কোর্টে টানা কর্মবিরতি, ক্ষোভ বিচারপ্রার্থীদের

প্রথমে সাইকেল তারপরে ঘণ্টাখানেক বাসে চড়ে কেতুগ্রাম ২ ব্লকের নবগ্রাম থেকে কাটোয়া আদালতে এসেছিলেন গৌতম মাঝি। এসে দেখলেন আদালতে কর্মবিরতি। হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরা ছাড়া উপায় ছিল না তাঁর। শুধু বললেন, ‘‘একে তো তারিখের পর তারিখ পড়ছে। তার মধ্যে কর্মবিরতি। বিচার যে কবে পাব?’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০১:৫৯
Share:

সুনসান আদালত চত্বর। —নিজস্ব চিত্র।

প্রথমে সাইকেল তারপরে ঘণ্টাখানেক বাসে চড়ে কেতুগ্রাম ২ ব্লকের নবগ্রাম থেকে কাটোয়া আদালতে এসেছিলেন গৌতম মাঝি। এসে দেখলেন আদালতে কর্মবিরতি। হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরা ছাড়া উপায় ছিল না তাঁর। শুধু বললেন, ‘‘একে তো তারিখের পর তারিখ পড়ছে। তার মধ্যে কর্মবিরতি। বিচার যে কবে পাব?’’

Advertisement

গৌতমবাবুর মতোই ফিরে যেতে হয়েছে বিকাশ মাঝি, টুলু শেখদের। ৩০ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ছ’দিনের কর্মবিরতিতে মুশকিলে পড়েছেন আরও বহু মানুষ। যদিও কাটোয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, মক্কেল ও তাঁদের পরিজনেদের কথা ভেবে আদালতের পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিতেই এই কর্মবিরতি। যদিও বিচারপ্রার্থীদের দাবি, নানা কারণে কর্মবিরতি ডেকে আদালতের চক্কর কাটা আর বিলম্বিত না করে একটু কষ্ট করে গরমে বসাও ঢের ভাল।

আদালত চত্বরে গাছের নীচে জিরিয়ে নিতে দেখা যায় কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বাঁশরা গ্রামের বিকাশ মাঝিকে। তিনি জানান, ২০১৩ সালের একটি মামলার তারিখ পড়েছিল ৩১ মে। দেড় ঘন্টা রাস্তা বাসে এসে খরচা, হয়রানি আর সময় নষ্টই হল। বেরুগ্রামের কোজলসার টুলু শেখেরও ২০১১ সালের একটি মামলার তারিখ ছিল ৩০ মে। কিন্তু আদালতের কাজ বন্ধ থাকায় ফিরে যান তিনি। হতাশ টুলু বলেন, ‘‘আজ আমার কেসের গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ছিল। সব কাজ ফেলে আদালতে এসে দেখি আদালত বন্ধ। খুবই অসুবিধেয় পড়েছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের মতো গরিব মানুষের মামলা যতদিন ঝুলবে ততই টাকা খরচা আর হয়রানি।’’ বিচারপ্রার্থীদের পাশাপাশি নতুন মামলায় মুশকিলে পড়েছেন জেল হাজতে থাকা আসামীদের পরিবার ও আত্মীয়-পরিজনেরাও। যেমন, ২১শে এপ্রিল কেতুগ্রামের হাটমুড় গ্রামে বোমাবাজির ঘটনায় জেল হেফাজতে থাকা হাসিবুল শেখের স্ত্রী সুফিয়া শেখের আশঙ্কা, ‘‘মঙ্গলবার কেসের তারিখ ছিল। আদালত বন্ধ বলে সেটাও পিছিয়ে গেল। পরের তারিখ ১৩ই জুন। এভাবে তারিখ পিছোলে বিচার কবে পাব?’’

Advertisement

মক্কেলদের সঙ্গে আইনজীবীদের একাংশও অবশ্য কর্মবিরতিতে খুশি নন। কাটোয়া আদালতের কয়েকজন আইনজীবি জানান, প্রতি বছরই কর্মবিরতি হয়। এতে আখেরে কিছুই লাভ হয় না। শুধু বিচারপ্রার্থীদের তারিখই পিছিয়ে যায়। গত বছরও প্রথমে সাত দিন পরে তা বাড়িয়ে ১২ দিনের কর্মবিরতি চলে কাটোয়া আদালতে। প্রতি বছর গরমেই এমন কর্মবিরতি ডাকা হয় বলেও আইনজীবীদের একাংশের মত। যদিও বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৌমেন সরকারের কথায়, ‘‘আদালত চত্বরে মক্কেল ও তার পরিবারের মানুষদের বসার জায়গা কম। পরিকাঠামোগত অসুবিধা, পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব ও পানীয় জলের অসুবিধাও রয়েছে। সে জন্যই কর্মবিরতি ডাকা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন