘটনায় সব্যসাচীর ভাই দীনবন্ধু মণ্ডলকে গ্রেফতার করে হাওড়ার সালকিয়া থানার পুলিশ। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ দীর্ঘ দিন ধরেই চলছিল। কয়েক মাসে তা আরও বেড়েছে। দীনবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর সব্যসাচীর সঙ্গে তাঁর কাকার পরিবারের বিবাদ চরম আকার নেয়। তার পরই সব্যসাচীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেন দীনবন্ধুর ছেলে সোমনাথ।

পরিকল্পনা সফল করতে তিনি পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ জানিসর আলম ওরফে রিকির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খুনের অভিজ্ঞতা না থাকায় রিকি সুপারির বরাত নিতে রাজি হননি। তাঁকে ৫০ লক্ষ টাকার টোপ দেন সোমনাথ। তাঁর কথা মতো কাজ করলে সুপারির টাকায় ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে বলে রিকিকে বোঝানো হয়। টাকার লোভে রিকি তাতে রাজি হন। সব্যসাচীকে খুনের আগে সে কয়েক বার আগ্নেয়াস্ত্র চালানো প্র্যাকটিস করে। তবে, সব্যসাচীর সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে একটি গুলি রিকির হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। তাতে তাঁর হাতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষত এখনও রয়েছে। ধরা পড়ার পর চিকিৎসকের কাছে গুলিতে আহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে রিকি। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।

ধৃত রিকি ও সাদ্দামকে সোমবার বর্ধমান মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম)-এর আদালতে হাজির করানো হয়। খুনে ব্যবহৃত গাড়িটি উদ্ধারের জন্য এবং আরও তথ্য পেতে সাদ্দামকে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। তাঁকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিজেএম। শনাক্তকরণের জন্য রিকির ‘টিআই প্যারেড’ করানোর আবেদনও জানান তদন্তকারী আধিকারিক।

তদন্তে জানা গিয়েছে, সব্যসাচীকে খুনের জন্য সোমনাথ ৫০ লক্ষ টাকার চুক্তি করে রিকির সঙ্গে। তার মধ্যে ১৯ লক্ষ টাকা তাঁকে দেওয়া হয়। বাকি টাকা খুনের পর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ঘটনার পরেই সোমনাথ গা ঢাকা দেন। ফলে, বাকি টাকা হাতে পৌঁছয়নি রিকির। সব্যসাচীর দেরিয়াপুরের বাড়িতে আসার কথা সোমনাথই রিকিকে বলেন। অচেনা জায়গায় এসে খুন করতে রাজি হননি রিকি। তাঁকে জিপিএস দিয়ে দেরিয়াপুরের রাস্তা বাতলে দেন সোমনাথ। তাতেও রিকি রাজি না হওয়ায় সোমনাথ তাঁর এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বাইকে দেরিয়াপুরে যান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও গাড়ির সঙ্গে একটি বাইকেরও অস্তিত্ব মিলেছে। বাইকে চেপে দু’জন দেরিয়াপুরের দিকে যাত্রা করেন বলে ফুটেজে দেখা যায়। গাড়িটি সাদ্দামের হলেও হামলার সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তাঁর মামা রিকির সঙ্গে ছিলেন। বাকি অভিযুক্তরা ঘটনার পর গা ঢাকা দেন। কিন্তু, রিকি পালাননি। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জেনেছে, তাঁর বিয়ে ছিল। বিয়ের কারণেই তিনি ঘটনার পর পালাননি। তা ছাড়া তাঁর কাছে গা ঢাকা দেওয়ার মতো রসদও ছিল না। পাশাপাশি তিনি নানা ভাবে সুপারির বাকি টাকা আদায়ের চেষ্টা করছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন