নিষিদ্ধ ১২৬ ধরনের বাজি

পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, এই দুই রাতে গত বছর দুর্গাপুরের বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (১০ মাইক্রোমিটারের থেকে ছোট আকারের) মাত্রা ছিল স্বাভাবিকের থেকে আড়াই গুণেরও বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ০০:২৮
Share:

ফাইল চিত্র।

কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে বাজি-দূষণ প্রতি বছরই পুলিশ, প্রশাসন থেকে সাধারণ শহরবাসী, প্রত্যেকেরই অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে এ বছর দূষণ রুখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

Advertisement

পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, এই দুই রাতে গত বছর দুর্গাপুরের বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (১০ মাইক্রোমিটারের থেকে ছোট আকারের) মাত্রা ছিল স্বাভাবিকের থেকে আড়াই গুণেরও বেশি। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার গড় স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম। এই সময়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় তা ছিল ১৩৬ থেকে ২৬৮-এর মধ্যে।

এ বছর এই ছবি যাতে না দেখা যায়, সে জন্য পর্ষদ বেশ কিছু পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে। পর্ষদের মুখ্য বাস্তুকার (আসানসোল শাখা) স্বরূপ মণ্ডল জানান, ১২৬ রকম শব্দবাজি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সেই তালিকা শহর ও গ্রামে বাজি বিক্রেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তা দোকানের সামনে টাঙিয়ে রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ওই ধরনের বাজিগুলি সংগ্রহ না করার আর্জি জানানো হয়েছে জনতার কাছে। নিষিদ্ধ বাজি বিক্রির খবর পেলে অভিযান, আইনি পদক্ষেপ করা হবে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে, রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যেই শুধু অনুমোদিত বাজি পোড়ানো যাবে। তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একশো মিটারের মধ্যে বাজি পোড়ানো যাবে না।

Advertisement

পুলিশ, পর্ষদের পদক্ষেপ


দূষণ রুখতে
• ১২৬ ধরনের শব্দবাজি নিষিদ্ধ হয়েছে।
• নিষিদ্ধ বাজির তালিকা পাঠানো হয়েছে বিক্রেতাদের কাছে।
• নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা।
• রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যেই শুধুমাত্র অনুমোদিত বাজি পোড়ানো যাবে।
• স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একশো মিটারের মধ্যে বাজি পোড়ানো যাবে না।
• ‘উপদ্রুত’ এলাকা ও আবাসনগুলিতে বিশেষ নজর। নজর দূষণ পরিমাপ যন্ত্রের মাধ্যমেও।

• স্কুল, আবাসনে সচেতনতা শিবির।

অভিযোগ জানাতে
• দূষণ নিয়ন্ত্র পর্ষদে: ০৩৪১-২৩০৫৪০৭
• পুলিশে: ০৮১৭০০৬৫৫৫, ০৩৪১-২২৫৫৬৪৬
• অ্যাপে: ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পরিবেশ অ্যাপ’

পাশাপাশি, পুলিশ ও পর্ষদ প্রতিবার নিষিদ্ধ শব্দবাজি পোড়ানোর অভিযোগ যে সব জায়গাগুলি থেকে আসে, সেই সব এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালানোর কথা জানিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে আসানসোল জেলা হাসপাতালের অদূরে এক জায়গা, কুলটির নিয়ামতপুর, বরাকরের স্টেশন রোড, চিনাকুড়ি, আসানসোল বাজার, বার্নপুরের ইস্কো রোড, জামুড়িয়া বাজার, রূপনারায়ণপুরের ডাবর মোড়, রানিগঞ্জ শহর, বেনাচিতি, বিধাননগর প্রভৃতি এলাকা। পর্ষদের এক কর্তা জানান, পুলিশ ও পর্ষদের যৌথ ভ্রাম্যমাণ দল নানা ‘উপদ্রুত’ এলাকায় অভিযান চালাবে।

পর্ষদের আধিকারিকেরা জানান, প্রতি বছর শহরের নানা বহুতল আবাসনগুলির ছাদে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর অভিযোগ আসে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আসানসোল পুরসভার কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। তা ছাড়া, আসানসোল পুরসভা ভবনের ছাদ, জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জ বরো কার্যালয়ের ছাদ, রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্পতালুক, বার্নপুর ইস্কো রোড ও মহকুমাশাসকের (আসানসোল) বাংলোর ছাদে দূষণ পরিমাপ যন্ত্রগুলির মাধ্যমে পর্ষদের কর্মীরা প্রতি ঘণ্টায় শহরের শব্দবাজির মাত্রা ও দূষণ পরিমাপ করবেন। ওই সব এলাকায় শব্দের কম্পাঙ্কের মাত্রা ছাড়ালে পর্ষদ আইনি পদক্ষেপ করবে।

সচেতনতা প্রচারেও পুলিশ বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট জানায়, পরিবেশবান্ধব-দীপাবলি পালন কী ভাবে সম্ভব, সে বিষয়ে শিল্পাঞ্চলের নানা স্কুল ও আবাসনে শিবির করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারই ডিএসপি টাউনশিপের ও বিধাননগরের দু’টি বেসরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়ুয়াদের সচেতন করা হয়। সেখানে ছিলেন পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ স্বয়ং। সিটি সেন্টার ও বিধাননগরের দু’টি ‘গ্রুপ হাউজ়িং’-এ সচেতনতা শিবির আয়োজিত হয়। আসানসোলের এসবি গড়াই রোড লাগোয়া একটি বেসরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলেও দূষণ রুখতে সচেতনতা প্রচার করা হয়। ছিলেন কমিশনার ও এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সায়ক দাস। কমিশনার বলেন, ‘‘উৎসবে আনন্দ করতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখা দরকার, সেই আনন্দ যেন কোনও ভাবেই কারও বিরক্তি বা কষ্টের কারণ না হয়। পরিবেশের ক্ষতি না হয়। এ বিষয়ে সচেতনতা প্রচার করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন