লোভেই লুঠ ট্রেজারিতে, দাবি তদন্তে

ঋণ থাকাতেই পরিকল্পনামাফিক টাকা গায়েব করা হয়েছিল। বর্ধমান ট্রেজারিতে ভল্ট থেকে টাকা গায়েবের প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই অনুমান ছিল পুলিশের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৬
Share:

ঋণ থাকাতেই পরিকল্পনামাফিক টাকা গায়েব করা হয়েছিল। বর্ধমান ট্রেজারিতে ভল্ট থেকে টাকা গায়েবের প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই অনুমান ছিল পুলিশের। কিন্তু ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ দিব করেছে, ঋণ নয়, লোভের কারণেই টাকা লুঠ হয়।

Advertisement

গত ২৭ সেপ্টেম্বর ট্রেজারি ভবনের বারান্দায় থাকা ভাড়া নেওয়া ভল্টে ১ কোটি ১৯ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা রেখেছিল বর্ধমানের মুখ্য ডাকঘর। দু’দিন পরে টাকা নিতে এসে ডাকঘরের কর্মীরা দেখেন, ভল্টের পাত ভেঙে ‘বড় নোটে’র ৫৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা খোওয়া গিয়েছে।

ওই রাতেই ট্রেজারি ভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তিন জন পুলিশ কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। জানা যায়, পুলিশ লাইনে থাকা সুরজিৎ সিংহমুড়া প্রায়শই রাতে আড্ডা দিতে আসেন ট্রেজারিতে। সুরজিৎ এক সময়ে ট্রেজারি ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বেও ছিলেন। পুলিশের দাবি, ঘটনার দিন রাতেও সুরজিৎ এসেছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজেও ওই পুলিশকর্মীকে দেখা যায় বলে তদন্তকারীদের দাবি। বর্ধমান থানার দাবি, ঘটনার বিষয়ে সুরজিৎকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে তিনি যাবতীয় বিষয় স্বীকার করেন।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন সুরজিতের বোন অন্নপূর্ণা মণ্ডল ও তাঁর দুই আত্মীয় গোপীকৃষ্ণ অধিকারী, সুপ্রিয় মালিক ছিল। পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে মাত্র তিরিশ হাজার টাকা উদ্ধার করে। ধৃত চার জনকেই দশ দিন পুলিশি হেফাজতে রেখে হদিস মেলে আরও চার লক্ষ টাকার। পরে আরও তিন দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

কিন্তু এর পরেই প্রশ্ন ওঠে, বাকি ৫০ লক্ষ টাকা কোথায়?

তদন্তে নেমে পুলিশ জানায়, ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই সুরজিতের আত্মীয় অন্য দুই যুবক টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে। তাঁরা বাঁকুড়ার বাসিন্দা বলে পুলিশের দাবি। ওই দু’জনের নাম-ঠিকানা জোগাড় করে বাড়ি গিয়ে তল্লাশিও চালিয়েছে। পুলিশ জানায়, বিভিন্ন সূত্র ধরে তাঁরা ওই দুই যুবকের নাম জানতে পেরেছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত মূল চক্রীরা এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে তাঁদের বিভিন্ন আত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ আরও কিছু টাকার সন্ধান পেয়েছে। আজ, শুক্রবার ধৃতদের আদালতে পেশ করা হবে।

তদন্তকারীদের একাংশ জানান, পারিবারিক ঋণ থাকায় চুরির পরিকল্পনা করেন সুরজিৎ ও তাঁর বোন টাকা। বাকি দু’জনের ভূমিকা ছিল, ‘সাহায্যকারী’র। কিন্তু পুলিশের দাবি, ধৃতদের পরিবারের সূত্রে জানা গিয়েছে, মহাজন কিংবা ব্যাঙ্ক কোথাও কোনও ঋণ নেই অভিযুক্তদের। টানা ১৩ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশের দাবি, ধৃত গোপীকৃষ্ণ ও সুপ্রিয়কে ব্যবসা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ‘দলে’ টানেন সুরজিৎ। কাঠ-মিস্ত্রী গোপীকৃষ্ণই ট্রেজারি ভবনের পিছন দিক দিয়ে ভিতরে ঢুকে প্রায় একশো বছরের পুরনো ভল্ট ভেঙে টাকা নিয়ে বাইরে বের হয়। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “লোভে পড়েই এ রকম কাণ্ড ঘটাল সুরজিৎ। এর জন্য পুলিশও লজ্জিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন