Dengue

গ্রামে ডেঙ্গি রোধে অস্ত্র শুধু প্রচার

যার চেয়ারম্যান পঞ্চায়েত সদস্য। এই কমিটিকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। সেই টাকাও ঠিকমতো ব্যবহার হলে মশার উপদ্রব এই চেহারা নেয় না।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৭
Share:

নেই-ব্যবস্থা: কালনার উত্তর গোয়ারায় বাড়ির সামনে জমে জল। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ এসেছে প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে। ডেঙ্গি রোধে তাই রাস্তায় নেমে পড়েছে পঞ্চায়েতগুলি। কিন্তু সচেতনতার প্রচারেই আটকে রয়েছে যাবতীয় কর্মকাণ্ড। সাফাইকর্মী নেই, মশা মারার ওষুধ স্প্রে করার যন্ত্র নেই— ডেঙ্গি রুখতে ব্যবস্থা কী ভাবে হবে, প্রশ্ন তুলছেন নানা পঞ্চায়েতের কর্তা-কর্মীরাই। গ্রামীণ এলাকায় এর ফলে পরিস্থিতি কেমন, গলসির বালিকা সমাপ্তি মেটের মৃত্যুই তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বার পূর্ব বর্ধমানের বেশ কয়েকটি ব্লকেই জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। মশার উপদ্রবে নাজেহাল হচ্ছেন, অভিযোগ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদেরই। বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধানেরা জানান, সংস্কার না হওয়া পুকুর, ধান সিদ্ধ করার পাত্র-সহ নানা জায়গায় জল জমে থাকে। চাষের জমির জমা জলেও মশা বংশবিস্তার করে। বাসিন্দাদের এ সব ব্যাপারে সতর্ক করতে সচেতনতা প্রচার করা হয়েছে।

বছর পঁচিশ আগেও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে গ্রামে মশা নিধনের স্প্রে করা হতো। এখন আর তা দেখা যায় না। মেমারির সাতগাছিয়ার বাসিন্দা রণদেব ঘোষ বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ-সহ নানা প্রকল্পের অর্থে গ্রামাঞ্চলে পাকা নর্দমা তৈরি হয়েছে। সেগুলিতে প্লাস্টিক, শুকনো পাতা-সহ নানা জিনিস জমে যাওয়ায় নিকাশি ব্যবস্থাই শুধু ব্যাহত হচ্ছে না, মশারও উৎপাত বাড়ছে।’’ বাসিন্দাদের দাবি, একশো দিনের প্রকল্পে বনজঙ্গল, পুকুরের পানা পরিষ্কারের কাজ হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

Advertisement

মশাবাহিত রোগ নিয়ে যে সচেতনেতার অভাব রয়েছে, মাস দেড়েক আগে পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুরে গিয়ে তা টের পায় স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল। তারা এলাকায় ডেঙ্গি পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে দেখে, ভিজে ন্যাতা, পুজোর ঘট, গাছের কোঠরে মশার লার্ভা রয়েছে।

অথচ অর্থ কমিশন, রাজ্যের অনুদান, নানা প্রকল্পে একটি পঞ্চায়েত প্রতি বছর দু’কোটি টাকারও বেশি টাকা খরচ করে। অথচ, জেলার কোনও পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েতের কাছে নেই মশা মারার কামান। এক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কথায়, ‘‘অর্থ কমিশনের টাকা রাস্তা, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যবহার করতে বলা হয়। অথচ, বেশির ভাগ পঞ্চায়েত অগ্রাধিকার দেয় রাস্তা তৈরিতে। স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়টি অবহেলিতই থাকে।’’ তাঁর দাবি, প্রতিটি বুথে গ্রামীণ স্বাস্থ্যরক্ষা বিষয়ক একটি কমিটি রয়েছে। যার চেয়ারম্যান পঞ্চায়েত সদস্য। এই কমিটিকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। সেই টাকাও ঠিকমতো ব্যবহার হলে মশার উপদ্রব এই চেহারা নেয় না।

বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সম্পাদক তথা পূর্বস্থলীর বাসিন্দা রাজীব ভৌমিকের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে নর্দমা পরিষ্কারের জন্য সাফাইকর্মী নিয়োগ, মশা মারার কামান কেনা, নিয়মিত ব্লিচিং ছড়ানোর কথা জেলা প্রশাসন ভাবেইনি। তারই ফল ভুগতে হচ্ছে।’’ জেলা পরিষদ সভাধিপতি দেবু টুডু অবশ্য বলেন, ‘‘প্রতিটি পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এলাকা পরিষ্কার, স্প্রে করা-সহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে। তারা সেই কাজ করছে। নির্দিষ্ট সাফাইকর্মী না থাকলেও এই কাজ অনায়াসে একশো দিনের প্রকল্পে করা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন