CPM

‘নির্মল জেলা’য় হয়নি ৩৮ হাজার শৌচাগার!

অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) কস্তুরী বিশ্বাস জানান, ‘নির্মল বাংলা’ প্রকল্পের অগ্রগতি বিশ্লেষণের সময়ে দেখা গিয়েছে, এখনও প্রায় ৩৮ হাজার বাড়িতে শৌচাগার তৈরির বিষয়ে পদক্ষেপ করা হয়নি।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০০:৫৩
Share:

এমনই অবস্থা শৌচাগারের।—নিজস্ব চিত্র।

স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৭-য় পশ্চিম বর্ধমানকে ‘নির্মল জেলা’ঘোষণা করেন। কিন্তু সে জেলায় এখনও ৩৮ হাজার বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হয়নি, প্রশাসনেরই অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে!

Advertisement

অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) কস্তুরী বিশ্বাস জানান, ‘নির্মল বাংলা’ প্রকল্পের অগ্রগতি বিশ্লেষণের সময়ে দেখা গিয়েছে, এখনও প্রায় ৩৮ হাজার বাড়িতে শৌচাগার তৈরির বিষয়ে পদক্ষেপ করা হয়নি। তাঁর কথায়, “এই পরিস্থিতিতে জেলাকে পুরোপরি নির্মল জেলা বলা চলে না।”

এ তথ্য সামনে আসতেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমি অবাক হচ্ছি, জেলায় এতগুলি শৌচাগার করা বাকি আছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে অবস্থার যাতে উন্নতি হয়, সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর টিপ্পনী, “বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে সরকার যে পুরোপুরি ব্যর্থ, তা এই তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের অভিযোগ, “প্রকল্প নিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে ব্যস্ত সরকার। তাই কাজ করার সময় পায় না।” যদিও তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান ভি শিবদাসন বলেন, “বিরোধীদের কাজই সমালোচনা করা। সরকার লক্ষ্য স্থির রেখে কাজ করছে।”

কিন্তু ২০১৭-য় ‘নির্মল জেলা’র শিরোপা পাওয়ার পরেও কেন এই হাল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের অন্দরেই। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কোন ব্লকে কতগুলি শৌচাগার তৈরি করতে হবে, সে বিষয়ে ব্লক প্রশাসন জেলায় রিপোর্ট দেয়। প্রশাসনের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, নিজেদেরই ঠিক করা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি ব্লকগুলি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গত আর্থিকবর্ষে শৌচাগার নির্মাণের ক্ষেত্রে জেলার আটটি ব্লক একত্রিত ভাবে এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৮ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক কস্তুরীদেবী বলেন, “শৌচাগার নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ হাল বারাবনি ব্লকের পানুড়িয়া ও নুনি, জামুড়িয়া ব্লকের হিজলগড়া পঞ্চায়েত এলাকার। এই তিন এলাকায় একটিও শৌচাগার নির্মাণ হয়নি। অণ্ডাল ব্লকের অবস্থাও সন্তোষজনক নয়।” তবেতাঁর ব্লকের দুই পঞ্চায়েতের কেন এই হাল, জানতে চাওয়া হলে বিডিও (বারাবনি) সুরজিৎ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “কারণ খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করছি।”

এই পরিস্থিতির জন্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা—প্রথমত, শৌচাগার বানানোর খরচ দেবে সরকার। কিন্তু জমি দেবেন বাড়ির মালিক। বহু পঞ্চায়েতে বাড়ির মালিকেরা জমি দিতে চাইছেন না। দ্বিতীয়ত, শৌচাগার বানিয়ে দেওয়া হলেও শৌচাগারের দরজা বানানোর খরচ দিতে হবে উপভোক্তাদের। কিন্তু উপভোক্তারা দরজার খরচ দিতে চাইছেন না। তৃতীয়ত, শৌচাগার তৈরির দরপত্র ডাকার পরেও, বহু পঞ্চায়েতের ঠিকাদারেরা শৌচাগার বানাতে চাইছেন না।

যে পঞ্চায়েতগুলিতে এই কাজ হয়নি, সেই সব এলাকার বাসিন্দা মদন কিস্কু, বিজু বাউড়িরা বলেন, “এক চিলতে বাড়িতে জমি, ফলে শৌচাগারের জন্য জমি দেওয়াটা কঠিন। শৌচাগারের দরজা বানানোর টাকা এই মুহূর্তে আমাদের নেই।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই ব্যাখ্যাগুলি জানার পরে জেলাশাসক ব্লক আধিকারিকদের পঞ্চায়েত ধরে-ধরে কারণ উল্লেখ করে তালিকা বানিয়ে তাঁর দফতরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুভদ্রা বাউড়ির আশ্বাস, “শৌচাগার নির্মাণের প্রশ্নে পঞ্চায়েত প্রধানদেরও বাড়ি-বাড়ি ঘুরে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন