কী ভাবে মৃত্যু বাপির, উত্তর নেই বহু প্রশ্নের

এমনিতে দাদার সঙ্গে সারা বাড়িতে খেলে বেড়াত মেয়েটা। দু’দিন ধরে সেই মেয়েটাই থম মেরে রয়েছে। দাদা বেঁচে নেই, এই খবর এখনও তার বিশ্বাস হচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪৭
Share:

ছেলে হারিয়ে শোকার্ত পরিবার। ইনসেটে, বাপি দাস। নিজস্ব চিত্র।

এমনিতে দাদার সঙ্গে সারা বাড়িতে খেলে বেড়াত মেয়েটা। দু’দিন ধরে সেই মেয়েটাই থম মেরে রয়েছে। দাদা বেঁচে নেই, এই খবর এখনও তার বিশ্বাস হচ্ছে না।

Advertisement

মামাবাড়িতে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান থেকে পরিচিতি এক জনের গাড়িতে মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে বছর বারোর সেই কিশোর বাপি দাসের মৃত্যু রেখে গিয়েছে নানা প্রশ্ন। সন্তানের মৃত্যুর কারণ প্রসঙ্গে তার বাবা-মা যে যে দাবি করেছেন, তা নিয়েও অনেক ধোঁয়াশা দেখছেন গ্রামবাসীরা এবং পুলিশ। পরিবারের দাবি, ফেরার পথে কিছু ব্যক্তি তাঁদের গাড়িতে হামলা চালায়। তাতেই আঘাত লেগে বাপির মৃত্যু হয়। অথচ ঘটনার এত ক্ষণ পরেও পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করেনি কাটোয়ার আমূল গ্রামের ওই পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে ভাইফোঁটায় সপরিবার শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন সিঙ্গি পঞ্চায়েতের আমূল গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় দাস। বাসে কুসুমগ্রাম পর্যন্ত যাওয়ার পরে তাঁদের দেখা হয়ে যায় পাশের গ্রামের আতর শাহের সঙ্গে। তিনি গাড়ি নিয়ে ওই পথেই যাচ্ছিলেন। সঞ্জয়বাবুর দাবি, আতরের জোরাজুরিতে বাস থেকে নেমে তাঁর গাড়িতে চড়েই শ্বশুরবাড়ি কামড়া গ্রামে যান তাঁরা। ভাইফোঁটা মিটে যাওয়ার পরে ওই গাড়িতেই আত্মীয়দের নিয়ে মন্তেশ্বরে কালীপুজো দেখতে যান। সঞ্জয়বাবুর কথায়, ‘‘আতর নিয়ে যাবে বলায় আমরা আপত্তি করিনি। তবে ভেবেছিলাম কামড়াতেই থেকে যাব রাতে। কিন্তু আতর জোর দিয়ে রাতেই আমূল ফেরার কথা বলে। আমরাও ওর সঙ্গেই রওনা দিই।’’

Advertisement

তাঁদের অভিযোগ, মালডাঙা-মন্তেশ্বর রাস্তায় দাস্তিপাড়ার কাছে জনা চারেক ব্যক্তি গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করে। তবে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যান তাঁরা। এর পরে আতর গাড়ির আলো নিভিয়ে গাড়ি চালাতে থাকেন। সঞ্জয়বাবুর অভিযোগ, কুঁয়ারা গ্রামের কাছে আবারও হামলা হয় গাড়িতে। এক দল দুষ্কৃতী গাড়ি আটকে ভাঙচুর শুরু করে। তাঁর স্ত্রী আশাদেবীর দাবি, ‘‘ছেলে আমার উল্টো দিকের সিটে শুয়েছিল। আর এক দিকে আমি মেয়েকে নিয়ে বসেছিলাম। হঠাৎ শাবল, ইট দিয়ে গাড়ির জানলায় কোপ মারতে শুরু করে হামলাকারীরা। ছেলে আমার কোলে পড়ে যেতেই দেখি শাড়ি রক্তে ভিজে গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, আতর কোনও রকমে ওই এলাকা পেরিয়ে হাঁপানিয়া মোড়ে পৌঁছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে চিকিৎসকের খোঁজ শুরু করেন। চিকিৎসক না মেলায় জখম বাপি ও তার পরিবারকে আমূলে নামিয়ে দেন।

আমূলের বাসিন্দাদের আবার দাবি, লোকজন জড়ো হতে শুরু করলে চালক ভয়ে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেন। ততক্ষণে বাপির দেহে আর প্রাণ নেই। পরে পুলিশ গিয়ে বাপির দেহ কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি ওই কিশোরের পরিবার। পুলিশের দাবি, সঞ্জয়বাবুকে বারবার বলা সত্ত্বেও উনি অভিযোগ জানাতে রাজি হননি। কিন্তু কেন হামলা হল আতরের গাড়িতে? সঞ্জয়বাবু ও আশাদেবীর দাবি, বৃহস্পতিবার সকালে কুলুট গ্রামে অন্য যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় কুঁয়ারায় আতরের গাড়ি এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দেয়। ওই এলাকার বাসিন্দারা তারই শোধ নিতে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরাই ফিরতি পথে হামলা করেন। কিন্তু রাতে ওই পথ ধরেই যে গাড়িটি ফিরবে, সে খবর হামলাকারীদের কাছে গেল কী ভাবে, চালকই বা কেন ওই পথে ফিরলেন— এ সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

যেমন কাটেনি ঘটনা ঘিরে আরও কিছু ধন্দ। সঞ্জয়বাবুর দাবি, হামলায় গাড়ির কাচ ভেঙে গিয়েছে। যদিও পুলিশ তা মানতে চায়নি। কাটোয়া হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটির মাথার পিছন দিকে চোট লেগে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলেই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, গাড়ির বন্ধ দরজা দিয়ে গাড়ির সিটে শুয়ে থাকা ছেলেটির মাথায় আঘাত লাগল কী ভাবে, সে প্রশ্নেরও সদুত্তর মেলেনি।

আঘাত কিসে, কীভাবে লাগল, তার জানাতে পারেননি বাপির বাবা-মা। ওই গাড়ির চালক আতরের সম্পর্কেও কোনও তথ্য দিতে চাননি দাস দম্পতি। থানায় অভিযোগ না করার পিছনে সঞ্জয়বাবুর দাবি, ‘‘ছেলে তো চলেই গেল। আর এ সব নিয়ে টানাটানি করে কী লাভ!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement