ত্রিকোণ প্রেমেই কি খুন, খুঁজছে পুলিশ

আগের দিনই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বন্ধুর ছবি দিয়ে নিখোঁজ বলে জানিয়েছিল ছেলেটি। কেউ খোঁজ পেলে জানানোর জন্য মোবাইল নম্বরও দিয়েছিল। পরের দিন বন্ধুর দেহ মিলতে সেই ছেলেটিকেই খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃত কালনা পুরপ্রধানের ছেলেকে পাঠানো হয় জেলা জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০৭:৪৪
Share:

এই পুকুর থেকেই দেহ মেলে।

আগের দিনই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বন্ধুর ছবি দিয়ে নিখোঁজ বলে জানিয়েছিল ছেলেটি। কেউ খোঁজ পেলে জানানোর জন্য মোবাইল নম্বরও দিয়েছিল। পরের দিন বন্ধুর দেহ মিলতে সেই ছেলেটিকেই খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃত কালনা পুরপ্রধানের ছেলেকে পাঠানো হয় জেলা জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে। ধরা পড়ে আর এক অভিযুক্ত চন্দ্রকান্ত বিশ্বাস। যদিও অভিযুক্ত কাউন্সিলর সমরজিৎ হালদারকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। খুনের কারণ নিয়ে জটও খোলেনি।

Advertisement

বুধবার সকালেই কালনার একটি সিনেমা হল লাগোয়া পুকুর থেকে অম্বিকা মহিষমর্দিনী বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সুহৃৎ দাসের দেহ মেলে। পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগের ছেলে ঘটনায় জড়িত অভিযোগ তুলে শুরু হয় বিক্ষোভ, অবরোধ। পুরপ্রধান নিজে ঘটনাস্থলে গেলে অশান্তি মাত্রা ছাড়ায়। তাঁর মোটরবাইর ভাঙচুর করা হয়। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর হয়। কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে বের করে আনা হয় দেবপ্রসাদবাবুকে। গ্রেফতার করা হয় তাঁর ছেলেকে। তারপর থেকে দশম শ্রেণির এক ছাত্র কী কারণে এমন কাজ করতে পারে, সেই আলোচনায় চলছে মোড়ে মোড়ে।

এ দিন সকালে কালনা থানায় যান মৃতের বাবা-মা হৃষিকেশবাবু ও কেতকীদেবী। এসডিপিও, ওসির সঙ্গে দেখা করে ছেলের খুনের সবরকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তাঁরা। দ্রুত খুনের কারণ খুঁজে বের করে দোষীদের শাস্তিরও দাবি করেন। বিকেলে শহরের বাসিন্দাদের একাংশ খুনীদের শাস্তি চেয়ে সুহৃতের বাড়ির কাছ থেকে কালনা পুরনো বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মোমবাতি মিছিলও করেন। তবে খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। পুলিশের দাবি, জেরা, খোঁজ খবর করে কিছু তথ্য মিলেছে। তবে তার উপর ভর করে এখনই পুরো ঘটনা বিশ্লেষণ করা যাবে না। বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।

Advertisement

কালনা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি খুন কি না, হলেও কী ভাবে, কখন হয়েছে তা খোঁজার চেষ্টা চলছে। এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ওই দু’জনের কয়েকজন সহপাঠী। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, সোমবার অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র মদ্যপান করে এলাকারই একটি সিনেমা হলে ঢোকে। মাঝে এক বার কিছুক্ষণের জন্য বেরিয়ে এলেও আবারও হলে ঢুকে যায় তারা। এদের মধ্যে এই দু’জন ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মহকুমা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘অভিযুক্ত ও মৃত ছাত্র সে রাতে মদ্যপান করেছিল কি না, তা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

বুধবার সুহৃতের বাবা জানিয়েছিলেন, কিছু দিন আগে মোবাইলের এসডি কার্ড নিয়ে ছেলের সঙ্গে গোলমাল হয়েছিল পুরপ্রধানের ছেলের। সুহৃতের একটি মোবাইলেরও খোঁজ মেলেনি। এ দিন একটি এসডি কার্ডের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, পুরপ্রধানের ছেলের কাছ থেকে একটি এসডি কার্ড পাওয়া গিয়েছে। সে জানিয়েছে, ওটি সুহৃতের। তবে আপত্তিকর কিছু পাওয়া যায়নি তাতে। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই কার্ডে গান ভরে দেওয়ার বিনিময়ে সুহৃতের কাছে ৫০ টাকা চেয়েছিল অভিযুক্ত। যদিও হৃষিকেশবাবু এ দিন দাবি করেন, যে এসডি কার্ড নিয়ে বিবাদ হয়েছিল তাতে সম্ভবত আপত্তিকর কিছু ছবি ছিল। ওই নিয়েই গোলমাল হয়েছিল।

এর সঙ্গে খুনের পিছনে ত্রিকোণ প্রেমের যোগও রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, দুই ছাত্রের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তল্লাশি চালিয়ে ও সহপাঠীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুই ছাত্রীর নাম পাওয়া গিয়েছে। তাদের এক জন দু’জনেরই খুব পরিচিত। সুহৃতের মা কেতকীদেবীও এ দিন দাবি করেন, ছেলের বান্ধবী ছিল। বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে ছবি তুলতে ভালোবাসত সে। বান্ধবীদের এক জন ছিল ওর বেশি কাছের। সে বাড়িতেও আসত। সেখান থেকেই কোনও গোলমাল কি না, তা দেখছে পুলিশ।

কালনার এসডিপিও ওয়াই রঘুবংশী জানান, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। ঘটনার বিষয়ে নানান দিক পুলিশ খতিয়ে দেখছে। ধৃত চন্দ্রকান্তকে আদালতে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন