আসল দুষ্কৃতীদের ধরা হল কোথায়, প্রশ্ন বিরোধীদের

পুরভোটের সপ্তাহখানেক আগে গা ঝাড়া দিয়েছে পুলিশ। এক রাতেই উদ্ধার হয়েছে বহু অস্ত্রশস্ত্র। ধরা হয়েছে অনেককে। কিন্তু, পুলিশের এমন তৎপরতা লোক দেখানো বলে দাবি করেছে বিরোধীরা। অনেক অভিযুক্ত প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের ধরা হচ্ছে না বলে দাবি করেছে তারা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৫
Share:

পুরভোটের সপ্তাহখানেক আগে গা ঝাড়া দিয়েছে পুলিশ। এক রাতেই উদ্ধার হয়েছে বহু অস্ত্রশস্ত্র। ধরা হয়েছে অনেককে। কিন্তু, পুলিশের এমন তৎপরতা লোক দেখানো বলে দাবি করেছে বিরোধীরা। অনেক অভিযুক্ত প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের ধরা হচ্ছে না বলে দাবি করেছে তারা।

Advertisement

বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানিয়েছেন, রবিবার জেলার গ্রামীণ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৭ রাউন্ড গুলি, ৮১টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪৭৫ জনকে। তাদের মধ্যে যেমন পুরনো মামলায় অভিযুক্ত অনেকে রয়েছে, তেমনই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেও অনেককে ধরা হয়েছে।

জেলা পুলিশ হঠাৎ এমন অভিযান চালালেও এর আগে পর্যন্ত ভোটের প্রচারে যে সব হুমকি, মারধর বা পতাকা ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছে, সেগুলির তদন্তে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে বারবার সরব হয়েছে বিরোধীরা। মেমারিতে যেমন এখনও পর্যন্ত দায়ের হয়েছে আটটি অভিযোগ— ছ’টি সিপিএমের তরফে ও দু’টি কংগ্রেসের তরফে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগকারীদের দাবি। কাটোয়ায় সিপিএম এবং কংগ্রেসের তরফে মারধর ও হুমকির মোট ছ’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এক কংগ্রেস প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগও। কালনা পুর এলাকায় এখনও পর্যন্ত সিপিএমের তরফে গোটা পাঁচেক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে কয়েকটি ওয়ার্ডে পোস্টার-ফেস্টুন ছেঁড়া ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চার তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে সিপিএম প্রার্থীকে বাড়ি গিয়ে হুমকির অভিযোগ। এই পুর এলাকায় এ বার বিজেপি-র তরফে দায়ের করা অভিযোগের সংখ্যা ছ’টি। সবই ভয় দেখানো ও পতাকা ছেঁড়ার।

Advertisement

কালনার সিপিএম জোনাল সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘কোনও অভিযোগের ক্ষেত্রেই পুলিশ সক্রিয় হয়নি।’’ বিজেপি-র বর্ধমান পূর্ব জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিকেরও দাবি, ‘‘পুলিশ এখনও এমন কোনও পদক্ষেপ করেনি যাতে তাদের উপরে আস্থা রাখা যায়। ফলে, কলকাতায় পুরভোটে যা হয়েছে, এখানে একই রকম বা তার চেয়েও বেশি সন্ত্রাসের আশঙ্কা করছি আমরা।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘জেলার যে চারটি পুরসভায় ভোট হবে সেগুলির আশপাশের নানা গ্রামীণ এলাকা থেকে দুষ্কৃতীদের জড়ো করে ভোটের দিন সন্ত্রাস তৈরির চেষ্টায় রয়েছে শাসকদল।’’ সিপিএমেরও অভিযোগ, কয়েকটি জায়গা তাদের নজরে এসেছে যেখানে তৃণমূল লোক নিয়ে এসে রাখার ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করছে। বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের সেখানে জড়ো করা হবে বলেও তাদের আশঙ্কা। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনা হবে বলে সিপিএম নেতারা দাবি করেন।

জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, যখন যা অভিযোগ মিলেছে তা সঙ্গে-সঙ্গে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। জেলা পুলিশের দাবি, যে ক’টি অভিযোগ মিলেছে সব ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে রবিবার।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক অবশ্য এই অভিযান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রকৃত দুষ্কৃতীরা কি আদৌ গ্রেফতার হয়েছে? তারা তো চোখের সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অবশ্য বলেন, ‘‘বিরোধীরা কুৎসা করছে। এখনও কোথাও এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি যাতে সন্ত্রাসের অভিযোগ টেকে। এ সব পুরোপুরি মিথ্যে অভিযোগ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন