পুলিশ বলছে দুর্ঘটনা, তবু ধন্দ

দু’টি মোবাইলই কেন বন্ধুর কাছে

একটি স্কুটি আর মোবাইল। এই দুটির যাবতীয় তথ্য মিললেই ইউআইটি ছাত্রের মৃত্যুর কারণ জানা যাবে মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। মৃত ছাত্র শেষাদ্রির পরিবারেরও দাবি, রবিবার বিকেল থেকেই তাঁর মোটরবাইকের পিছন পিছন একটি স্কুটিকে ঘুরতে দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৫
Share:

কালনা গেটের কাছে ঘটনাস্থলে পুলিশের তল্লাশি। নিজস্ব চিত্র।

একটি স্কুটি আর মোবাইল।

Advertisement

এই দুটির যাবতীয় তথ্য মিললেই ইউআইটি ছাত্রের মৃত্যুর কারণ জানা যাবে মনে করছেন পুলিশ কর্তারা।

মৃত ছাত্র শেষাদ্রির পরিবারেরও দাবি, রবিবার বিকেল থেকেই তাঁর মোটরবাইকের পিছন পিছন একটি স্কুটিকে ঘুরতে দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আবার রেললাইনের ধার থেকে শেষাদ্রির সহপাঠীকে উদ্ধআর করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পিছনেও একটি স্কুটির ভূমিকা ছিল বলে জানা গিয়েছে। আর পুলিশের প্রশ্ন, শেষাদ্রির দুটো মোবাইল ফোন জখম সহপাঠীর কাছে এল কীভাবে? রেল লাইনের ধারে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁরা কিই বা করছিলেন?

Advertisement

কিন্তু রহস্যের জট কাটাতে যিনি সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেন সেই সহপাঠীই এখন বামাইচাঁদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, অনুমতি ছাড়া ওই ছাত্রকে যেন ছেড়ে দেওয়া না হয়।

রেল পুলিশের হাওড়া ডিভিশনের এক কর্তা বলেন, “ওসি দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায় তদন্ত শুরু করেছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের, এক টোটোচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরে কী ঘটেছিল স্পষ্ট হবে।”

সোমবার রাত ১০টা নাগাদ ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শেষাদ্রির দাদা নিলাদ্রীবাবু বর্ধমান রেল পুলিশের কাছে তাঁর ভাইকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তাঁর সন্দেহ, এই খুনের পিছনে শেষাদ্রির ওই সহপাঠীই রয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই সহপাঠীর বাড়ি পুরুলিয়ার সাঁতুরি থানার খাদড়া গ্রামে। দু’জনেই ইউআইটিতে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেন। শেষাদ্রির পরিবারের দাবি, দু’জনেই ভাল বন্ধু ছিলেন। সাধনপুরের মেস ছেড়ে সহপাঠীটি প্রায়ই দিন তাঁদের বাড়িতেও আসতেন। ঘটনার দিন বিকেলে শেষাদ্রির মোটরবাইকে দুই বন্ধু বাড়ির কাছেই গিটার শিখতে যান। নিলাদ্রীরবাবুর অভিযোগ, “প্রাথমিক ভাবে তেমন সন্দেহ হয়নি। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী ও পড়শিদের কাছ থেকে জানতে পারি ভাইয়ের মোটরবাইকটিকে একটি স্কুটি ফলো করছিল। স্কুটিতে তিন জন ছিল। আরও কিছু জিনিস দেখে আমাদের ধারণা, ওকে খুন করা হয়েছে।”

পুলিশ জানিয়েছিল, রবিবার গভীর রাতে কালনা গেটের কাছে বাঁকা নদীর ব্রিজের উপর বর্ধমানমুখী আপ লাইনের পাশে ঝোপঝাড় থেকে শেষাদ্রির মৃতদেহ মেলে। সোমবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরে রাতে রেলপুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন শেষাদ্রির পরিবার। মঙ্গলবার সকালেও নীলাদ্রিবাবুরা রেল পুলিশের কাছে দেখা করে সঠিক তদন্তের দাবি জানান।

পুলিশ জানতে পেরেছে, অনেক পড়ুয়াই রেল লাইনের ধারে বিকেলে আড্ডা দেয়। কিন্তু ররিবার ওই দু’জন ছাড়া আর তেমন কেউ ছিল না। প্রত্যক্ষদরর্শীরা পুলিশকে জানান, সওয়া ৮টা নাগাদ বিশ্বকর্মার বিসর্জনের পরে তাঁরা রেললাইনের ধারে আসেন। বর্ধমানমুখী একটি লোকাল ট্রেন সিগন্যাল না পেয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন। ট্রেনের আলোয় তাঁরা দেখেন এক যুবক বমি করছে। কাছে যাওয়ার আগেই সে শুয়ে পড়ে। তাঁর নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। ওই অবস্থায় তাঁরা জখমকে তুলে বর্ধমান মেডিক্যালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন। তাঁর কাছে থাকা দুটি মোবাইল ফোন থেকে নানা নম্বরে ফোন করে খবর দিতে থাকেন। পরে জানা যায়, মোবাইলগুলি আহতের নয়। প্রশ্ন, মৃতের ফোন জখমের কাছে ছিল কেন? কেনই বা গোলাপবাগ থেকে প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার বাঁকা সেতুর উপর রেল লাইনে রাতে গিয়েছিল তাঁরা?

পুলিশের দাবি, তদন্ত চলছে। আপাত ভাবে মনে হচ্ছে দুর্ঘটনা। তবে ওই জখম সহপাঠ মুখ না খোলা পর্যন্ত অনেক কিছুই স্পষ্ট হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন