আলু কেনা শুরু, পরিমাণ নিয়ে ক্ষুব্ধ চাষিরা

সহায়ক মূল্য ঘোষণার পরেও সরকারের তরফে আলু কিনতে দেরি, হিমঘরে ঠাঁই না পাওয়া নিয়ে চাষিদের ক্ষোভ বাড়ছিল। মহাজনের দেনা শোধ করতে না পেরে আত্মঘাতী হওয়ার খবরও মিলছিল। অবশেষে নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার স্বল্প হলেও আলু কেনা শুরু হল জেলার বিভিন্ন ব্লকে।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০১:৫০
Share:

কালনা ব্লক অফিসে সিপিএমের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

সহায়ক মূল্য ঘোষণার পরেও সরকারের তরফে আলু কিনতে দেরি, হিমঘরে ঠাঁই না পাওয়া নিয়ে চাষিদের ক্ষোভ বাড়ছিল। মহাজনের দেনা শোধ করতে না পেরে আত্মঘাতী হওয়ার খবরও মিলছিল। অবশেষে নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার স্বল্প হলেও আলু কেনা শুরু হল জেলার বিভিন্ন ব্লকে। আজ, বুধবার থেকে তা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে পাঠানোরও কথা। যদিও বহু পঞ্চায়েত প্রধানেরই দাবি, সরকারের তরফে যতখানি আলু কেনার কথা বলা হয়েছে তা অত্যন্ত কম হওয়ায় চাষিদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।

Advertisement

সোমবারই রান্না করে খাবার দেওয়া হয় এমন স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির তালিকা তৈরি করে ফেলে প্রশাসন। তাতে দেখা যায়, মিড-ডে মিল খায় এমন ছাত্রের সংখ্যা ৬ লক্ষ ২১ হাজার ১৩। এছাড়া গর্ভবতী মা ও শিশু রয়েছে আরও ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৮৬। দেখা যায়, হবে। মাথা পিছু এক কেজি করে বরাদ্দ ধরলে তাঁদের সপ্তাহে প্রায় ৭০৯ মেট্রিক টন আলু প্রয়োজন। সেই মতো সরকারি নির্ধারিত কেজি প্রতি সাড়ে পাঁচ টাকা দরে ওই আলু কেনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এতে খরচ হবে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। যে ব্লকগুলিতে আলু চাষ বেশি হয় সেখানকার বিডিওদের সক্রিয় হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিডিওরা পঞ্চায়েত প্রধানদের ডেকে জানিয়ে দেন কোন এলাকা কত পরিমাণ আলু পাবে। কালনা ১ ব্লক সূত্রে খবর, তারা ১ হাজার বস্তা আলু কেনার নির্দেশ পেয়েছে। এই ব্লকের অর্ন্তগত পঞ্চায়েতগুলি চাহিদা অনুযায়ী কেউ ২০০ বস্তা, আবার কেউ ১০০ বস্তা আলু পাবে। মৌখিক নির্দেশে বলে দেওয়া হয়েছে, এক জন প্রান্তিক চাষির থেকে সর্বোচ্চ ১০ বস্তা আলু কেনা যাবে। জেলার এক বিডিও বলেন, “যে স্কুল অঙ্গনওয়ারী কেন্দ্র ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে আলু পৌঁছে দিতে হবে তার তালিকা ই-মেল করে পঞ্চায়েতগুলিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” মঙ্গলবার কালনা মহকুমার কয়েকটি এলাকায় সামান্য হলেও চাষিদের থেকে আলু কিনেছে পঞ্চায়েত। বুধবার থেকে পুরোদমে আলু বিক্রি শুরু হওয়ার কথা। যাঁদের থেকে আলু কেনা হল তাঁদের নাম ভোটার লিস্ট মিলিয়ে পাঠানো হবে বিডিও দফতরে। সেখান থেকেই পরে আলু বিক্রির টাকা মিলবে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পঞ্চায়েত প্রধানদের ক্ষোভ, এত কম পরিমাণ আলু কিনলে চাষিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। কালনার এক পঞ্চায়েত প্রধানের কটাক্ষ, “যে পরিমাণ আলু কেনার নির্দেশ পাওয়া গিয়েছে সেটা যেন সমুদ্র থেকে এক ঘটি জল তোলা।” যদিও জেলা প্রশাসনের আশ্বাস, পরবর্তী সময়ে চাষিদের থেকে আরও আলু কেনা হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু কেনার দাবিতে বুধবার কালনা ১ ও ২ ব্লকে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিপিএম।

Advertisement


হিমঘরে আলু রাখতে লম্বা লাইন। ২ নম্বর জাতীয় সড়কের
উপর বর্ধমানের লাকুর্ডির কাছে তোলা নিজস্ব চিত্র।

এ বার ২ মার্চ থেকে জেলার হিমঘরগুলি খুলে গিয়েছে। চাষিরা জানান, এই মরসুমে জমি থেকে আলু তোলার পরেই অভাবী বিক্রী শুরু হয়। যত সময় বাড়ে আলুর দর ক্রমশ নীচে নামতে থাকে। ফলে হিমঘরে আলু রাখা ছাড়া চাষিদের কাছে কোনও রাস্তা ছিল না। হিমঘরগুলিতে তীব্র চাপ তৈরি হয়। প্রশাসনের চাপেই জেলার বহু হিমঘর নির্ধারিত কোটার থেকে ৫ শতাংশ বেশি আলু নেয়। এরপরেও জেলার কালনা, মেমারি-সহ বেশ কিছু এলাকায় বহু আলু রয়ে যায়। চাষিরা এই সমস্ত আলু রাখার জন্য কয়েকটি হিমঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। এরপর চাষিদের পড়ে থাকা আলু হিমঘরে রাখার জন্য উদ্যোগী হয় জেলা প্রশাসন। কালনা এবং মেমারি এলাকায় বন্ধ থাকা দুটি হিমঘর খোলার চেষ্টা হয়। রবিবার সন্ধ্যায় কালনা ২ ব্লকে আনুখাল এলাকায় একটি হিমঘরের দরজা চাষিদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কালনা ১ এবং ২ ব্লকে মাঠে পড়ে থাকা আলু ওই হিমঘরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাষিরা জানান, ঠিকঠাক চললে আগামী তিন চার দিনের মধ্যে এই হিমঘরে এলাকার বেশির ভাগ আলুই ঢুকে যাবে। ফলে সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।

কালনার এক আলু চাষি আকবর শেখের দাবি, বেশির ভাগ চাষি হয় মহাজনের কাছে আলু দিয়ে দিয়েছে। না হলে কষ্ট করেও হিমঘরে রেখে এসেছে। ফলে সরকারি দরে আলু কেনা হলে তারা কোনও সুবিধা পাবে না। অন্য চাষি রমেশ ঘোষের অভিযোগ, “জেলায় যা আলু চাষ হয় তার অত্যন্ত সামান্য পরিমাণ আলু সরকারি দরে কেনার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। দেরি করে আলু কিনতে নামা আসলে একটা কৌশল। আলু বেচতে গিয়ে চাষিদের মধ্যে যাতে ক্ষোভ তৈরি না হয় তার জন্যই দেরিতে শুরু করছে আলু কেনা।”

যদিও চাষিদের একাংশের এই অভিযোগ মানতে নারাজ প্রশাসন। কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “মঙ্গলবার কালনার ৫টি ব্লক থেকে আলু কেনা হয়েছে। বুধবার গতি আরও বাড়ানো হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন