নজর নেই কারও
একদিকে জেমুয়া পঞ্চায়েত, অন্যদিকে গোপালপুর পঞ্চায়েত এলাকা। শহরের ঠিক লাগোয়া এই দুই পঞ্চায়েত এলাকার শঙ্করপুর, আড়রা, কালীগঞ্জ, বামুনাড়া, গোপালপুর প্রভৃতি জায়গায় গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে বহু বহুতল আবাসন। অনেকে বসবাস শুরু করেছেন, বহু আবাসন এখনও নির্মীয়মাণ। অথচ এই সব এলাকায় ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবার বালাই নেই। পঞ্চায়েতের দাবি, তাদের কাছে পাকা রাস্তা তৈরি, পানীয় জল সরবরাহ, বর্জ্য সরানোর মতো কাজের জন্য আর্থিক সামর্থ্য ও পরিকাঠামো নেই। আরেক দিকে পুরসভাও মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। ফলে জগাখিচুড়ি দশা এলাকাগুলির। মাটির নীচ থেকে জল তুলে পানীয় জলের চাহিদা মেটানো হয়, যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। দিন দিন জলস্তর নামছেও। তা ছাড়া শিল্পাঞ্চলে মাটির নীচের জলে অনেক বর্জ্য, বিপজ্জনক রাসায়নিক মিশে থাকে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এ ছাড়া দৈনিক গৃহস্থালীর বর্জ্য ফেলার বা প্রক্রিয়াকরণেরও ব্যবস্থা নেই। ফলে পাশের কোনও ফাঁকা মাঠ বা পুকুরের জলে বর্জ্য ফেলেন অনেকে। তাতে পরিবেশ আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। অবিলম্বে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) হস্তক্ষেপ দরকার। একমাত্র এডিডিএ উদ্যোগ নিলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে করি। তাছাড়া, এ ভাবে পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও পরিকাঠামো ছাড়াই একের পর এক আবাসন প্রকল্পের অনুমোদনে রাশ টানা জরুরি। না হলে একদিন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে।
প্রদীপ আদক, বিধাননগর
ভাসবে সিটি সেন্টারও
উপর থেকে দেখলে বোঝার কোনও উপায় নেই, কিন্তু সিটি সেন্টার এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে। বর্ষায় বহু জায়গা, বিশেষ করে তুলনায় নিচু জায়গাগুলিতে বৃষ্টি হলেই জল জমে যাচ্ছে। আগে এলাকা ফাঁকা ছিল বলে বোঝা যেত না। কিন্তু গত কয়েক বছরে পরপর বাণিজ্যিক ভবন, হোটেল, আবাসন, শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স গড়ে উঠেছে। কর্মসূত্রে বহু মানুষ বাইরে থেকে সিটি সেন্টার এলাকায় এসেছেন। ফলে নিকাশি ব্যবস্থার উপরে চাপ বেড়েছে। এ সবের জন্য দায়ী অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা নিকাশি ব্যবস্থা। অতীতে নিকাশি নর্দমার ভিতর দিয়েই বর্জ্য জলের পাইপ, পানীয় জলের পাইপ, বিভিন্ন টেলি পরিষেবা সংস্থার কেবল লাইন, ডিপিএলের বিদ্যুতের কেবল ইত্যাদি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেভাবে নজর দেননি তৎকালীন আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা। তার কুফল এখন বোঝা যাচ্ছে। তার, কেবল ও পাইপের জঙ্গলে আটকে যাচ্ছে প্লাস্টিক থেকে বালি-কাদা, নুড়ি সবই। নর্দমার ধারণ ক্ষমতা কমে দ্রুত জল বয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে। পুরসভার পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে সংস্কার করা হয় ঠিকই। তবে নিকাশি ব্যবস্থার আমুল সংস্কার না হলে সিটি সেন্টারও বর্ষায় বানভাসি হবে একদিন।
অনিল পাল, সিমেন্ট পার্ক
অবহেলায় পুরাকীর্তি
রক্ষণাবেক্ষণ নেই, অবহেলায় পড়ে সিটি সেন্টারের সুড়ঙ্গ। —নিজস্ব চিত্র।
খোঁজ মেলার পরে সংরক্ষণ হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না সিটি সেন্টারের অম্বুজা এলাকার ঐতিহাসিক সুড়ঙ্গের। ঝোপঝাড়ে ভরে গিয়েছে চত্বর। ২০০৭ সালে একটি বাড়ির ভিত খোঁড়ার সময়ে মাটির নীচে ফুটদুয়েক গভীরে সুড়ঙ্গটি দেখেন মজুরেরা। পাথরের খিলান দিয়ে উপর-নিচে বাঁধানো সুড়ঙ্গটি লম্বায় আড়াই ফুট এবং চওড়ায় দুই ফুট। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকেরা সুড়ঙ্গটি ঘুরে দেখে জানান, মধ্যযুগে নির্মিত ওই সুড়ঙ্গটির স্থাপত্যে রোমান শৈলীর মিশ্রণ রয়েছে। পরে পুরসভার পক্ষ থেকে রেলিং দিয়ে ঘিরে, আলো লাগিয়ে সেটি সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু সেই শেষ। নিয়মিত নজরদারি না থাকায় আগাছায় ভরে গিয়েছে ওই পুরাকীর্তি। বাইরে থেকে বোঝারও উপায় নেই। অবিলম্বে এই জায়গাটির সংস্কার চাই।
প্রসেনজিৎ সর, শিবাজি রোড
জল পাব কোথায়?
‘একটু জল পাই কোথায় বলতে পারেন’— ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের লেখায় পড়েছিলাম। বড় হয়ে সেই অভিজ্ঞতা যে এভাবে সত্যি হবে ভাবিনি। আমরা পুর এলাকায় বসবাস করি। এক সময় পানীয় জলের সরবরাহ ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি টানা কয়েকদিন জল ছিল না। তারপরে জল এসেছে ঠিকই, কিন্তু কখন আসে কখন যায় কেউ জানতে পারে না। জলের জন্য হা পিত্যেশ করে বসে থাকেন সবাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কলসি আর কারও ভরে না। এ বছর এখনও সেভাবে গরম পড়েনি। প্রখর গ্রীষ্মে কি হবে তা ভেবে তালু শুকিয়ে যাচ্ছে এখন থেকে। তবে শুধু আমাদের এলাকা নয়, শহরের বহু জায়গার একই দশা।
অভিজিৎ অধিকারী, সবুজনগর
পাকা নিকাশি নেই
আমাদের পাড়ার নাম আর্যাবর্ত। পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ড এটা। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমরা বসবাস করছি এই এলাকায়। অথচ প্রধান রাস্তার পাশে ছাড়া ভিতরে কোথাও পাকা নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। ফলে কাঁচা নর্দমায় জল জমে থাকে। মশা-মাছি ভন ভন করে, দুর্গন্ধ ছড়ায়। পুর এলাকায় বসবাস করি, অথচ এমন পরিবেশ দেখে নিজেদের অসহায় মনে হয়। সেই ২০০৭ সালের গোড়ার দিকে রাস্তা পাকা করা হয়েছিল, তারপর কোনও রকম সংস্কার হয়নি। পিচ উঠে পাথর বেরিয়ে এবড়ো খেবড়ো দশা।
জইনুল হক, ফুলঝোড়