তেরো বছর চলার পরে সঙ্কটের মুখে কাঁকসার বনকাটির ডাঙালে একলব্য স্কুলের ‘ফিডার স্কুল’টি। আদিবাসী আবাসিক প্রাথমিক এই স্কুলে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সমস্যায় দুঃস্থ আদিবাসী পরিবারের পড়ুয়ারা।
সরকারি খরচে আদিবাসীদের শিক্ষার সুযোগ করে দিতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ২০০২ সালে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় একলব্য স্কুল গড়ে ওঠে। তারই একটি চালু হয় কাঁকসার রঘুনাথপুরে। আদিবাসী পড়ুয়াদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। ইংরেজি মাধ্যমে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা পড়ানো হয়। প্রতি বছর মাধ্যমিকে ভাল ফল করে স্কুলটি। সাধারণ স্কুল থেকে এসে আদিবাসী পড়ুয়াদের এমন এক স্কুলে মানিয়ে নিতে যাতে অসুবিধায় না পড়তে হয় সে জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পেই ‘ফিডার স্কুল’ গড়া হয়। ২০০৪ সালে কাঁকসার ডাঙালে এমন একটি স্কুল গড়ে ওঠে। নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়়ানোর ব্যবস্থা সেখানে। প্রথমে আবাসিক এই স্কুলে প্রত্যেক শ্রেণিতে ৩৫টি করে আসন ছিল। পরে পড়ুয়াদের ভাল ফল ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চেষ্টায় ১০টি করে আসন বাড়ে।
রঘুনাথপুরের একলব্য স্কুলে প্রতি শ্রেণিতে ৬০টি করে আসন রয়েছে। তার মধ্যে ফিডার স্কুল থেকে আসে ৪৫ জন পড়ুয়া। স্কুল সূত্রে জানা যায়, ফিডার স্কুল চালুর পরে গোড়ার দিকে আসা পড়ুয়ারা একলব্য স্কুলে পড়াশোনার পরে এখন কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং, কেউ পলিটেকনিক পড়ছে। অঙ্ক বা ইংরেজির মতো নানা বিষয় নিয়ে কলেজে পড়াশোনা করছে অনেকে। কিন্তু স্কুলটি নিয়ে এখন সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সালে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর থেকে নার্সারি বিভাগ বন্ধের নির্দেশ আসে। পরের বছর থেকে নার্সারি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালে নির্দেশ আসে, ২০১৭ থেকে প্রথম শ্রেণিতে আর ভর্তি নেওয়া যাবে না। পঞ্চম, চতুর্থ, তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা উত্তীর্ণ হয়ে গেলে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে স্কুলটি। একলব্য স্কুলে ভর্তি নেওয়া হবে প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে। তাই ফিডার স্কুলের আর দরকার নেই।
এমন নির্দেশে হতাশ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁরা বলেন, ‘‘ আমরা মাসে বেতন পাই মাত্র ৫-৬ হাজার টাকা, যা সাধারণ স্কুলের শিক্ষকদের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু দুঃস্থ পড়ুয়াদের কথা ভেবে মনের আনন্দে পড়াই। অথচ, সেটাই কেড়ে নেওয়া হবে এ বার।’’ প্রধান শিক্ষিকা সুস্মিতা পাঠক বলেন, ‘‘কত সমস্যা পেরিয়ে আমরা স্কুলটিকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছি। শীতে দিনে তিন বার করে ক্লাস হয়। আর গ্রীষ্মে দু’বার। স্কুল বন্ধ হলে এলাকার দুঃস্থ আদিবাসী পড়ুয়ারা বিপাকে পড়বে।’’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। কেন্দ্রে নতুন সরকার আসার পরে গ্রামীণ প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আমি নিজে এবং রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রের কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।’’